X
সোমবার, ২০ মে ২০২৪
৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

১০ কি.মি. সড়ক ভাঙা, যোগাযোগে বেহাল দশা মোংলা বন্দরের

খুলনা প্রতিনিধি
২৯ জুলাই ২০২০, ১৮:৪৭আপডেট : ২৯ জুলাই ২০২০, ১৮:৫৫

ভাঙনে বেহাল দশা খুলনা-মোংলা মহাসড়কের

আধুনিকায়ন চলছে মোংলা বন্দরে। বন্দরের নাব্য ফিরিয়ে আনতে সরকারিভাবে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। তবে এই বন্দরে আসা পণ্যবাহী কার্গো এবং পাশে গড়ে ওঠা রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকার (ইপিজেড) উৎপাদিত পণ্য পরিবহনে সড়ক পথে খুলনার সঙ্গে যে মহাসড়কটি যুক্ত সেটির মোংলা বন্দর প্রান্তের ১০ কিলোমিটার অংশের এখন একেবারেই বেহাল দশা।

খুলনা থেকে মোংলাবন্দরের দূরত্ব সাড়ে ৩০ কিলোমিটার, এরমধ্যে মোংলা বন্দরের সামনে থেকে রামপাল উপজেলার বেলাই ব্রিজ পর্যন্ত সড়কের এই বেহালদশা। বিশেষ করে মোংলা বাসস্ট্যান্ড থেকে বন্দরের সামনে দিয়ে দ্বীগরাজ হয়ে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত এ ১০ কিলোমিটার খানাখন্দে ভরা। এই সামান্য পথ অতিক্রম করতে এখন ৩৫ মিনিট সময় লাগছে। বিপর্যস্ত হতে হচ্ছে সব ধরনের যানবাহন ও যাত্রীকে। বাধ্য হয়েই এ সড়কে ঝুঁকি নিয়ে চলছে পণ্যবাহী ট্রাক, যাত্রীবাহী বাস, মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাসসহ বন্দর ও মোংলা ইপিজেডের কোম্পানিগুলোর যানবাহন।

দেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মোংলায় আমদানি-রফতানি পণ্যসহ স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠা উৎপাদনমুখী ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর স্থলপথে পণ্য পরিবহন ও যাতায়াতের একমাত্র পথ এই মোংলা-খুলনা মহাসড়ক।   গুরুত্বপূর্ণ এ মহাসড়কের বন্দর বাসস্ট্যান্ড থেকে দিগরাজ পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার সড়ক মোংলা কর্তৃপক্ষ দেখভাল করে। আর বাকি পাঁচ কিলোমিটার পথ জেলা সড়ক ও জনপদ বিভাগের অধীনে। তাই এ দুটি সংস্থার সমন্বয়হীনতার কারণে যাতায়াতকারী যানবাহন ও সাধারণ পথচারীদের দুর্ভোগের শেষ নেই।

সরেজমিন দেখা যায়, মোংলা বাসস্ট্যান্ড থেকে দিগরাজ এবং রামপালের অংশে সড়কের অধিকাংশ এলাকা ভাঙাচোরা আর গর্তে ভরা। কোনও কোনও স্থানে দেবে উঁচু-নিচু হয়ে আছে। একটু বৃষ্টি হলেই গর্তে পানি জমে কাদা হয়ে যায়। মোংলা বন্দরের পণ্য নিয়ে প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল করছে। এ ১০ কিলোমিটার জুড়েই এখন খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। বৃষ্টির পানি জমে বাস ট্রাকের চাকার আঘাতে তা আরও বড় হয়ে উঠছে। ফলে নানা দুর্ভোগে পড়ছে যাত্রী ও পণ্যবাহী বাস ট্রাকসহ সব ধরনের যানবাহন। পথচারীরাও এ দুর্ভোগ থেকে রেহাই পাচ্ছে না।

খুলনা-মোংলা মহাসড়কটির বন্দর সংলগ্ন ১০ কিলোমিটার সড়কে চলাচল করতে গিয়ে দুর্ভোগে পড়েন সব শ্রেণি-পেশার মানুষ।

যাত্রীবাহী বাসের চালক আব্দুর রহিম বলেন, এক ট্রিপের পর আর গাড়ি চালানো যায় না। সড়কটির এতটা খারাপ অবস্থা যে একটু এদিক থেকে ওদিক হলেই যানবাহন দুর্ঘটনায় পড়ছে। ১০ কিলোমিটার পথ চলতে গিয়েই যাত্রীরা হাঁফিয়ে ওঠেন।

মোংলার স্থানীয় বাসিন্দা ইপিজেডের কর্মী আজমল হোসেন বলেন, ৬ মাস আগে এ সড়কটিতে কাজ করা হয়েছে। কিন্তু ৬ মাসের মধ্যেই সেই সড়কটি ভাঙাচোরা সড়কে পরিণত হয়েছে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে সড়কের চেয়ে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর জমি অনেক উঁচু। এর ফলে বৃষ্টি হলেই শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে পানি নেমে এসে সড়কে জমে থাকে। আর যাতায়াত অব্যাহত থাকার কারণে পানি ভেঙে সড়ক দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল করে। এ অবস্থায় সড়কে গর্ত সৃষ্টি হয়ে বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে।

সড়কে চলাচলকারী গাড়ি চালক মো. মহিদুল বলেন, একটু বৃষ্টি হলেই সড়কে পানি জমে যায়। ভারী যানবাহন চলাচল করায় সড়কের সংস্কার কাজ বেশিদিন টেকে না। এতে নানা ভোগান্তির পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে গাড়ি চাকা ও যন্ত্রাংশ।

যানবাহনের চালক মো. আলামিন জানান, নিয়মিত মেরামত কাজ চললেও ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে ফের ভেঙে যায়।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আজিম কাওসার বলেন, সড়কটি ২২ ফুট চওড়া ও সরু থাকায় এক লেনে গাড়ি চলাচল করে। এ কারণে রাস্তাটির ওপর খুব চাপ পড়ছে। বর্ষার কারণে বিটুমিনের কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই সোলিং এইচবিবি’র কাজ (ইটের সোলিং) চলছে।

বাগেরহাট সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, খুলনা-মোংলা মহাসড়কের দৈর্ঘ্য ৩০ দশমিক ৫৫০ কিলোমিটার। এর মধ্যে বেলাই ব্রিজ থেকে দিগরাজ বাজার পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে বিটুমিন দিয়ে সংস্কার করা সম্ভব না। সড়ক বিভাগ  প্রতিনিয়ত সোলিং এইচবিবি করে। নিয়মিত এ কাজ করে যাচ্ছে সড়ক বিভাগ। এর ফলে যাতায়াত সচল রয়েছে। তিনি বলেন, মহাসড়কটির মোংলা অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে ওভারলোড।

এছাড়া ১৯৮৪ সালে সড়কটি নির্মাণ কাজ হওয়ার পর থেকে পুনঃনির্মাণ এবং প্রশস্তকরণ করা হয়নি। বর্তমানে সড়কটিতে যানবাহন চলাচলের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। আগামী ডিসেম্বর মাসে রুটিন মেইন্টেনেন্সের আওতায় সড়ক বিভাগ কাজ করবে। এছাড়া চলমান সমস্যার স্থায়ী সমাধানে রাস্তাটি ৬ লেনে উন্নীত করতে একটি প্রস্তাবনা তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (প্রশাসন) মো. গিয়াস উদ্দিন জানান, বন্দর এলাকার আওতাধীন বাসস্ট্যান্ড থেকে দিগরাজ পর্যন্ত মহাসড়কের ৫ কিলোমিটার সড়ক দেখভাল কর্তৃপক্ষ করে থাকে। বন্দর এলাকায় গড়ে ওঠা ভারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের পণ্য পরিবহনের জন্য সড়কের ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত পণ্যবাহী ট্রাক ও যানবাহন চলাচল করায় সড়কটি সংস্কার করলেও দুর্ভোগ লাগব হচ্ছে না। এছাড়া পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় বর্ষা মৌসুমে পানি জমে সড়কে খানাখন্দ তৈরি হচ্ছে। সড়কের এ ভগ্নদশা থেকে উত্তরণে ইতোমধ্যে বন্দর কর্তৃপক্ষের সার্ভে করাসহ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। চলমান সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য ৬ লেনে উন্নীত করারও পরিকল্পনা রয়েছে।

/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্তে অনিশ্চয়তা ছড়াচ্ছে ইরানে
রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্তে অনিশ্চয়তা ছড়াচ্ছে ইরানে
বার্সার রানার্সআপ হওয়ার দিনে ধাক্কা খেলো রিয়াল 
বার্সার রানার্সআপ হওয়ার দিনে ধাক্কা খেলো রিয়াল 
রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত: মধ্যপ্রাচ্যসহ আঞ্চলিক নেতাদের প্রতিক্রিয়া
রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত: মধ্যপ্রাচ্যসহ আঞ্চলিক নেতাদের প্রতিক্রিয়া
যদি প্রেসিডেন্ট রাইসি না ফেরেন, কী হবে ইরানে
যদি প্রেসিডেন্ট রাইসি না ফেরেন, কী হবে ইরানে
সর্বাধিক পঠিত
শনিবার ক্লাস চলবে ডাবল শিফটের স্কুলে
শনিবার ক্লাস চলবে ডাবল শিফটের স্কুলে
ভারতীয় পেঁয়াজে রফতানি মূল্য নির্ধারণ, বিপাকে আমদানিকারকরা
ভারতীয় পেঁয়াজে রফতানি মূল্য নির্ধারণ, বিপাকে আমদানিকারকরা
হিমায়িত মাংস আমদানিতে নীতিমালা হচ্ছে
হিমায়িত মাংস আমদানিতে নীতিমালা হচ্ছে
এনবিআর চেয়ারম্যানকে আদালত অবমাননার নোটিশ
এনবিআর চেয়ারম্যানকে আদালত অবমাননার নোটিশ
আগামী ৩ দিন হতে পারে বৃষ্টি, কমবে তাপপ্রবাহ
আগামী ৩ দিন হতে পারে বৃষ্টি, কমবে তাপপ্রবাহ