X
রবিবার, ১৯ মে ২০২৪
৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ ছাত্রকে হত্যা: আ.লীগ নেতাকর্মীসহ ২৬ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট

দিনাজপুর প্রতিনিধি
২৯ জুলাই ২০২০, ১৯:৩২আপডেট : ২৯ জুলাই ২০২০, ১৯:৩৬

হাবিপ্রবি দিনাজপুুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জোড়া খুন (দুই ছাত্রকে হত্যা) মামলায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ ২৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। বুধবার (২৯ জুলাই) দিনাজপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতের-১ (সদর)-এ চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সিআইডির ওসি রমজান আলী।

চার্জশিট দাখিলের বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি বলেন, আদালতে ২৬ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত আদালত চার্জশিট গ্রহণ করেনি। দিনাজপুর আদালত পুলিশ পরিদর্শক ইসরাইল হোসেন চার্জশিটের কপি হাতে পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

চার্জশিটে বলা হয়, ছাত্রলীগের তৎকালীন কমিটির সাধারণ সম্পাদক অরুন কান্তি রায় সিটনকে ভর্তি পরীক্ষায় ডিজিটাল কারচুপির অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়। তবে নিয়োগ এবং বিভিন্ন প্রকল্পের আর্থিক বিষয় নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় তৎকালীন ভিসি রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে ছাত্রলীগ। অন্যদিকে ভিসির কাছে সুবিধা নেওয়ার জন্য ছাত্রলীগের পদ বঞ্চিত ও বিভিন্ন মতের বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র স্থানীয় রাজনীতিবিদদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভিসির পক্ষে একটি গ্রুপ তৈরি করে ছাত্রলীগের আন্দোলন দমনে নামে। এক পর্যায় তারা মারধর করে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাড়িয়ে দেয়। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিতাড়িতরা তাদের আধিপত্য পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করে। ঘটনার দিন ১৬ এপ্রিল ২০১৫ তারিখ রাত ৮টার সময় অডিটোরিয়াম-১-এ ভেটেরিনারি অনুষদের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে দুটি মাইক্রোবাস ও কয়েকটি মোটরসাইকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে ঢুকে পড়ে অডিটোরিয়ামে প্রবেশ করে ককটেল বিস্ফোরণ ও এলোপাতারি ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পরে সেখান থেকে ছাত্রলীগের অপর গ্রুপের নেতাকর্মীরা শেখ রাসেল হলে গিয়ে অবস্থান নেয়। হামলাকারীরা চারদিক থেকে শেখ রাসেল হল ঘেরাও করে হামরা চালায়। এক পর্যায়ে তারা শেখ রাসেল হলের কলাপসিবল গেটের তালা ভেঙে আবু ইবনে রজব ও বিশ্বজিৎ ঘোষ কাঞ্চনের নেতৃত্বে বিভিন্ন অস্ত্র নিয়ে এলোপাতাড়ি হামলা চালায়। সেখানে দুই ছাত্র মারা যায়।

সিআইডির দেওয়া চার্জশিটে অর্ন্তভুক্তরা হলেন জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত সভাপতি ও বাহাদুর বাজার এলাকার নুুরুল ইসলাম মানুর ছেলে আবু ইবনে রজব, কোতোয়ালি থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ক্ষেত্রীপাড়া এলাকার সমরেন্দ্রনাথ ঘোষের ছেলে বিশ্বজিৎ ঘোষ কাঞ্চন, স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ফুলবাড়ী উপজেলার উত্তর সুজাপুর এলাকার লুৎফর রহমানের ছেলে জাকারিয়া জাকির, শহরের দক্ষিণ বালুবাড়ী এলাকার মৃত. আলহাজ্ব দলিল উদ্দিনের ছেলে রশিদুল ইসলাম, যুবলীগ নেতা ও জেলা শহরের উপশহর এলাকার মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেনের ছেলে সিরাজুল সালেকিন রানা, স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা ও রামনগর এলাকার মজিবুর রহমানের ছেলে মাহমুদুল হাসান ওরফে সিঙ্গেল, ছাত্রলীগ নেতা ও একই এলাকার জুলফিকার আলী স্বপনের ছেলে হারুনুর রশিদ ওরফে রায়হান, ছাত্রলীগ নেতা মুন্সিপাড়া এলাকার রফিকুল ইসলামের ছেলে রকিবুল ইসলাম মিথুন, যুবলীগ নেতা ও কসবা (পুলহাট) এলাকার হামিদুর রহমানের ছেলে মাহমুদুর রহমান মাসুম, ছাত্রলীগ নেতা ও রামনগর এলাকার নাজির হোসেনের ছেলে নাহিদ আহমেদ নয়ন, ঘাষিপাড়া এলাকার আহসানুাল্লাহের ছেলে মমিনুল ইসলাম, ছাত্রলীগ নেতা ও খানসামা উপজেলার পশ্চিম হাশিমপুর এলাকার মৃত. জমির উদ্দিনের ছেলে রুহুল কুদ্দুস জোহা, সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ থানার মৃত. আব্দুল আজিজের ছেলে আমিনুল ইসলাম, খানসামা উপজেলার গোয়ালডিহি গ্রামের আশরাফুল আলম, ফুলবাড়ি উপজেলার স্বজনপুকুর গ্রামের ড্রাইভার আব্দুল মজিদের ছেলে নাজমুল হাসান ওরফে মামুন, সদর উপজেলার কর্নাই হাজীপাড়া গ্রামের ফজলুর রহমান ওরফে বাইট্টার ছেলে কামরুজ্জামান ওরফে কামু, বড়ইল গ্রামের মৃত. আলাউদ্দিনের ছেলে জুয়েল ইসলাম, উত্তর বালুবাড়ি এলাকার মৃত. রমজান আলীর ছেলে নাছিম আলী, ক্ষেত্রীপাড়া এলাকার মৃত. শরিফুল ইসলাম লালের ছেলে তায়েফ বিন শরীফ, বড়ইল মোল্লাপাড়া এলাকার নজরুল রাজমিস্ত্রীর ছেলে আবু হারেজ ওরফে বুলু, রাজবাড়ি সুখসাগর এলাকার মৃত. ফজির উদ্দিনের ছেলে আজিজার রহমান, দিনাজপুর সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সুইহারি এলাকার সাব্বির আহমেদ সুজন, পুলহাট এলাকার মৃত. সাহাবুদ্দিনের ছেলে আরমান বিশ্বাস, উপশহর এলাকার মৃত. সিরাজুল মনিরের ছেলে আরাফাত হোসেন, কসবা মিশন রোড এলাকার নুর মোহাম্মদের ছেলে শহিদুল ইসলাম ওরফে সাজু এবং কসবা মিশন রোড এলাকার বদরুল ড্রাইভারের ছেলে আবু সাঈদ শেরু।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ১৬ এপ্রিল ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় আহত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র জাকারিয়া শহীদ নুর হোসেন হলে ও কৃষি বিভাগের ছাত্র মাহমুদুল হাসান মিল্টন। পরে দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তারা মারা যান। খুনের ঘটনায় নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে পৃথক দুটি মামলায় ৪১ জনকে আসামি করা হয়। একইসঙ্গে কোতোয়ালি থানার এসআই আব্দুল নুর বাদী হয়ে অজ্ঞাত ৫০/৬০ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। গত বছরের মার্চে মামলাগুলো পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডিতে) স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু দীর্ঘ পাঁচ বছরেও মামলার কোনও কুলকিনারা না হওয়ায় চলতি বছরের জানুয়ারী মাসে দুই নিহত ছাত্রলীগ নেতার জাকারিয়া ও মাহমুদুল হাসান মিল্টনের বাবা-মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ছেলে হারা দুই পরিবারের বাবা-মাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অর্থনৈতিকভাবে সহায়তাসহ সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দেন।

 

/টিটি/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
উত্তরা ইউনিভার্সিটিতে রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিকেশন অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠিত
উত্তরা ইউনিভার্সিটিতে রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিকেশন অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠিত
চট্টগ্রামে লরি চাপায় মৃত্যু বেড়ে তিন
চট্টগ্রামে লরি চাপায় মৃত্যু বেড়ে তিন
রাজধানীতে রিকশাচালকের হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার
রাজধানীতে রিকশাচালকের হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার
স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া, স্বামীর লাশ উদ্ধার
স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া, স্বামীর লাশ উদ্ধার
সর্বাধিক পঠিত
মামুনুল হক ডিবিতে
মামুনুল হক ডিবিতে
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
আমেরিকা যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি
আমেরিকা যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি
নির্মাণের উদ্দেশ্যে ভালো সড়ক কেটে ২ বছর ধরে খাল বানিয়ে রেখেছে
নির্মাণের উদ্দেশ্যে ভালো সড়ক কেটে ২ বছর ধরে খাল বানিয়ে রেখেছে
মোবাইল আনতে ডিবি কার্যালয়ে মামুনুল হক
মোবাইল আনতে ডিবি কার্যালয়ে মামুনুল হক