ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়ের অভিযোগ ওঠার পর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া থানার এস আই মতিউর রহমানকে থানা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাকে আখাউড়া থানা থেকে সরিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান বৃহস্পতিবার (১৩ আগস্ট) বিকালে সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তবে তিনি বলেন, কাউকে ক্লোজড করা হয়নি। এস আই মতিউরকে দায়িত্ব পালনের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আনা হয়েছে। বেলা আড়াইটা নাগাদ আদালতের কোনও কাগজপত্র পাইনি। যে কারণে কোন কোন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তা অফিসিয়ালি বলার সুযোগ নেই। এছাড়া যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তাদের মধ্যে তিন জন অন্যত্র বদলি হয়ে গেছেন। একজন (হুমায়ুন) অসুস্থতার কারণে ছুটিতে আছেন। এ অবস্থায় কাগজপত্র না দেখে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না।
গতকাল বুধবার আখাউড়া পৌর এলাকার মসজিদপাড়ার বাসিন্দা হারুন মিয়া নামে এক ব্যক্তি সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (আখাউড়া) আদালতে ওই পাঁচ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ইন্সপেক্টরের নিচে নয় এমন কাউকে দিয়ে তদন্ত করিয়ে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেন। এর আগে, একই বিষয়ে পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, আখাউড়ার পৌর এলাকার মসজিদপাড়ার বাসিন্দা হারুনের প্রতিবেশী হাসিনা বেগম (চিকুনি বেগম) ও তার মেয়ে তানিয়া এবং তানজিনার সঙ্গে যোগসাজশে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যরা মাদক ব্যবসা করছিল। এতে বাধা দিলে চিকুনি ক্ষুব্ধ হয়ে হারুন মিয়ার পেছনে পুলিশ সদস্যদের লাগিয়ে দেয়। গত ২৬ মে গভীর রাতে অভিযুক্ত পাঁচ পুলিশ সদস্য (এস আই মতিউর রহমান, হুমায়ুন কবির, এসএসআই মো. খোরশেদ, কনস্টেবল প্রশান্ত, সৈকত নাটকীয়ভাবে চিকুনি বেগমকে গ্রেফতার দেখিয়ে তার প্ররোচনায় পরিকল্পিতভাবে হারুনের বাড়িতে প্রবেশ করে তল্লাশির নামে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে। অভিযোগ উঠেছে, এ সময় ক্রসফায়ার ও হত্যার ভয় দেখিয়ে ঘরে থাকা নগদ ৪০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এছাড়াও পুলিশ সদস্যরা ঘরের আসবাবপত্রও তছনছ করে। পরে ওইদিন ভোর চারটার দিকে পুনরায় ওই পুলিশ সদস্যারা এসে হারুন ও তার স্ত্রীকে মিথ্যা মাদক মামলা ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের ভয় দেখিয়ে আটক করে এক লাখ টাকা দাবি করে। অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়ে হারুন ও তার স্ত্রী ছাড়া পান। বিষয়টি ওপরের অফিসারদের জানালে হারুনকে ক্রসফায়ার দেওয়া হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়।
তবে অভিযুক্তদের মধ্যে এস আই মতিউর রহমান অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি দাবি করেন, টাকা নেওয়া তো দূরের কথা, হারুন মিয়ার বাড়িতে গেছেন এমন প্রমাণ থাকলে যেকোনও শাস্তি মাথা পেতে নেবেন। মূলত পাওনা টাকা দিতে এক ব্যক্তিকে চাপ দেওয়ায় তার প্ররোচনায় এ অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।