পুলিশের গুলিতে মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে দুই বাহিনীর পারস্পরিক সমন্বয় রয়েছে বলে জানিয়েছেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি বলেন, ‘দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে র্যাব তদন্ত কাজ করছে। তবে তদন্তের স্বার্থে এ মুহূর্তে কিছু বলা যাচ্ছে না। তদন্ত চলছে, তদন্তের মাধ্যমে আমরা অচিরেই সবাই ফলাফল জানবো। এ ঘটনায় দুই বাহিনীর মধ্যে কোনও সমস্যা নেই, বরং সমন্বয় করে কাজ করা হচ্ছে।’
সোমবার (১৭ আগস্ট) বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর পুলিশ তদন্তকেন্দ্র পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। এসময় তিনি ৩১ জুলাই রাতে সংঘটিত ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এবং আশপাশের লোকজনের সঙ্গেও কথা বলেন।
এসময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, তদন্ত কাজ ইতিবাচকভাবে এগোচ্ছে। তদন্তের কাজ যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে মামলাটির কর্মকর্তা পরিবর্তন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
সাংবাদিকদের র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গা থেকে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এখন একটার সঙ্গে অপরটা মেলাচ্ছি।’
আপনি নিজে পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ ঘটনায় আসামিও পুলিশ, তাই নিজের জায়গা থেকে কোনও ধরনের বিব্রত বোধ করছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে র্যাব ডিজি বলেন, ‘কোনও বিব্রতবোধ করছি না। পেশাদারিত্বের সঙ্গে সবাই মিলে কাজ করছি এবং আমাদের তদন্ত কর্মকর্তা একজন দক্ষ অফিসার। পেশাদারিত্বের সঙ্গে মেধা, যোগ্যতা দিয়ে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।’
স্থানীয়রা জানান, বিকালে র্যাবের ডিজিসহ একটি দল অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যার ঘটনাস্থল টেকনাফের বাহারছড়া এলাকা পরিদর্শন করেন। এসময় ডিজি ঘটনাস্থলে সিনহার গাড়ি কোন পজিশন ছিল, সেটি পর্যবেক্ষণ করেন এবং ঘণ্টাখানেক পর টেকনাফ ত্যাগ করেন। একই দিন সকালে পৌঁছেন তিনি।
এদিকে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় টেকনাফ থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশসহ তিন আসামিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি পৃথকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। সোমবার বেলা ১১টায় এ জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান চট্টগ্রাম বিভাগীয় অতিরিক্ত কমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, ‘ওসি প্রদীপসহ যে তিন জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা রয়েছে তাদের মধ্যে পরিদর্শক লিয়াকত আলী ও উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিতকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষ করা হয়েছে। ওসি প্রদীপকে মঙ্গলবার (১৮ আগস্ট) জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। অন্য চার পুলিশ সদস্য ও তিন সাক্ষীদের আগেই জিজ্ঞাসাবাদ শেষ করেছি আমরা।’
কক্সবাজার জেলা কারাগারের সুপার মোকাম্মেল হোসেন সন্ধ্যা ৭টার দিকে বলেন, ‘বেলা ১১টার দিকে তদন্ত কমিটির প্রধান চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে কক্সবাজার জেলা কারাগার ফটকে ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, পরিদর্শক লিয়াকত আলী ও উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিতকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছেন।’
এর আগে রবিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে টেকনাফের শামলাপুর রোহিঙ্গা ক্যাম্প ইনচার্জের কার্যালয়ে তদন্ত কমিটি গণশুনানি শুরু করে। ওই শুনানিতে সাক্ষ্য দিতে ১১ জনের নাম নিবন্ধন করা হয়। নিবন্ধন করা সাক্ষীর মধ্যে ৯ জনের সাক্ষ্য নেয় তদন্ত কমিটি। গত ১২ আগস্ট তদন্ত কমিটির সদস্য কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শাহজাহান আলী একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেন। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের কমিটি গণশুনানির আয়োজন করে। এ শুনানিতে অংশ নিতে স্থানীয়দের আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি।
গত ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের মারিশবুনিয়া পাহাড়ে ভিডিওচিত্র ধারণ করে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকার নীলিমা রিসোর্টে ফেরার পথে শামলাপুর তল্লাশি চৌকিতে গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ। এসময় পুলিশ সিনহার সঙ্গে থাকা সিফাতকে আটক করে কারাগারে পাঠায়। পরে রিসোর্ট থেকে শিপ্রাকে আটক করা হয়। দু’জনই বর্তমানে জামিনে মুক্ত। ওই ঘটনায় ওসি প্রদীপসহ অন্য পুলিশ সদস্যরা এবং পুলিশের দায়ের করা মামলার তিন সাক্ষী কক্সবাজার জেলা কারাগারে রয়েছে। তাদের মধ্যে চার পুলিশ সদস্য ও তিন সাক্ষীকে রিমান্ড শুনানি করছে তদন্তকারী সংস্থা র্যাব।
আরও পড়ুন:
সিনহা হত্যা মামলা: আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি
গণশুনানি শেষ: ২৩ আগস্ট প্রতিবেদন জমা দিতে পারে তদন্ত কমিটি
সিনহাকে হত্যার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেন র্যাবের নতুন তদন্ত কর্মকর্তা
পাহাড় থেকে নামতে রাত হওয়ায় সিনহাদের ‘ডাকাত’ সন্দেহ করা হয়
আত্মসমর্পণকারী ইয়াবা পাচারকারীদের কাছেও আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন ওসি প্রদীপ!
‘সেদিন দুপুর থেকেই ফোর্স নিয়ে মেরিন ড্রাইভে অবস্থান করছিলেন ইন্সপেক্টর লিয়াকত’