X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

মেনুতে ফিরেছে হারিয়ে যাওয়া দেশীয় মাছের ২৩ জাত

আতাউর রহমান জুয়েল,ময়মনসিংহ
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৯:০০আপডেট : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৯:০০





দেশীয় খলিসা মাছ ভোজন প্রিয় বাঙালির খাবারের মেনুতে আবারও ফিরেছে গ্রাম-বাংলার নদ-নদী, হাওর-বাওর ও খাল-বিলের হারিয়ে যাওয়া সুস্বাদু টেংরা, গুলশা, মলা, ঢেলা, খলিশা, পাবদা, কৈ, শিং, মাগুর, বৈরালিসহ নানা প্রজাতির ছোট মাছ। মৎস্য বিজ্ঞানীরা জানান, বাংলাদেশে মিঠা পানির ২৬০ প্রজাতির মধ্যে ৬৪ প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত প্রায়। তবে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদন ও বাণিজ্যিকভাবে চাষের ফলে ইতোমধ্যে বিলুপ্তপ্রায় ২৩টি জাত পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে একুশে পদকপ্রাপ্ত বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা। এ সফলাতায় বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির মাছের প্রাপ্যতা বেড়েছে এবং এসব মাছের দামও ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে চলে এসেছে।

ইনস্টিটিউটের মৎস্য বিজ্ঞানীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাংলাদেশে মৎস্য খাতের একটি বিরাট অংশ জুড়ে রয়েছে দেশীয় প্রজাতির ছোট মাছ। প্রাচীণকাল থেকেই বাঙালির খাদ্য তালিকায় এই ছোট মাছের রয়েছে বিশেষ কদর। এ জন্যই প্রবাদে ছিল ‘মাছে ভাতে বাঙালি’। কিন্তু বিগত কয়েক দশকে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, মুক্ত জলাশয় ভরাট, সেচ দিয়ে মাছ আহরণসহ কৃষিকাজে কীটনাশকের যথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে প্রাকৃতিক জলাশয়ের মাছ হুমকির মুখে রয়েছে। এ কারণে ছোট প্রজাতির মলা-ঢেলা, পুঁটি, কেচকি, বাইম, চান্দা, পাবদা, গুলশা, টেংরা, বৈরালি, রাজপুঁটি, খলিশা, ভাগনা, কৈ, শিং, মাগুর, গুজি, আইড়, ফলি, মহাশোল, বালাচাটা, গুতুমসহ অনেক মাছ বিলুপ্তির পথে।

দেশি বৈরালি মাছ বাংলাদেশে মিঠা পানির ২৬০ প্রজাতির মধ্যে ১৪৩টি ছোট মাছ। এর মধ্যে ৬৪ প্রজাতির মাছ বিলুপ্তপ্রায়। ফলে গত এক দশক আগেও বাজারে ছোট মাছের প্রাপ্যতায় ছিল নানা সঙ্কট। চাহিদার ছোট মাছ পাওয়া গেলেও, দাম ছিল ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। বিশেষ করে দেশীয় কৈ, শিং, মাগুর, পাবদা কেনার সামর্থ্য ছিল না অনেকের। আবহমান গ্রাম বাংলার নদ-নদী হাওর-বাওর ও খাল-বিল শুকিয়ে যাওয়াসহ জলবায়ুর প্রভাবে দেশীয় প্রজাতির সুস্বাদু বাহারি সব মাছ ছিল হারিয়ে যাওয়ার কাতারে।

এ বাস্তবতায় পুষ্টি সমৃদ্ধ ও সুস্বাদু বিলুপ্ত প্রায় এসব মাছ উৎপাদন ও সংরক্ষণে এগিয়ে আসে ময়মনসিংহের বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট বিএফআরআই। গবেষণার জন্য হাতে নেয় নানা প্রকল্প। বিজ্ঞানীরা গবেষণা চালিয়ে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে বিগত ১৯৮৭ সাল থেকে ইতোমধ্যে ২৩টি মাছের পোনা উৎপাদন ও চাষ কৌশল উদ্ভাবন করেছেন।

টেংরা মাছ প্রথমে ইনস্টিটিউটের ময়মনসিংহের স্বাদুপানি গবেষণা কেন্দ্র থেকে বিলুপ্তপ্রায় মাছ সংরক্ষণ ও উন্নয়নে গবেষণা করা হয়। তবে এখন বগুড়ার শান্তাহার, নীলফামারির সৈয়দপুর ও যশোর উপকেন্দ্রে এই গবেষণা করা হচ্ছে।

দেশীয় প্রজাতির পোনা উৎপাদনে বর্তমানে চার শতাধিক হ্যাচারি কাজ করছে। এর মধ্যে কেবল ময়মনসিংহ অঞ্চলেই ২০০ কোটি পাবদা ও গুলশা মাছের পোনা উৎপাদিত হচ্ছে। সংরক্ষণসহ নানা উদ্যোগের কারণে এখন নদী, হাওর-বাওর ও খাল-বিলে মিলছে এসব মাছ। দেশজুড়ে বর্তমানে দেশীয় কৈ, শিং, মাগুর পাবদা, গুলশার ব্যাপক চাষও হচ্ছে। চাষিদের মধ্যেও এ নিয়ে তৈরি হয়েছে ব্যাপক আগ্রহ। আগ্রহী চাষিদের ইনস্টিটিউট থেকে বছরজুড়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

দেশি গুতুম মাছ ময়মনসিংহ সদরের মাইজহাটি গ্রামের মাছ চাষি আক্রাম হোসেন জানান, তিনি আড়াই একর জমিতে দেশীয় শিং মাছের চাষ করছেন। বছরে দু’বার বিক্রি হচ্ছে এই শিং। প্রতি কেজি শিং ৩০০-৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বিএফআরআইয়ের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. সেলিনা ইয়াছমিন জানান, পুষ্টির অন্যতম উৎস ছোট মাছে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন এ, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন ও আয়োডিনের মতো খনিজ উপাদান। এগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি রক্ত শূন্যতা, গলগন্ড ও অন্ধত্ব প্রতিরোধে সহায়তা করে।

দেশি গুলশা  মাছ এদিকে ইনস্টিটিউট থেকে বর্তমানে কাকিলা, শাইল বাইম, রানী, কাজলি, বাতাসি, ডেলা, আংগুস ভোল মাছ ও উপকূলীয় কাওন মাছের প্রজনন ও চাষ নিয়ে গবেষণা চলছে বলে জানান ইনস্টিটিউটের স্বাদুপানি কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এএইচএম কোহিনুর। তিনি বলেন, বিলুপ্তপ্রায় সবকটি প্রজাতি ফের খাবার মেনুতে ফিরিয়ে আনতে নিরলস কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা।

বিএফআরআই এ বিষয়ে বিএফআরআই মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, বর্তমান সরকার আমলে বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় মাছ সংরক্ষণে গবেষণা জোরদার করা হয়েছে এবং বিলুপ্তপ্রায় সব মাছকে বাঙালির খাবারের টেবিলে ফিরিয়ে আনতে প্রযুক্তি উদ্ভাবনে ইনস্টিটিউট থেকে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এসব প্রযুক্তি মাঠ পর্যায়ে চাষিদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি মৎস্য অধিদফতর থেকে নদ-নদী ও খাল-বিলে অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিলুপ্তপ্রায় মাছ সংরক্ষণেও নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান এই মৎস্য বিজ্ঞানী।

উল্লেখ্য, দেশীয় প্রজাতির মাছ সংরক্ষণসহ গবেষণায় গৌরবজনক অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট ২০২০ সালে একুশে পদক লাভ করে।

/টিটি/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ফিরেই ফর্টিসকে বিধ্বস্ত করলো মোহামেডান
ফিরেই ফর্টিসকে বিধ্বস্ত করলো মোহামেডান
লঞ্চঘাটের পন্টুন থেকে পদ্মা নদীতে পড়ে যুবকের মৃত্যু
লঞ্চঘাটের পন্টুন থেকে পদ্মা নদীতে পড়ে যুবকের মৃত্যু
রাশিয়ায় বন্ধ হলো জাতিসংঘের নজরদারি সংস্থার কার্যক্রম
রাশিয়ায় বন্ধ হলো জাতিসংঘের নজরদারি সংস্থার কার্যক্রম
ওজন কমিয়ে সাকিব পুরো ফিট, সন্তুষ্ট সহকারী কোচ
ওজন কমিয়ে সাকিব পুরো ফিট, সন্তুষ্ট সহকারী কোচ
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা