গাজীপুর মহানগর ও সদর উপজেলাগুলোর সাধারণ মানুষের মধ্যে করোনা সংক্রমণ রোধে সতর্কতা নেই বললেই চলে। হাসপাতাল, গুরুত্বপূর্ণ অফিস-আদালত ছাড়া উন্মুক্ত স্থানে চলাচলকারীদের মধ্যে মাস্ক ব্যবহারকারীর সংখ্যা একেবারেই কম।
বুধ (৭ অক্টোবর) ও বৃহস্পতিবার (৮ অক্টোবর) গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও বিভিন্ন স্পট ঘুরে এসব চিত্র পাওয়া গেছে। এছাড়া চিকিৎসকেরা আগে যেখানে করোনার ভয়ে বাড়তি সতর্কতা বজায় রাখতে গিয়ে রোগী দেখছেন না বলে অভিযোগ ছিল সেই অবস্থারও পরিবর্তন হয়েছে। এখন সব ধরনের রোগী চিকিৎসকের কাছে সেবা পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। তবে চিকিৎসকদের কেবল পিপিই ছাড়া অন্য সতর্কতামূলক উপকরণ ব্যবহার করতে দেখা গেছে।
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, করোনা ওয়ার্ড ও আইসোলেশনে সাত জন করে রোগী রয়েছেন। করোনা ওয়ার্ডে নার্স, চিকিৎসকরা পিপিইি, গ্লাভস ও মাস্ক পরা অবস্থায় সেবা দিচ্ছেন। আইসোলেশন ওয়ার্ডেও একই দৃশ্য চোখে পড়েছে।
নার্স মাজেদা আক্তার বলেন, করোনা ও আইসোলেশন ওয়ার্ডে তারা সার্বক্ষণিক পিপিই, মাস্ক, গ্লাভসসহ প্রয়োজনীয় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে রোগীদের সেবা দিচ্ছেন।
হাসপাতালের তিনতলায় রয়েছে ফ্লু কর্নার। সাধারণ জ্বর, ঠান্ডা, কাশিসহ করোনা উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীদের ফ্লু কর্নারে চিকিৎসা নিতে হয়। এরকম নির্দেশনা দিয়ে হাসপাতালের সকল জায়গায় দেয়ালে নোটিশ সাঁটিয়ে রাখা হয়েছে।
গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কোমর ব্যথার চিকিৎসা নিতে আসেন মহানগরের ভোগড়া এলাকার আব্দুস ছালামের ছেলে রুবেল হাসান (২৭)। তিনি জানান, ১৫ দিন আগেও চিকিৎসক করোনা সংক্রমণের ভয়ে তার গায়ে হাত দিয়ে স্পর্শ করে দেখেনি। এখন হাতে গ্লাভস পরে গা ছুঁয়ে দেখছেন।
ডান হাতে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা ফারুক (৪৬) বলেন, চিকিৎসক মুখে মাস্ক ও হাতে গ্লাভস পরা অবস্থায় গায়ে হাত দিয়ে তাপমাত্রা পরিমাপ করেছেন।
মাথার তালুতে ব্যথা নিয়ে শ্রীপুর উপজেলার ডুমনী গ্রামের জীবন দাস (৪৩) চিকিৎসা নিতে এসে বলেন, চিকিৎসকরা এখন গায়ে হাত দিয়ে রোগী দেখছেন, অথচ ১৫-২০ দিন আগেও করোনা সন্দেহে তারা গায়ে হাত দিতেন না।
গাজীপুর জেলা সিভিল সার্জন খায়রুজ্জামান জানান, শুক্রবার পর্যন্ত জেলায় মোট ৫ হাজার ৫২৬ জন করোনা পজিটিভ হয়েছেন। এরমধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৩ হাজার ৭০৩ জন, নমুনা সংগৃহীত হয়েছে ৪১ হাজার ৬৩৪ জনের এবং মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৭৭ জন। সবশেষ রবিবার (১১ অক্টোবর) জেলায় মোট করোনা পজিটিভ হয়েছেন ১৬ জন এবং নমুনা পাঠানো হয়েছে ১৪৫ জনের।
তিনি আরও জানান, বর্তমানে গড়ে প্রতিদিন ১৫০ জন করোনা টেস্ট করার জন্য নমুনা দিয়ে যাচ্ছেন। এখন হাসপাতালে কোনও করোনা চিকিৎসাধীন নেই। প্রচুর পরিমাণে পিপিই আছে আমাদের কাছে। করোনা সংক্রমণের বিষয়ে তিনি বলেন, যেহেতু নমুনা কম আসছে, তাই বোঝা যাচ্ছে আগের চেয়ে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কমে গেছে।
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) এস এম তরিকুল ইসলাম বলেন, উন্মুক্ত স্থানে মাস্ক ব্যবহার না করার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সচেতনতা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।