বরগুনার আলোচিত শাহনেওয়াজ রিফাত (রিফাত শরীফ) হত্যা মামলায় অপ্রাপ্তবয়স্ক ১১ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছেন আদালত। খালাস দেওয়া হয়েছে তিন জনকে। এই রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। আর রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলছেন, তারা উচ্চ আদালতে যাবেন।
বরগুনা শিশু আদালতের পিপি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল বলেন, ‘রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় অপ্রাপ্তবয়স্ক আসামিদের যে রায় দিয়েছেন আদালত তাতে আমরা সন্তুষ্ট। এই রায় দৃষ্টান্তস্থাপনকারী রায়। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণ করতে আমরা সক্ষম হয়েছি। আসামি যেই হোক, কেউই যে অপরাধ করে পার পাবে না সেটা আবারও এই রায়ের মাধ্যমে প্রমাণ হলো।’
তিনি আরও বলেন, ‘মাত্র ৬৩ কার্য দিবসে এ মামলার বিচারকাজ সম্পন্ন হয়েছে। মূলত সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ন্যায়বিচারের একটি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করা সম্ভব হয়েছে। আর তা হয়েছে দ্রুততম সময়ের মধ্যে।’ তিনি গণমাধ্যমকর্মী, পুলিশ প্রশাসন ও বিচারবিভাগসহ সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
অন্যদিকে এই মামলায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. শাহজাহান বলেন, ‘শিশু আইনে যেসব বিষয় বিবেচনা করার কথা এখানে সেগুলো বিবেচনা করা হয়নি। তাই আমরা আসামিপক্ষ এই রায়ে সংক্ষুব্দ। এই রায়ের বিষয়ে আমরা উচ্চ আদালতে যাবো।’
মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) বরগুনা শিশু আদালতের বিচারক হাফিজুর রহমান রায় ঘোষণা করেন। ১৪ আসামির মধ্যে ছয় জনকে ১০ বছর, চার জনকে পাঁচ বছর ও এক জনকে তিন বছরের সাজা দেওয়া হয়েছে। বেকসুর খালাস পেয়েছে তিন জন। সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তাদের যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হবে।
১০ বছর সাজা পেয়েছে- মো. রাশিদুল হাসান রিশান ওরফে রিশান ফরাজী (১৭), মো. রাকিবুল হাসান রিফাত হাওলাদার (১৫), মো. আবু আবদুল্লাহ ওরফে রায়হান (১৬), মো. ওলিউল্লাহ অলি (১৬), মো. নাইম (১৭), মো. তানভীর হোসেন (১৭)। পাঁচ বছর সাজা হয়েছে- জয় চন্দ্র সরকার ওরফে চন্দন (১৭), নাজমুল হাসান (১৪), রাকিবুল হাসান নিয়ামত (১৫), মো. সাইয়েদ মারুফ বিল্লাহ ওরফে মহিবুল্লা (১৭)। তিন বছর কারাদন্ড পেয়েছে প্রিন্স মোল্লা (১৫)। খালাস দেওয়া হয়েছে- আরিয়ান হোসেন শ্রাবণ (১৬), রাতুল সিকদার জয় (১৬), মারুফ মল্লিককে (১৭)।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি রিফাত হত্যা মামলার অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন বরগুনার শিশু আদালত। ৭৪ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ ও উভয়পক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের পর ১৪ অক্টোবর বরগুনা শিশু আদালত রায়ের দিন ধার্য করেন। আজ ২৭ অক্টোবর বরগুনার শিশু আদালতের বিচারক রায় ঘোষণা করেন।
এর আগে ৩০ সেপ্টেম্বর এই মামলার প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির রায় হয়। রিফাত হত্যা মামলায় তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা ওরফে মিন্নিসহ ছয়জনের ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। বাকি চার আসামিকে খালাস দেওয়া হয়। ৩০ সেপ্টেম্বর বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে কিশোর গ্যাং বন্ড বাহিনী কুপিয়ে গুরুতর জখম করে রিফাত শরীফকে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই দিন বিকালেই বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান। ঘটনার পরদিন ২৭ জুন রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ৫-৬ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। রিফাতের ওপর হামলার ছয়দিন পর ২ জুলাই ভোর রাতে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় প্রধান আসামি সাব্বির আহমেদ নয়ন ওরফে নয়ন বন্ড।
আরও পড়ুন-
অপ্রাপ্তবয়স্ক ১১ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড
রিফাত হত্যায় স্ত্রী মিন্নিসহ ৬ জনের ফাঁসির রায়
মিন্নির পরিকল্পনায়ই হত্যাকাণ্ড: বিচারক
১৪ অপ্রাপ্তবয়স্ক আসামির রায় আজ, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি রিফাতের পরিবারের