X
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
১৭ বৈশাখ ১৪৩১

‘মারতো আর বলতো নিউজ করবি কি-না বল’

হুমায়ুন মাসুদ, চট্টগ্রাম
০২ নভেম্বর ২০২০, ২০:০৫আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২০, ০০:২১




হাসপাতালে সাংবাদিক গোলাম সরওয়ার নিউজ করাকে কেন্দ্র করেই অপহৃত হয়েছিলেন বলে ধারণা করছেন চট্টগ্রামের সাংবাদিক গোলাম সরওয়ার। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘সংবাদ প্রকাশের জের ধরেই তারা আমাকে অপহরণ করে থাকতে পারে। অপহরণ করার পর তারা আমাকে একটি কক্ষে আটকে রেখে মারধর করতো। বেল্ট জাতীয় কিছু একটা দিয়ে মারতো আর বলতো নিউজ করবি কিনা বল।’

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে গিয়ে অপহরণের বিষয়ে জানতে চাইলে সাংবাদিক সরওয়ার এসব কথা বলেন। এর আগে নিখোঁজের চার দিন পর শনিবার (১ নভেম্বর) রাত ৮টার দিকে সীতাকুণ্ডের কুমিরা ব্রিজঘাট এলাকায় গোলাম সরওয়ারকে ফেলে যায় অপহরণকারীরা। এরপর তাকে দেখে স্থানীয়রা খবর দিলে নগর পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে এনে ভর্তি করায়। বর্তমানে তিনি চমেক হাসপাতালের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

গোলাম সরওয়ার চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক ‘আজকের সূর্যোদয়’ পত্রিকায় স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) সকালে বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হন গোলাম সরওয়ার। এরপর থেকে তার আর কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি।

গোলাম সরওয়ার বলেন, আমি তো ধারাবাহিকভাবে বেশ কয়েকটা নিউজ করেছি। কিন্তু কোন নিউজের জন্য তারা অপহরণ করেছে শিওর না। তবে তারা আমাকে মারতো আর জিজ্ঞেস করতো ‘নিউজ করবি কিনা বল’। এই বিষয়টি নিয়ে আমি আর বেশি কিছু বলতে চাইছি না। মানসিকভাবে আমি খুব খারাপ অবস্থায় আছি।

তিনি আরও বলেন, ‘আমার গায়ে পোশাক থাকা অবস্থায় মারধর করেছে। গায়ে পোশাক রেখে তার ওপর কিছু দিয়ে মুড়িয়ে তারপর মারধর করেছে। বাঁশ অথবা কাঠ জাতীয় কিছু একটা দিয়ে মেরেছে। বেল্ট জাতীয় কিছু একটা দিয়ে আমার পিঠে মেরেছে। তাদের কথাবার্তা ও মারধর দেখে মনে হয়েছে তারা প্রফেশনাল। তারা দুই দিনে দুইবার মেরেছে। ওরা চার জন ছিল। চার জনের একজন চট্টগ্রামের ভাষায়, অন্যরা ঢাকাইয়া ভাষায় কথা বলতো।’

ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে গোলাম সরওয়ার বলেন, ‘বাড়ি যাওয়ার জন্য বুধবার (২৮ নভেম্বর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে বাসা থেকে বের হই। এরপর আলমাস সিনেমা হলের সামনে গেলে সেখানে বাইক নিয়ে একজনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি। পাঠাও রাইডার ভেবে নতুন ব্রিজ পর্যন্ত যাবে কিনা জানতে চাইলে সে আমাকে বাইকে উঠতে বলে। আমি বাইকে উঠে কিছু দূর যাওয়ার পর আরও একজন আমার পেছনে বাইকে ওঠে। এরপর ওই লোক আমার নাকে কি একটা দিয়েছে, তারপর বোরকা দিয়ে আমার শরীর ঢেকে দেয়। এরপর আমি আর কিছু বলতে পারিনি। অনেকক্ষণ পর আমার হুঁশ এলে দেখি চোখ বাঁধা। আমি একটা গাড়িতে আছি। গাড়ির হর্ন শুনে মনে হয়েছে এটি অ্যাম্বুলেন্স হবে। এরপর একটি কক্ষে নিয়ে রাখে। ওই কক্ষ থেকে রেলগাড়ির আওয়াজ শুনেছি। সারাক্ষণ আমার চোখ বাঁধা ছিল। আমি কিছুই দেখতে পাইনি।’

তিনি আরও বলেন, যারা অপহরণ করেছিল তারা মোবাইলে কথা বলতো। একদিন মোবাইলে বলছে, ‘স্যার তাকে ফেলে দিবো? নাকি রাখবো?’ তখন মোবাইল লাউড দেওয়া ছিল। ওইপাশ থেকে বলছে ‘না না ফেলার দরকার নেই। তারে দিয়ে অন্যদের থ্রেট (হুমকি) দেওয়া দরকার। সে ছোটখাটো সাংবাদিক, তাকে কেন মারবি? সে বেশি উড়ছে তাই তাকে দেওয়া হয়েছে।’ এরপর তারা আমার মুখে চড়-থাপ্পড় মেরে একটা পাউরুটি আর পানি দিয়ে ফ্লোরে ফেলে রেখে যায়।

এদিকে গোলাম সরওয়ার অক্ষত অবস্থায় ফিরে এলেও কারা তাকে অপহরণ করেছে, সেটি এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পুলিশ তার সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেছে, কিন্তু তার কাছ থেকে সঠিক কোনও তথ্য তারা এখনও পায়নি।

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালি জোন) বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘উনার সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। এই ঘটনায় এখনও মামলা দায়ের হয়নি। মামলা দায়ের করা হলে আমরা সেই অনুযায়ী আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। এরপরও আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি। তার সঙ্গে কথা বলেছি। উনি অনেক তথ্য দিয়েছেন, সেগুলো আমরা যাচাই-বাছাই করছি।’

অন্যদিকে গোলাম সরওয়ার বুধবার তাকে অপহরণ করা হয়েছে দাবি করলেও এই ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে নগরীর কোতোয়ালি থানায় করা জিডিতে দাবি করা হয়েছিল বৃহস্পতিবার সকালে তাকে অপহরণ করা হয়। থানায় জিডি করেন তার সহকর্মী আজকের সূর্যোদয় পত্রিকার ব্যুরো প্রধান জুবায়ের সিদ্দিকী।

এ বিষয়ে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাকে গোলাম সরওয়ারের স্ত্রী বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টার দিকে কল করে জানান তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। এরপর সে যে এলাকায় থাকে, সেখানে আশপাশের লোকজনের সঙ্গে কথা বলি। তখন এক মহিলা বলেছেন, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে তিনি গোলাম সরওয়ারকে দেখেছেন। সেই হিসেবে আমরা জিডিতে বৃহস্পতিবার সকালে নিখোঁজ হয়েছেন উল্লেখ করেছি। অবশ্য পরে ওই মহিলা বলেছেন, এটি বৃহস্পতিবার নয়, বুধবার হবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে জুবায়ের সিদ্দিকী বলেন, কুমিরা এলাকায় অপহরণকারীরা ফেলে যাওয়ার পর স্থানীয় একজন লোক তাকে দেখে। পরে তারা উদ্ধার করে তাকে একটি ডেকোরেশন দোকানে নিয়ে আসে। তাকে জঙ্গলে তারা একটি সেন্ডো গেঞ্জি আর আন্ডারওয়্যার পরা অবস্থায় পান। দোকানে আনার পর তারা তাকে পানি খাওয়ানোর পর আমার নাম আর নম্বর বলে। পরে তারা আমাকে ফোন করলে আমি কোতোয়ালি থানার ওসিসহ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে নিয়ে এসে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করাই। আমি এবং ওসি মহসীন সাহেবের কাঁধে ভর দিয়ে পায়ে হেঁটেই সে গাড়িতে উঠেছে। হাসপাতালে ঢোকার সময়ও হেঁটে ঢুকেছে বলে জানান তিনি।

/টিটি/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জলবায়ু বিপর্যয় উপকূলীয় মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলছে: গবেষণা
জলবায়ু বিপর্যয় উপকূলীয় মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলছে: গবেষণা
ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পের বিকাশে সরকারের সহযোগিতা চান ব্যবসায়ীরা
ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পের বিকাশে সরকারের সহযোগিতা চান ব্যবসায়ীরা
‘উপজেলা নির্বাচনে জাতীয় নির্বাচনের চেয়ে বেশি ভোটার উপস্থিতি থাকবে’
‘উপজেলা নির্বাচনে জাতীয় নির্বাচনের চেয়ে বেশি ভোটার উপস্থিতি থাকবে’
পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন
পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন
সর্বাধিক পঠিত
এসি কেনার আগে মনে রাখতে হবে এই ৭ বিষয়
এসি কেনার আগে মনে রাখতে হবে এই ৭ বিষয়
ট্রাকের চাকায় পিষে দেওয়া হলো ৬ হাজার কেজি আম
ট্রাকের চাকায় পিষে দেওয়া হলো ৬ হাজার কেজি আম
বেতন বৈষম্যে উচ্চশিক্ষার মান হারাচ্ছে বেসরকারি কলেজগুলো
বেতন বৈষম্যে উচ্চশিক্ষার মান হারাচ্ছে বেসরকারি কলেজগুলো
সিএনজির রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম চালু করতে বিআরটিএ অফিস ঘেরাও
সিএনজির রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম চালু করতে বিআরটিএ অফিস ঘেরাও
চাকরি স্থায়ীর দাবিতে বিটিসিএল কর্মচারীদের ‘লাগাতার অবস্থান’
চাকরি স্থায়ীর দাবিতে বিটিসিএল কর্মচারীদের ‘লাগাতার অবস্থান’