X
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪
২২ বৈশাখ ১৪৩১

রংপুরে আ’ লীগ নেতার নেতৃত্বে বাড়ি দখল: ২১ দিনেও গ্রেফতার হয়নি কেউ

লিয়াকত আলী বাদল, রংপুর
০২ নভেম্বর ২০২০, ২২:৫৫আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২০, ২২:৫৬

 



আনোয়ার সাদাত লিমনের নেতৃত্বে বাড়ি দখল রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার সাদাত লিমনের নেতৃত্বে এক ব্যবসায়ীর বাড়িসহ তিনটি দোকান দখল ও নগদ অর্থসহ মালামাল লুটপাটের ঘটনায় মামলা দায়েরের ২১ দিন পেরিয়ে গেলেও আসামিদের কাউকেই গ্রেফতার করেনি পুলিশ। অথচ পুলিশের সামনেই প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা এমনকি থানায় ঘণ্টর পর ঘণ্টা অবস্থান করলেও প্রধান আসামি লিমনকে গ্রেফতার করছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। 

এদিকে বাড়িঘর দখল করে নেওয়ায় পর সর্বস্ব হারিয়ে পথে পথে ঘুরছে ভুক্তভোগী পরিবার। এক কাপডড়েই দিন কাটছে স্বামী, স্ত্রী, সন্তান সবার।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, মিঠাপুকুপুর থানা থেকে মাত্র ৫শ’ গজ দুরে চিথলী দক্ষিণপাড়া গ্রামের মৃত ফয়েজ উদ্দিনের ছেলে ব্যবসায়ী আব্দুল আলীম মিঠু ৮-৯ বছর ধরে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বসবাস করে আসছেন। বাসার মালিক নাসিম আরা বেগমের কাছ থেকে ৭ শতক জমি কিনে চার রুমের দোকান ও তিন রুম বিশিষ্ট টিনশেড পাকা বাড়ি নির্মাণ করেন। গত ১১ অক্টোবর আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যাওযার সুযোগে মিঠাপুকুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ মো. আনোয়ার সাদাত লিমনের নেতৃত্বে তার ভাই শাহ সাজ্জাদ হোসেন, শাহ নুরুল রওশনসহ ৫০-৬০ জন ক্যাডার লাঠি, ছোড়া বল্লম , লোহার রডসহ বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ঘরের তালা ভেঙে বাসাটি দখল করে নেয়। তারা বাসায় থাকা আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন মালামাল ভাংচুর করে। এছাড়া নগদ অর্থ, ল্যাপটপসহ ৫০ লাখ টাকার মালামাল লুট করে। খবর পেয়ে বাদী ও তার স্ত্রী মমতাজ বেগম বাধা দিলে তাদের মারধর করে। মমতাজ বেগমের পরনের কাপড় ছিঁড়ে তাকে বিবস্ত্র করে শ্লীলতাহানি করে। আওয়ামী লীগ নেতা লিমন নিজেই লাঠি ও লোহার রড নিয়ে হামলার নেতৃত্ব দেয়। এ সংক্রান্ত ভিডিওচিত্রও রয়েছে।

ব্যবসায়ী আব্দুল আলিম মিঠু ও তার স্ত্রী মমতাজ বেগম জানান, ঘটনার পর ১১ অক্টোবর বিকালে এ ব্যাপারে মামলা দায়ের করার জন্য মিঠাপুকুর থানার ওসি আমিরুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করলে তিনি ‘দেখছি’ বলে বিকাল থেকে সারা রাত ও পরের দিন দুপুর পর্যন্ত থানায় অবস্থান করলেও মামলা নেননি। পরে রংপুরের পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমারের সঙ্গে দেখা করে পুরো বিষয় জানালে তিনি থানাকে মামলা নেওয়ার নির্দেশ দেন। এরপর পুলিশ আসামিদের পক্ষ নিয়ে দায়সারা একটি মামলা রেকর্ড করে।
মামলার বাদী মিঠু ও তার স্ত্রী মমতাজ আরও জানান, মামলা দায়েরের পর আসামিদের গ্রেফতারের জন্য মিঠাপুকুর থানার ওসি আমিরুজ্জামান, ওসি তদন্ত জাকির হোসেনের সঙ্গে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করলেও এখন পর্যন্ত আসামিদের কাউকেই গ্রেফতার করেনি। উল্টো আসামিদের পক্ষ নিয়েছে পুলিশ। মামলার প্রধান আসামি লিমন থানায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা অবস্থান করলেও পুলিশ তাকে গ্রেফতার করছে না।

তারা আরও অভিযোগ করেন, আমরা এখন বাস্তহারা হয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছি। মমতাজ বেগম জানান, আমার বড় ছেলে খালিদ হাসান মান্না মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ইজ্ঞিনিয়ারিং বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী, ছোট ছেলে ওমর ফারুখ মুন্না রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল অ্যান্ড ফুড প্রসেসিং ইজ্ঞিনিয়ারিং বিভাগের ৪র্থ সেমিস্টারে পড়ছে, একমাত্র কন্যা উম্মে কুলসুম মলি বিএ তৃতীয় বর্ষে পড়ছে। বাড়ি দখল করে নেওয়ায় সময় তারা সেখানে থাকা আমাদের প্রায় ৫০ লাখ টাকার মালামাল লুট করছে। যদি আমাদের বাড়িঘর ও মালামাল উদ্ধার করা না হয় তাহলে তিন সন্তানের শিক্ষা জীবন ধংস হয়ে যাবে।
মিঠু আরও জানান, পুলিশ কোনও পদক্ষেপ না নেওয়ায় গত ২৮ অক্টোবর সমস্ত ঘটনা বর্ণনা করে রংপুরের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও রংপুর রেঞ্জের পুলিশের ডিআইজির কাছে পৃথক পৃথকভাবে আবেদন করে বিচার দাবি করেছি। তারাও কোনও পদক্ষেপ নেননি।

তিনি ও তার স্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রধান আসামি সরকারি দলের প্রভাবশালী নেতা হওয়ায় আমরা বিচার পাচ্ছি না। এখন বাধ্য হয়ে আমরণ অনশন করা ছাড়া আর কোনও বিকল্প পথ খোলা নেই।

এ বিষয়ে মিঠাপুকুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ মো. আনোয়ার সাদাত লিমনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা। বাড়ি কে দখল করেছে জানতে চাইলে বলেন, তার জেঠাতো ভাইয়ের বাসায় তারা ভাড়া থাকতেন। বাসা কিনেছে বলে তার জানা নেই।

লাঠি ও অস্ত্র হাতে হামলার নেতৃত্বদানের ছবি ও ভিডিও সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি। তবে বারবার বলছিলেন, পুলিশের সঙ্গে কথা বলেন তারা সব বলবে। সরকারি দলের প্রভাবশালী নেতা হয়ে একজনের বাড়ি দখলের বিষয়টি দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে কিনা এমন প্রশ্নেরও কোনও উত্তর দেননি তিনি।
মিঠাপুকুর থানার ওসি আমিরুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করে আসামিদের কেনও গ্রেফতার করা হচ্ছে না জানতে চাইলে তিনি কোনও উত্তর দেননি। আওয়ামী লীগ নেতা লিমনের পক্ষ নেওয়ার বিষয়ে বলেন, পুলিশ নিরপেক্ষ আছে। ১৮ ঘণ্টা থানায় অবস্থানের পরও কেনও মামলা নেওয়া হয়নি অভিযোগের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি উত্তর না দিয়ে ফোন রেখে দেন। 

/আরআইজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বাড়িতে বিস্ফোরণে আহত স্কুলছাত্রী মারা গেছে
বাড়িতে বিস্ফোরণে আহত স্কুলছাত্রী মারা গেছে
অননুমোদিত স্টিকারে ৩৬৩ মামলা, দুই হাজার গাড়ি ডাম্পিং: ট্রাফিক পুলিশ
অননুমোদিত স্টিকারে ৩৬৩ মামলা, দুই হাজার গাড়ি ডাম্পিং: ট্রাফিক পুলিশ
অজানা তথ্য সামনে আনলেন পরিণীতি
অজানা তথ্য সামনে আনলেন পরিণীতি
আ. লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সভা সোমবার
আ. লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সভা সোমবার
সর্বাধিক পঠিত
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
মিল্টন সমাদ্দারের তিন মামলার বাদীরই মুখে কুলুপ
মিল্টন সমাদ্দারের তিন মামলার বাদীরই মুখে কুলুপ
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি