X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘কাজ নাই, স্বামীও বেকার আমিও বেকার’

হিমাদ্রি শেখর ভদ্র, সুনামগঞ্জ
০২ ডিসেম্বর ২০২০, ১২:৪১আপডেট : ০২ ডিসেম্বর ২০২০, ১৩:৩৯

যাদুকাটা নদী, সুনামগঞ্জ ‘গাঙ্গে কোনও কাম-কাজ নাই, স্বামীও বেকার আমিও বেকার। ঋণ করে কয়েকমাস সংসার চালাইছি। পরে দুই মেয়ে মাজেদা ও খালেদাকে ঢাকায় গার্মেন্টেসে কাজ করতে পাঠাইছিলাম। করোনার কারণে ঢাকায় কাজ না পেয়ে কয়েকদিন হলো বাড়ি ফিরে এসেছে ওরা। এখন ৭ জনের পেট কী দিয়ে চালাই?’ সুনামগঞ্জের যাদুকাটা নদীর তীরে দাঁড়িয়ে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন সাহিদাবাদ গ্রামের ৫ সন্তানের জননী আরজু বেগম।

করোনা মহামারির পর থেকে নদী থেকে বালু পাথর উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। কিছু সংখ্যক নারী নদী থেকে কয়লা উত্তোলন করে জীবিকা নির্বাহ করলেও বালু পাথর উত্তোলনের সঙ্গে জড়িতরা ৮ মাস যাবত বেকার। আজ পর্যন্ত নদী থেকে বালু পাথর উত্তোলনের কোনও ব্যবস্থা হয়নি।

পুরানগাঁও গ্রামের ৮ ছেলে ও ১ মেয়ের জনক হিরন মিয়া (৪৭) বলেন, যাদুকাটা নদী থেকে বালু পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় নদী তীরবর্তী ৩০টি গ্রামের শ্রমজীবীরা বেকার হয়ে পড়েছেন। অনেকেই বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য বাইরের জেলায় গেলেও কোনও কাজকর্ম না পেয়ে খালি হাতে ফেরত এসেছেন।

রহমতপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম বলেন, শুনছি সরকার বালু পাথর মহাল ইজারা দেয়নি। তাই নদী থেকে বালু পাথর উত্তোলন একবারে বন্ধ রয়েছে। কেউ একমুঠো বালু বা একটি পাথরও নদী থেকে তুলতে পারেন না।

ছোট নৌযান শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নদী চালু থাকলে তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সুহালা, মুদেরগাঁও, ঢালারপাড়, ছরারপাড়, লাউড়েরগড়, পুরান লাউড়, জাঙ্গালহাটি, লামাশ্রম, সাহিদাবাদ, ঘাঘড়া, ঘাগটিয়া, মাহারাম, মানিগাঁও, বাদাঘাট, মোল্লাপাড়া, কান্দাহাটি, সুন্দরপাহাড়িসহ ৩০টি গ্রামের বারকি শ্রমিকরা বেকার অবস্থায় রয়েছেন।

রাজারগাঁও গ্রামের নূর মিয়া বলেন, নদী চালু থাকলে একটি বারকি নৌকা প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ টাকার বালু উত্তোলন করতে পারতো। নদী বন্ধ থাকায় তারা এ টাকা আর উপার্জন করতে পারছেন না।

নদীর তীরে কাজ খুঁজে বেড়ানো নারী আলমগীর হোসেন বলেন, বালু পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় ৩০টি ক্রাশার মিলের শতাধিক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। মিল মালিকরা পড়েছেন লোকসানের মুখে।

দেলোয়ার হোসেন বলেন, বারকি শ্রমিকরা নদী থেকে ডুব দিয়ে বালু উত্তোলন করার জন্য বেলচা, বারকি, ছাকনি রশিসহ বিভিন্ন উপকরণ কিনেছিলেন। এখন নদী বন্ধ থাকায় তারা এগুলো কম দামে বিক্রি করে সংসারের খরচ জোগাচ্ছেন।

আব্দুল খালেক বলেন, করোনাকালে মানবিক দিক বিবেচনা করে নদী থেকে বারকি নৌকা দিয়ে বালু পাথর উত্তোলনের সুযোগ করে দেওয়া উচিত।

বালু পাথর ব্যবসায়ী বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘দীর্ঘদিন যাবত বালু পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় ছোট বড় শতাধিক বালু পাথর ব্যবসায়ী এখন নিঃস্ব হওয়ার পথে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় তারা বালু পাথর সরবরাহ করতে পারছেন না। বকেয়া টাকাও তুলতে পারছেন না।

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল জানান, ইজারা না থাকা ও সারা দেশে বালু পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় নদী থেকে কেউ বালু পাথর উত্তোলন করতে পারছেন না। তারপরও স্থানীয় বারকি শ্রমিকদের ছোট নৌকায় করে বালু পাথর উত্তোলনের সুযোগ করে দিলে করোনাকালে তাদের আয়-রোজগারের পথ খোলা থাকতো।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদ্মাসন সিংহ বলেন, সারা দেশে বালু পাথর উত্তোলন বন্ধ। আমরা উত্তোলনের অনুমতি দিতে পারি না। বারকি শ্রমিকরা বিকল্প কর্মসংস্থান হিসেবে নদী থেকে কয়লা উত্তোলন করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারেন। 

/আরআইজে/এমএমজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পুরান ঢাকার কেমিক্যাল কারখানা সরাতে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ
পুরান ঢাকার কেমিক্যাল কারখানা সরাতে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ
ওরসে ঝগড়া, সেই শত্রুতায় ছুরিকাঘাতে যুবককে হত্যা
ওরসে ঝগড়া, সেই শত্রুতায় ছুরিকাঘাতে যুবককে হত্যা
ন্যাপ বাস্তবায়নে উন্নত দেশগুলোর প্রতি পর্যাপ্ত সহায়তার আহ্বান
ন্যাপ বাস্তবায়নে উন্নত দেশগুলোর প্রতি পর্যাপ্ত সহায়তার আহ্বান
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা