X
মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫
১৭ আষাঢ় ১৪৩২

ম্যাঙ্গো ট্রেন বদলে ‘ক্যাটল স্পেশাল’

রাজশাহী প্রতিনিধি
১৮ জুলাই ২০২১, ১৪:১৯আপডেট : ১৮ জুলাই ২০২১, ১৪:১৯

আম চাষিদের জন্য রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ‘ম্যাঙ্গো স্পেশাল’ ট্রেন চালু করা হয়েছিল। কিন্তু আমের মৌসুম শেষ হয়ে আসায় শুক্রবার (১৬ জুলাই) থেকে ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে ওই ট্রেনকে শনিবার (১৭ জুলাই) থেকে ‘ক্যাটল স্পেশাল’ ট্রেন হিসেবে চালু করা হয়েছে। চলবে ১৯ জুলাই পর্যন্ত।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা (ডিসিও) নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, শুক্রবার সাত হাজার ৭৩১ কেজি আম নিয়ে এবারের মৌসুমে শেষবারের মতো ‘ম্যাঙ্গো স্পেশাল’ ট্রেন রওনা হয়েছিল চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে। কিন্তু আমের বুকিং কমে আসায় আমরা ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেনটি বন্ধ করে দিয়েছি। সেই ট্রেনটির নাম পরিবর্তন করে কিছু ওয়াগন সংযোজন ও ওয়াগনের ভেতরে পশু নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা তৈরি করে শনিবার (১৭ জুলাই) থেকে ‘ক্যাটল স্পেশাল’ চালু করেছি। 

তিনি বলেন, প্রথম দিন ১০০টি গরু ও ১০০টি ছাগল এই ক্যাটল স্পেশাল ট্রেনে ঢাকায় পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। রবিবার দুপুর পর্যন্ত রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন থেকে একটি ওয়াগন ও আড়ানি স্টেশন থেকে একটি ওয়াগন পশু পরিবহনের জন্য বুকিং করা হয়েছে। এছাড়া এখন পর্যন্ত আর অন্য কোনও স্টেশন থেকে বুকিং হয়নি।

উল্লেখ্য, স্বল্প খরচে ঢাকায় আম নিয়ে যেতে গত ২৭ মে চালু হয় ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন। শনিবার ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন চলেনি। একই ট্রেন নাম বদলে হয়ে যায় ক্যাটল স্পেশাল। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে চারটি ওয়াগনসহ ট্রেনটি রাজশাহী আসে। এরপর এতে আরও চারটি ওয়াগন যুক্ত হয়ে যায়। আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে স্বল্প ভাড়ায় ঢাকায় কোরবানির পশু পরিবহনের জন্য এই ট্রেন চালুর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। তবে কোরবানির ঈদের একেবারেই শেষ মুহূর্তে এসে ট্রেনটি চালু করা হলো। এতে ব্যবসায়ীরা প্রকৃতসুফল পাননি বলে অভিযোগ করেছেন।

গরু ব্যবসায়ীরা বলেন, আরও আগে ট্রেনটি চালু করলে ভালো হতো। তবে ট্রেনের চেয়ে ট্রাকে গরু পরিবহনেই ভোগান্তি কম। কারণ, ট্রাকে হাট পর্যন্ত যাওয়া যায়। ট্রেনে গেলে প্রথমে গরু ট্রাকে নিয়ে স্টেশনে যেতে হবে। তারপর ঢাকায় নেমে আবার ট্রাকে তুলে হাটে যেতে হবে।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, বিকাল সাড়ে ৪টায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ছেড়ে ট্রেনটি আমনুরা বাইপাস, কাঁকনহাট, রাজশাহী, হরিয়ানা, উল্লাপাড়া, জয়দেবপুর, ধীরাশ্রম, টঙ্গী ও তেজগাঁও স্টেশনে যাত্রাবিরতি করবে। রাজশাহী রেলস্টেশন থেকে ছাড়ছে সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটে।

ট্রেনটির একটি ওয়াগনের ভাড়া ১১ হাজার ৮৩০ টাকা। এতে ২০টি গরু পরিবহন করা যাবে। কারও ২০টি গরু না থাকলে কয়েকজন ব্যবসায়ী একসঙ্গে অথবা কয়েকজন খামারি একসঙ্গে ওয়াগন ভাড়া নিতে পারবেন। এতে প্রতিটি গরুর জন্য রাজশাহী থেকে ভাড়া পড়বে ৫৯১ টাকা ৫০ পয়সা।

কোরবানির পশু পরিবহনে প্রতিটি ওয়াগনের স্টেশন অনুযায়ী ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকার তেজগাঁও প্রতি ওয়াগনের ভাড়া ১১ হাজার ৮৩০ টাকা। একই ভাড়া কাঁকনহাট ও রাজশাহী স্টেশন থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত। এছাড়া চাটমোহর থেকে তেজগাঁও ৯ হাজার ২৩০ টাকা ও উল্লাপাড়া থেকে ৮ হাজার ৫৯০ টাকা নির্ধারণ করেছে রেলওয়ে।

ট্রাকের তুলনায় ওয়াগনে ভাড়া কম বলছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, ট্রাকে কোরবানির পশু পরিবহনে ঝুঁকি থাকে। সড়কে দীর্ঘ যানজটের কারণে পশু অসুস্থ হয়ে যায়। এছাড়া সড়ক দুর্ঘটনার শঙ্কা থেকে যায়। সেই দিক থেকে এই ধরনের ঝুঁকি নেই ট্রেনে।

প্রথম দিন শনিবার রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন থেকে চারটি কোরবানির গরু ঢাকায় স্বজনদের কাছে পাঠিয়েছেন এমদাদুল হক বাবু। তিনি জানান, তেজগাঁও স্টেশনে নামে গরুগুলো। প্রতিটি গরুর ভাড়া দিতে হয়েছে ৫৯১ টাকা ৫০ পয়সা। ট্রাকের তুলনায় ভাড়া কম। তবে ট্রেনে গরু অসুস্থ ও সড়ক দুর্ঘটনার শঙ্কা নেই চললেই চলে।

শ্রীরামপুরের গরুর খামারি শামিম মুন্সী জানান, ট্রেনে দুটি ওয়াগনে ৪০টি করে গরু নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি গরুর জন্য ভাড়া নেওয়া হয়েছে ৫৯১ টাকা ৫০ পয়সা। এতে করে টাকা সাশ্রয়ী হয়েছে। এই মুহূর্তে মহাসড়কে যে পরিমাণ যানজট তাতে ট্রাকে পশু বহন করে যথাসময়ে ঢাকা নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। সহজ বাহন হিসেবে ট্রেনকে বেছে নেওয়া হয়েছে। সরকার এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়ায় খামারিরা লাভবান হয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলওয়ের সহকারী স্টেশন মাস্টার ওবাইদুল্লাহ জানান, ক্যাটল ট্রেনে গরু পাঠানোর জন্য ব্যবসায়ীদের আগ্রহ বাড়াতে বিভিন্ন খামারি ও ব্যবসায়ীদের উদ্বুদ্ধ করা হয়েছিল। তারা এতে সাড়া দেওয়ায় প্রথম দিন শনিবার চার জন খামারি ও ব্যবসায়ীর ৮০টি গরু ও চারটি ছাগল ট্রেনে ঢাকায় গেছে। প্রতিটি গরু বহনে ৫৯১ টাকা এবং ছাগল বহনে ২৪৬ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। ৮০টি গরুতে টার্মিনাল চার্জ ও অতিরিক্ত চার্জসহ সবমিলিয়ে ৪০ হাজার ২৪৬ টাকা আয় হয়েছে।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক মিহির কান্তি গুহ জানান, করোনাকালে প্রান্তিক খামারিদের জন্য স্বল্প খরচে ঢাকায় কোরবানির পশু পরিবহন সরকারের ভালো উদ্যোগ। এই লক্ষ্যে প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়েছিল। আগামীতে আরও বড় পরিসরে কোরবানির পশু পরিবহনের লক্ষ্যে কাজ করা হবে বলে জানান তিনি।

 

/এএম/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
হলি আর্টিজান হামলা: যেসব কারণে হাইকোর্টে আসামিদের সাজা কমলো
হলি আর্টিজান হামলা: যেসব কারণে হাইকোর্টে আসামিদের সাজা কমলো
যুদ্ধবিরতির আলোচনার মধ্যেই গাজার একাধিক স্থানে ইসরায়েলি হামলা, নিহত ৯৫
যুদ্ধবিরতির আলোচনার মধ্যেই গাজার একাধিক স্থানে ইসরায়েলি হামলা, নিহত ৯৫
ফেনীতে অস্ত্রসহ ছাত্রদলের সাবেক দুই নেতা আটক
ফেনীতে অস্ত্রসহ ছাত্রদলের সাবেক দুই নেতা আটক
ন্যায়সঙ্গত ও টেকসই জ্বালানি রূপান্তর জরুরি
ন্যায়সঙ্গত ও টেকসই জ্বালানি রূপান্তর জরুরি
সর্বাধিক পঠিত
তিন বিমানবন্দরে ১৬ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ হচ্ছে
তিন বিমানবন্দরে ১৬ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ হচ্ছে
সঞ্চয়পত্রে কমলো মুনাফার হার, কার্যকর ১ জুলাই থেকে
সঞ্চয়পত্রে কমলো মুনাফার হার, কার্যকর ১ জুলাই থেকে
রূপপুর প্রকল্পের ১৮ প্রকৌশলী অপসারণ: হাইকোর্টের রুল
রূপপুর প্রকল্পের ১৮ প্রকৌশলী অপসারণ: হাইকোর্টের রুল
ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিবারের ব্যাংক হিসাব জব্দ
ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিবারের ব্যাংক হিসাব জব্দ
ফেসবুকে পাল্টাপাল্টি স্ট্যাটাস উপদেষ্টা আসিফ ও সাংবাদিক জুলকারনাইনের
ফেসবুকে পাল্টাপাল্টি স্ট্যাটাস উপদেষ্টা আসিফ ও সাংবাদিক জুলকারনাইনের