X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রশ্নফাঁসে গ্রেফতার ভাইস চেয়ারম্যান রূপাকে বগুড়া আ.লীগ থেকে অব্যাহতি

বগুড়া প্রতিনিধি
২৩ জানুয়ারি ২০২২, ২১:২৯আপডেট : ২৩ জানুয়ারি ২০২২, ২১:৫২

ঢাকায় হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসে জড়িয়ে গ্রেফতার হওয়া মাহবুবা নাসরীন রূপাকে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক আল রাজি জুয়েল রবিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে তাকে পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন।

আল রাজি জুয়েল বলেন, দুপচাঁচিয়া উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রূপা কখন ও কোথায় আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য পদ পেয়েছেন; সে সম্পর্কে আমাদের কিছুই জানা নেই। তার বিরুদ্ধে কেন্দ্র থেকে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

রূপা গ্রেফতার হওয়ার বিষয়টি নিয়ে বগুড়া শহর ও তার গ্রামের বাড়ি দুপচাঁচিয়া উপজেলায় ব্যাপক আলোচনা চলছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছাত্রলীগ ইডেন কলেজ শাখার সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক, বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও দুপচাঁচিয়া উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুবা নাসরীন রূপা দুপচাঁচিয়া উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত ভুঁইপুর গ্রামের মৃত আতাউর রহমানের মেয়ে। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে তিনি বড়। বাবা আতাউর রহমান দীর্ঘদিন ঢাকায় বেসরকারি অফিসের নিরাপত্তা প্রহরীর চাকরি করতেন। গ্রামে প্রাথমিক শিক্ষা শেষে ঢাকায় বাবার কর্মস্থলে লেখাপড়া করেন। ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন রূপা। ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে তিনি হঠাৎ ঢাকা থেকে দুপচাঁচিয়ায় এসে ১৪ দল মনোনীত জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য প্রার্থীর পক্ষে গণসংযোগে নামেন। ২০১৯ সালের মার্চে উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়ার পর এলাকায় তার পরিচিতি প্রকাশ পায়। ঢাকার ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক পরিচয়ে তিনি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের আশীর্বাদ নিয়ে নির্বাচনে মাঠে নামেন। সরকারি দলের পরিচয় দিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে বেশ কয়েকজন নারী প্রার্থীকে হারিয়ে তিনি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। নির্বাচিত হওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই তার বাবা মারা যান।

এরপর শুরু হয় উপজেলা আওয়ামী লীগের নেত্রী পরিচয়ে বিভিন্ন দফতরে তার দাপট। নির্বাচনে জিতে শপথ গ্রহণের পর উপজেলা পরিষদের প্রথম মিটিংয়ে তিনি আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের ইশারায় উপজেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান-১ নির্বাচিত হন। তিনি ভুঁইপুর গ্রামে না থেকে চাচা দেলোয়ার হোসেনের গোবিন্দপুরের পালিমহেশপুর গ্রামে থাকতেন। চাচার বাড়িতে থেকেই তিনি ভাই রকিবুল হাসান রকিকে সঙ্গে নিয়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাকর্মী জানান, সরকারের ও দলের শীর্ষ কয়েকজনের সঙ্গে থাকা ছবি দেখিয়ে তিনি এলাকায় প্রভাব সৃষ্টি করেন। তার হস্তক্ষেপে অনুপ্রবেশকারী নেতাদের নিয়ে দুপচাঁচিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করা হয়েছে।

রূপার চাচা সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন বলেন, দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় ঢাকার জিরানী বাজার এলাকায় একজনের সঙ্গে রূপার বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের দেড় বছরের মাথায় তাদের বিচ্ছেদ হয়। বাবা-মা না থাকায় এবং ছোট বোন শিউলী স্বামীর বাড়িতে এবং ছোট ভাই রকি ঢাকায় লেখাপড়ার কারণে মাঝে মধ্যে রূপা আমার বাসায় অবস্থান করতো। তার বিষয়ে খারাপ কোনও কিছুই আমি আগে শুনিনি।

দুপচাঁচিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আমিনুর রহমান জানান, মাহবুবা নাসরীন রূপা দুপচাঁচিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য নন। তিনি কীভাবে জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য হলেন তা আমার জানা নেই।

তিনি বলেন, অপরাধ যেই করুক সেই অপরাধী, তার দায়ভার দল নেবে না। একই সঙ্গে তাকে দলের সব কর্মকাণ্ড থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে।

দুপচাঁচিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ফজলুর রহমান জানান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রূপা পরিষদের সকল কর্মসূচিতে সক্রিয়। এর আগে তার বিরুদ্ধে আমরা কোনও অভিযোগ পাইনি।

উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেন হেলাল জানান, ভাইস চেয়ারম্যান রূপার পারিবারিক অবস্থা ভালো নয়। এখানে কোনও জমিজমা বা চোখে পড়ার মতো কোনও সম্পদ নেই। বর্তমানে কালী মহেশপুর গ্রামের বাড়িতে আসা যাওয়া করেন।

বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক আল রাজি জুয়েল জানান, গণমাধ্যমে প্রচারিত ও প্রকাশিত সংবাদে ঢাকায় সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস ও জালিয়াতি চক্রের সঙ্গে রূপার জড়িত থাকার বিষয়টি দৃষ্টিগোচর হয়েছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক ও নিন্দনীয়। তার এমন কর্মকাণ্ডে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। তাই দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় মাহবুবা নাসরীন রূপাকে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তবে রূপা আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য পদ কোথায় পেয়েছেন সে প্রসঙ্গে দফতর সম্পাদক কিছু বলতে পারেননি।

স্থানীয় নেতারা বলছেন, রূপা দলের প্রাথমিক সদস্য না হলেও উচ্চ মহলের চাপে তাকে জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য পদ দেওয়া হয়।

 

 

/এএম/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!