কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে দলীয় পদযাত্রায় অংশ নেওয়া এক বিএনপি নেতাকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। মারধর থেকে বাঁচতে দৌড়ে পালিয়ে নিজ ঘরে আশ্রয় নিলে তার মেয়ে ঘরের দরজা আগলে রাখলে তাকেও থাপ্পড় মারার অভিযোগ উঠেছে। খবর পেয়ে পুলিশ ওই নেতাকে উদ্ধার করলে পুলিশের সামনেই মারধর করা হয়- এমন দাবিই করছে বিএনপির ওই নেতার পরিবার। পরে পুলিশ তাকে একটি চাকুসহ গ্রেফতার দেখান। তবে পরিবারের দাবি, ওই বাড়িতে কোনও চাকু ছিল না।
বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নাটোরের সিংড়ায় উপজেলার চৌগ্রাম ইউনিয়নের চৌগ্রাম স্কুল বাজার এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে। বিএনপি ওই নেতার নাম শাহজাহান আলী। তিনি চৌগ্রাম স্কুল অ্যান্ড কারিগরি কলেজের ল্যাব সহকারী ও ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক। তার মেয়ের নাম সাদিয়া।
ভুক্তভোগী সাদিয়া ও তার মায়ের দাবি, বুধবার সকালে শাহজাহান আলী স্কুলে স্বাক্ষর করে বাইরে বের হলে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক দফতর সম্পাদক রনি তাকে ডেকে পাশের চা দোকানে নিয়ে সঙ্গীয় লোকজনসহ মারধর শুরু করে। মারধর থেকে বাঁচতে তিনি দৌড়ে বাড়ি গেলে ওই যুবকরাও তারা পিছু ধাওয়া করে। মা-মেয়ে শাহজাহানকে একটি ঘরে ঢুকিয়ে দরজায় দাঁড়ালে ওই যুবকরা তাদের দরজা-জানালায় আঘাত করে খুলতে বলে। এ সময় সাদিয়া তার প্রতিবাদ করে দরজা খুলবে না জানালে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম ভোলার ভাগ্নে উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শিমুল তাকে থাপ্পড় দেয়।
তাদের দাবি, এরপর পুলিশ পৌঁছে শাহজাহানকে ঘর থেকে বের করলে পুলিশের সামনেই কিল-ঘুষি মারে ওই যুবকরা। এরপর ঘর থেকে একটি ড্যাগার পাওয়া গেছে জানিয়ে ওই অস্ত্র রাখার দায়ে তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।
এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব দাউদার মাহমুদ দাবি করেন, গত ১১ ফেব্রুয়ারি ইউনিয়ন বিএনপির পদযাত্রায় অংশ নেওয়ার কারণেই শাহজাহানকে মারধর করে ড্যাগার দিয়ে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া তার মেয়েকেও থাপ্পড় দেয়া হয়েছে- যা শাস্তিমূলক অপরাধ। ওই পদযাত্রায় অংশ নেওয়ায় ইতিমধ্যেই উপজেলার
স্থাপনদিঘীতে ওয়ার্ড যুবদলের সাধারণ সম্পাদক বাবুলকে মারধর করে তার কাপড়ের দোকান বন্ধ করেছে দিয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা।
ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মিন্টুর ধানের ঘর দাবি করেন, ছোট চৌগ্রামে ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি শাহীনের ওষুধের দোকান ছাড়াও সাধারণ সম্পাদক সাদেকুলের দোকানও বন্ধ করে দিয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। তিনি এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে গ্রেফতার শাহজাহানের নিঃশর্ত মুক্তি ও সব দমন পীড়ন বন্ধের দাবি জানান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিংড়া থানার ওসি মিজানুর রহমান দাবি করেন, শাহজাহানকে ড্যাগারসহ আটকের পর এসআই জোহা বাদী হয়ে মামলা করেছেন। এর বাইরে কোন মন্তব্য করতে চাননি তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চৌগ্রাম ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সুমন অভিযোগ শুনে হাসতে হাসতে দাবি করেন, ‘শাহজাহান বিএনপি জামাত করে।’ তিনি ওই সময় ঘটনাস্থলে ছিলেন না দাবি করে এই বিষয়ে জাহেদুল ইসলাম ভোলার সঙ্গে কথা বলতে বলেন।
ওই বিষয়ে জানতে জাহেদুল ইসলাম ভোলার নম্বরে বার বার কল করা হলেও রিসিভ করেননি। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস ঘটনা সম্পর্কে কিছু জানেন দাবি করে মন্তব্য করতে রাজি হননি।