X
বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫
১৯ আষাঢ় ১৪৩২

বগুড়ায় ৪ শ্রমিকের মৃত্যু: ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে মজুমদার প্রোডাক্টস লিমিটেড

বগুড়া প্রতিনিধি
২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:২০আপডেট : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:১৭

বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ছনকা এলাকার তেল প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান মজুমদার প্রোডাক্টস লিমিটেড ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে। ট্যাংক বিস্ফোরণে চার শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, মজুমদার প্রোডাক্টস লিমিটেডের ফায়ার সার্ভিসের হালনাগাদ লাইসেন্স নেই। ২০২২ সালের ২৩ এপ্রিলের পর থেকে পরিবেশ ছাড়পত্রের নবায়ন নেই।

চার জনের মৃত্যুর ঘটনায় রফতানিমুখী পণ্য ‘স্বর্ণা’ ব্র্যান্ডের চালের কুঁড়ার তেল প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ এনেছে তদন্ত কমিটি। তারা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়েরের সুপারিশ করেছে।

বুধবার শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুমন জেহাদীর কাছে প্রতিবেদন দাখিল করেছে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটির প্রধান ছিলেন শেরপুর উপজেলা প্রকৌশলী আবদুল মজিদ। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক মামুন-এ কাইয়ুম, শেরপুর থানার উপপরিদর্শক আমিরুল ইসলাম, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের শেরপুরের পরিদর্শক বখতিয়ার উদ্দিন এবং কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর বগুড়ার শ্রম পরিদর্শক (সাধারণ) সনজিত কুমার মহন্ত।

ইউএনও সুমন জেহাদী বলেন, ‘তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দাখিল করলেও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে দাফতরিক সভায় থাকার কারণে প্রতিবেদনে কী কী সুপারিশ করা হয়েছে, তা এখনও বিস্তারিত জানতে পারিনি। তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া সুপারিশ অনুযায়ী কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদনসহ চিঠি পাঠানো হবে।’

ইউএনও বলেন, কারখানার পরিবেশ ছাড়পত্র ছিল না। এ কারণে বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে কারখানার কার্যক্রম বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পরিবেশ অধিদফতর লিখিত নির্দেশ দিয়েছে। নির্দেশ অনুযায়ী শিগগির কারখানার কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হবে।

পাঁচ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ১২ সেপ্টেম্বর কারখানায় উৎপাদন চালু রেখে তেল মজুত রাখার ট্যাংকের ঢাকনা এবং তেলের লাইনের পাইপে ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করছিলেন শ্রমিকরা। ৬০ ফুট উচ্চতার ট্যাংকের অর্ধেক অংশে কুঁড়ার তেল এবং ফাঁকা অংশে অতিমাত্রার বিস্ফোরক জৈব যৌগ হেক্সিনের উপস্থিতি ছিল। ঝালাই কাজ করার সময় ঝালাইকাঠির স্পার্কিং বা অগ্নিস্ফুলিঙ্গ হেক্সিনের সংস্পর্শে এলে তৎক্ষণাৎ বিস্ফোরণ ঘটে এবং ট্যাংকটির ঢাকনা উড়ে যায়। এতে ট্যাংকের ওপরে থাকা চার জন ঝালাইশ্রমিক বিস্ফোরণে ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হন।

হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক শ্রমিকদের মৃত ঘোষণা করেন। নিহত শ্রমিকরা কারখানায় চুক্তিভিত্তিক ঝালাই কাজে নিয়োজিত ছিলেন। তবে কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের কোনও কাগজপত্র নেই। কারখানা চালু রেখে ঝালাইয়ের কাজের ঝুঁকি সম্পর্কে কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের কোনও সতর্ক করেনি। শ্রমিকদের তদারক করার কেউ সেখানে ছিলেন না। নিহত শ্রমিকদের শিল্পকারখানায় ঝালাইয়ের কাজে কোনও প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ ছিল না, চালু কারখানায় ঝালাইয়ের কাজের ঝুঁকি সম্পর্কেও যথেষ্ট জ্ঞান ছিল না। কাজ করার সময় শ্রমিকদের কাছে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সরঞ্জাম ছিল না বলেও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ঝালাইয়ের কাজে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সৈয়দপুরের এমজি মেটালের সঙ্গে কারখানা কর্তৃপক্ষের লিখিত কোনও চুক্তি ছিল না। কারখানা চালু রেখে তেল সংরক্ষণ ট্যাংকের ঢাকনা ও তেলের পাইপলাইন ঝালাইয়ের কাজে হেক্সিন জৈব যৌগের বিস্ফোরণের ঝুঁকির বিষয়ে আগে থেকে কোনো সতর্ক করা হয়নি। দুর্ঘটনা এড়াতে কারখানার উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়নি। এর দায় কোনোভাবেই কারখানা কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারে না। কারখানায় উৎপাদনপ্রক্রিয়া চালু রেখে পাইপলাইনে ঝালাইয়ের কাজ করার মাধ্যমে চার জন শ্রমিককে হত্যা করা হয়েছে। এ কারণে কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় মামলাসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা যেতে পারে।

প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, অবকাঠামোর নকশা ছাড়াই অবৈধভাবে এ কারখানা স্থাপন করে কুঁড়ার তেল উৎপাদনের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়েছে। ইউনিয়ন পর্যায়ে আবাসিক ভবন কিংবা বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের প্রয়োজন হলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ মোতাবেক উপজেলা পরিষদ থেকে নকশা অনুমোদনের প্রয়োজন; কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ অবকাঠামোর কোনো নকশা অনুমোদন নেয়নি। প্রচলিত আইন অনুযায়ী কলকারখানার নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করা ছাড়াও পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্রের মেয়াদ নবায়ন করার কথা। অদক্ষ জনবল দিয়ে কারখানা পরিচালনা করায় তাদের অবহেলার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। এ দুর্ঘটনার দায় কারখানা কর্তৃপক্ষ কোনোভাবে এড়াতে পারে না। ১৯৬ জন শ্রমিক-কর্মচারী নিয়োজিত এ কারখানায় ইটিপির অনলাইন মনিটরিং কার্যক্রম নেই। কারখানা থেকে তরল বর্জ্য পাইপের মাধ্যমে নদীতে ফেলে পানিদূষণ করা হচ্ছে। পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ছাড়াই অবৈধভাবে কারখানার কার্যক্রম চালিয়ে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি সাধন করা হচ্ছে।

তদন্ত প্রতিবেদনে কারখানা কর্তৃপক্ষের গাফিলতির বিষয়ে জানতে চাইলে মজুমদার প্রোডাক্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক চিত্ত মজুমদার বলেন, কারখানায় দৈনিক ৯০ মেট্রিক টন ও ৭০ মেট্রিক টন তেল উৎপাদনের জন্য দুটি ইউনিট রয়েছে। এসব ইউনিটে তেলের পাইপ ও তেল সংরক্ষণে ট্যাংকসহ আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি নিয়মিত মেরামতের জন্য এমজি মেটাল নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হয়। এ প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকেরা কারখানায় মেরামতের কাজ করছেন। কারখানা চালু রাখার বিষয়টি ওই প্রতিষ্ঠানকে অবহিত করা হয়েছিল। ঝালাইয়ের শ্রমিকদের সতর্ক করা এবং তাদের কাছে নিরাপত্তা সরঞ্জাম সরবরাহ করার দায়িত্ব ছিল এমজি মেটালের।

/এএম/
সম্পর্কিত
খুলনায় সড়ক দুর্ঘটনায় ২ জনের মৃত্যু
রাজধানীতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত দুই তরুণের পরিচয় মিলেছে
রাজধানীতে মাইক্রোবাস-মোটরসাইকেল সংঘর্ষে নিহত ২  
সর্বশেষ খবর
টিভিতে আজকের খেলা (৩ জুলাই, ২০২৫)
টিভিতে আজকের খেলা (৩ জুলাই, ২০২৫)
কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় এনসিপির তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ
কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় এনসিপির তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ
অনুদান কমিটি থেকে অভিনেত্রীর অব্যাহতি!
অনুদান কমিটি থেকে অভিনেত্রীর অব্যাহতি!
এনসিপির কার্যালয়ের সামনে আবারও ককটেল বিস্ফোরণ
এনসিপির কার্যালয়ের সামনে আবারও ককটেল বিস্ফোরণ
সর্বাধিক পঠিত
নবম পে-কমিশন গঠনের কার্যক্রম শুরুর আশ্বাস অর্থ উপদেষ্টার
সংযুক্ত কর্মচারী প‌রিষ‌দের জরু‌রি সভানবম পে-কমিশন গঠনের কার্যক্রম শুরুর আশ্বাস অর্থ উপদেষ্টার
বরখাস্ত হলেন সেই ম্যাজিস্ট্রেট তাবাসসুম ঊর্মি
বরখাস্ত হলেন সেই ম্যাজিস্ট্রেট তাবাসসুম ঊর্মি
পরীক্ষার প্রশ্নে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ, তদন্তে কমিটি
পরীক্ষার প্রশ্নে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ, তদন্তে কমিটি
কার দোষে শ্রমবাজার বন্ধ হয় জানালেন আসিফ নজরুল
কার দোষে শ্রমবাজার বন্ধ হয় জানালেন আসিফ নজরুল
কেমন কেটেছিল ডিবি হেফাজতে ছয় সমন্বয়কের সাত দিন
কেমন কেটেছিল ডিবি হেফাজতে ছয় সমন্বয়কের সাত দিন