বগুড়ার সোনাতলায় ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ৫৭৬ পরিবারের কার্ড গায়েব করার অভিযোগ উঠেছে। ডিলার প্রায় দুই মাস আগে স্মার্টকার্ড করে দেওয়ার নামে সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে কার্ডগুলো হাতিয়ে নেন। কার্ডধারীরা গত শুক্রবার মালামাল তুলতে গেলে জানতে পারেন তাদের কার্ড নেই। এরই মধ্যে নতুন তালিকা করে তা অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
এই খবরে তাদের মাঝে প্রচণ্ড ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। ভুক্তভোগীরা এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
জানা গেছে, সোনাতলা উপজেলার জোড়গাছা ইউনিয়নের প্রায় ১২ গ্রামের ৫৭৬ জনের তালিকা তৈরি করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের টিসিবি। গত ৫-৬ বছর ধরে কার্ডধারীদের মাঝে মালামাল বিক্রি করা হচ্ছিল। প্রায় দুই মাস আগে জোড়গাছা ইউনিয়নের কোড়াডাঙ্গা গ্রামের নুরুল ইসলাম নামে ডিলার কার্ডধারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি স্মার্টকার্ড দেওয়ার নামে সুবিধাভোগী ৫৭৬ জনের কাছ থেকে পুরাতন কার্ডগুলো জমা নেন। এরপর তাদের স্মার্ট কার্ড বা পুরাতন কার্ড ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি। এর মাঝে এক দফা জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে মালামাল সরবরাহ করা হয়েছে।
গত শুক্রবার সকালে জোড়গাছা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সুবিধাভোগীদের মাঝে টিসিবির মালামাল দেওয়ার কথা ছিল। কার্ডধারীরা উপজেলার চরপাড়া বাজারে মেসার্স মামা-ভাগ্নে ট্রেডার্সের মালিক জাকিরুল ইসলাম লিচুর গুদামে মালামাল তুলতে যান। কার্ড ছাড়া মালামাল দেওয়া হবে না জানানো হলে সুবিধাভোগীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে সুবিধাভোগীদের সঙ্গে টিসিবির মালামাল বিক্রেতাদের বাগবিতণ্ডা হয়। পরে তারা মালামাল না নিয়ে বাড়ি ফিরে যান।
গোসাইবাড়ি গ্রামের মুন্নু মিয়া (কার্ড নম্বর-০৫৪০), একই গ্রামের মমতাজ জাহান (কার্ড-০৫৩৭), বুলবুলি বেগম (কার্ড-১২৯৩), এরশাদ প্রামাণিক (কার্ড-১৪৪৯), কান্দুরা মিয়া (কার্ড-১০৭৬), মাছুমা বেগম
(কার্ড-০১৭১), রেজাউল করিম (কার্ড-০১৭৪) ও জহুরুল ইসলাম (কার্ড-১৬২৭), চরপাড়া গ্রামের আনোয়ারা বেগম (কার্ড-০৮৩৩), একই গ্রামের তবিবর বেপারি (কার্ড-০১৬২), ইশরত আলী প্রামাণিক (কার্ড-০৫৬৬) ও পিয়ারা বেগম (কার্ড-০৮২৬), উত্তর বয়ড়া গ্রামের লাকি বেগম (কার্ড-০৯৮০) ও একই গ্রামের বিলাল আকন্দ (কার্ড-০৩৫৯) জানান, ডিলার নুরুল ইসলাম প্রায় দুই মাস আগে তাদের স্মার্টকার্ড দেওয়ার নামে পুরাতন
কার্ডগুলো হাতিয়ে নেন। এরপর অনেক ধরনা দিলেও তিনি কার্ডগুলো ফেরত দেননি। এখন কার্ড ছাড়া টিসিবির মালামাল তুলতে গেলে তাদের ফেরত দেওয়া হচ্ছে। এ অবস্থায় তাদের বাজার থেকে চড়া দামে মালামাল কিনতে হচ্ছে। এতে তাদের খুব কষ্টে দিনাতিপাত করতে হয়।
অভিযোগ প্রসঙ্গে ডিলার নুরুল ইসলাম বলেন, নমিনিদের নাম অন্তর্ভুক্ত করতে কার্ডগুলো জমা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পর দুর্বৃত্তরা গুদামে হামলা করে মালামালসহ কার্ডগুলো পুড়িয়ে দেয়। ফলে সুবিধাভোগীদের কার্ডগুলো ফেরত দিতে ব্যর্থ হয়েছি।
জোড়গাছা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম রব্বানী বলেন, আমরা ইতোমধ্যে টিসিবির সুবিধাভোগীদের নতুন তালিকা প্রণয়ন করে তা অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি।
ভুক্তভোগীদের আগের কার্ডগুলো নেওয়ার অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, ‘নমিনিদের নাম অন্তর্ভুক্ত করতেই ডিলারকে কার্ডগুলো নিতে বলা হয়েছিল।’ তবে ওসব কার্ডধারীকে বাদ দিয়ে নতুন তালিকা তৈরির অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বলেন, ‘নতুন কার্ড এলে তা দেখা যাবে।’
সোনাতলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্বীকৃতি প্রামাণিক বলেন, নীতিমালা অনুযায়ী তালিকা পরিবর্তনের সুযোগ নেই। আগের তালিকাভুক্ত সুবিধাভোগীদের টিসিবির মালামাল দেওয়া হবে। এ ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।