বগুড়ার ধুনটে দুই ফ্রিল্যান্সারকে অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের মামলায় রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি, ডিবি) এক সাব-ইন্সপেক্টরসহ পাঁচ সদস্য ও সিভিল মাইক্রো ড্রাইভারের একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে।
তদন্তকারী কর্মকর্তা পাঁচ দিনের রিমান্ড চাইলে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট লোকমান হাকিম বৃহস্পতিবার দুপুরে শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
ঘটনার মূল হোতা ডিবি পুলিশের অপর কনস্টেবলের রিমান্ড শুনানি ঈদের পর অনুষ্ঠিত হবে। ধুনট থানার ওসি সাইদুল আলম ও কোর্ট ইন্সপেক্টর মোসাদ্দেক আলী এ তথ্য দিয়েছেন।
রিমান্ড মঞ্জুর হওয়া আসামিরা হলেন- সাময়িক বরখাস্ত হওয়া আরএমপি ডিবি পুলিশের এসআই শাহীন মোহাম্মদ অনু ইসলাম, কনস্টেবল রিপন মিয়া, কনস্টেবল আবুল কালাম আজাদ, কনস্টেবল মাহবুব আলম, কনস্টেবল বাশির আলী ও সিভিল মাইক্রো ড্রাইভার মেহেদী হাসান।
মামলা সূত্র ও পুলিশ জানায়, আরএমপি ডিবি পুলিশের কনস্টেবল ওহাব আলী বগুড়ার ধুনট উপজেলার চৌকিবাড়ি ইউনিয়নের দীঘলকান্দি গ্রামের আলতাব হোসেনের ছেলে। তার নিজ গ্রামের সেলিম শেখের ছেলে রাব্বি শেখ (১৯) ও একই গ্রামের মৃত শেরবান খাঁর ছেলে জাহাঙ্গীর খাঁ (২৪) ফ্রিল্যান্সার। কনস্টেবল ওহাব এদের দুজনকে ক্যাসিনো জুয়া ব্যবসায়ী হিসেবে অবিহিত করেন। তিনি সহকর্মীদের সঙ্গে এদের দুজনকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের পরিকল্পনা করেন।
আরএমপি ডিবি পুলিশের এসআই শাহীন মোহাম্মদ অনু ইসলামের নেতৃত্বে কনস্টেবল ওহাব আলী, কনস্টেবল রিপন মিয়া, কনস্টেবল আবুল কালাম আজাদ, কনস্টেবল মাহবুব আলম, কনস্টেবল বাশির আলী ও সিভিল মাইক্রো ড্রাইভার মেহেদী হাসান গত ২৩ মার্চ রাত সাড়ে ১১টার দিকে মাইক্রোবাসে বগুড়ার ধুনটের দীঘলকান্দি গ্রামে আসেন। তারা ফ্রিল্যান্সার রাব্বী ও জাহাঙ্গীরকে নিজ নিজ বাড়ি থেকে অপহরণ করে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। রাত ২টার দিকে তাদের পরিবারের কাছে মুক্তিপণ হিসেবে ১২ লাখ টাকা দাবি করা হয়। পরে বিকাশের মাধ্যমে তিন লাখ ৩০ হাজার টাকা নিয়ে তাদের শেরপুর উপজেলায় ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর ডিবি পুলিশের সদস্যরা মাইক্রোবাস নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। পরে ভুক্তভোগীদের স্বজনরা বিষয়টি ধুনট থানা ও হাইওয়ে পুলিশ কুন্দারহাট থানাকে অবহিত করেন।
এদিকে পুলিশ সদস্যরা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে হাইওয়ে পুলিশ কুন্দারহাট থানার ওসি মনোয়ারুজ্জামানের নেতৃত্বে টহল পুলিশ বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার খরনা ইউনিয়নের বীরগ্রাম বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ধাওয়া করে মাইক্রোবাসটি থামায়। এরপর আরএমপি ডিবি পুলিশের এসআই শাহীন মোহাম্মদ অনু ইসলাম, কনস্টেবল ওহাব আলী, কনস্টেবল রিপন মিয়া, কনস্টেবল আবুল কালাম আজাদ, কনস্টেবল মাহবুব আলম, কনস্টেবল বাশির আলী ও সিভিল মাইক্রো ড্রাইভার মেহেদী হাসানকে গ্রেফতার করা হয়। এর আগে কনস্টেবল ওহাব আলী সটকে পড়েন।
তাদের কাছে চাঁদাবাজির দুই লাখ টাকা, একটি ওয়াকি-টকি একটি হ্যান্ডকাফ, ডিবির পোশাক, পরিচয়পত্র ও সাতটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। পরে আরএমপির কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান উল্লিখিত ছয় পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করেন।
এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী রাব্বীর বাবা সেলিম শেখ ছয় পুলিশ সদস্য ও গাড়ির চালকের বিরুদ্ধে ধুনট থানায় মামলা করেন। গ্রেফতার ছয় জনকে গত ২৪ মার্চ দুপুরে আদালতের মাধ্যমে বগুড়া জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা তাদের পাঁচ দিন করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে শুনানি শেষে আদালত কনস্টেবল ওহাব আলী বাদে পাঁচ পুলিশ ও ড্রাইভারের একদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
ধুনট থানার ওসি সাইদুল আলম জানান, মামলার পলাতক অপর আসামি ডিবির কনস্টেবল ওহাব আলীকে গত ২৫ মার্চ রাতে রাজশাহীর লক্ষ্মীপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। ঈদের পর রিমান্ড শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। তিনি আশা করেন, রিমান্ডে আনা পাঁচ পুলিশ সদস্যসহ ছয় জনের কাছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে।