বগুড়ার শেরপুরে পৃথক তিনটি সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা-মেয়েসহ তিন জন নিহত এবং পাঁচ জন আহত হয়েছেন। সোমবার ঈদের দিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এসব দুর্ঘটনা ঘটে। পাশাপাশি দুর্ঘটনায় নিহত একজনের লাশ দেখে প্রতিবেশী এক নারী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন- শেরপুর উপজেলার মহিপুর জামতলা এলাকার আমিনুল ইসলামের ছেলে শাহ আলম শরিফুল (৩৮), তার মেয়ে সেজদা আলম সামান্তা (৪) এবং একই উপজেলার বিশালপুর ইউনিয়নের পানিসারা গ্রামের ইন্দ্রজিৎ সরকারের ছেলে অলক সরকার (১৯)। অলক সরকারের লাশ বাড়িতে আনার পর বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে প্রতিবেশি চাচি সরজিৎ সরকারের স্ত্রী হৃদরোগী স্বপ্না রানী সরকার (৪২) দেখতে যান। ছিন্নছিন্ন লাশ দেখার পর স্বপ্না রানী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
পুলিশ ও নিহতদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বেলা সোয়া ২টায় উপজেলার মহিপুর জামতলা এলাকায় ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কে ঢাকাগামী একটি বাস একটি মোটরসাইকেলকে চাপা দেয়। এতে ওই মোটরসাইকেলের আরোহী ওই এলাকার শরিফুল ও তার মেয়ে সেজদা গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা বাবা-মেয়েকে হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক দুজনকেই মৃত ঘোষণা করেন।
শরিফুলের স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শরিফুল মোটরসাইকেলে তার মেয়ে ও মামা শ্বশুর বাবুল আকতারকে নিয়ে শেরপুর উপজেলার মহিপুর জামতলা এলাকায় ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক পার হওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় ঢাকাগামী একটি বাসের চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মোটরসাইকেলে চাপা দিয়ে পালিয়ে যান। স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক বাবা-মেয়েকে মৃত ঘোষণা করেন। বাবুল আকতার চিকিৎসাধীন আছেন।
এদিকে, উপজেলার বিশালপুর ইউনিয়নের পানিসাড়া গ্রামের অলক সরকার, জয়দেব সরকার ও শুভ সরকার তিন বন্ধু সোমবার সকালে মোটরসাইকেলে সিরাজগঞ্জের যমুনা নদীর পাড়ে বেড়াতে যাচ্ছিলেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শেরপুর উপজেলার বিশালপুর ইউনিয়নের ঝুপুনিয়া সেতুর মোড়ে বিশালপুর-মির্জাপুর সড়কে পৌঁছলে চালক নিয়ন্ত্রণ হারান। এতে মোটরসাইকেলটি সড়কের পাশে গাছে ধাক্কা লাগে। এতে তিন বন্ধু গুরুতর আহত হন। তাদের শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক অলক সরকারকে মৃত ঘোষণা করেন। জয়দেব সরকারের অবস্থার অবনতি হলে তাকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। শুভ সরকার শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
শেরপুর থানার ওসি শফিকুল ইসলাম পলাশ বলেন, ‘মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত অলক সরকারের লাশ বাড়িতে আনার পর বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে প্রতিবেশি চাচি হৃদরোগী স্বপ্না রানী সরকার দেখতে যান। ছিন্নছিন্ন লাশ দেখার পর স্বপ্না হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।’
অপরদিকে, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শেরপুরের মহিপুর ফায়ার সার্ভিসের সামনে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে ঢাকাগামী বাসের সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আসা প্রাইভেটকারের সংঘর্ষ হয়। এতে প্রাইভেটকারের সামনের অংশ দুমড়েমুচড়ে গিয়ে মো. লিখন (২৮) ও মো. জীবন (৩০) আহত হন। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তাদের উদ্ধার করে শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
শেরপুর হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির এসআই আবদুল খালেক ও শেরপুর থানার এসআই রবিউল ইসলাম দুর্ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তারা জানান, এ দুর্ঘটনার ব্যাপারে থানায় দুর্ঘটনাজনিত আইনে মামলা হয়েছে।