ঢাকার উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সুরাইয়া আক্তার রিশার হত্যাকারীকে ধরতে র্যা ব-পুলিশের সদস্যরা বিভিন্ন স্থানে যখন যৌথ অভিযান চালাচ্ছিল, ঠিক তখনই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে সুখবরটি দেন নীলফামারীর মাংস ব্যবসায়ী দুলাল।
বুধবার সকালে ডোমারের সোনারায় বাজারে এক যুবককে উদ্দ্যেশ্যহীনভাবে ঘোরাঘুরি করতে দেখে তার পরিচয় জানতে চান দুলাল। কিন্তু যুবকটি উল্টাপাল্টা জবাব দেয়। এতে আরও সন্দেহ হলে ওই যুবককে একটি চায়ের দোকানে নিয়ে নাস্তা খেতে দেন,এরমধ্যে পুলিশকেও খবর দেন দুলাল।
পরে পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা এসে গ্রেফতার করে ওবায়দুলকে। তখনই দুলাল জানতে পারেন, গ্রেফতার যুবকের নাম ওবায়দুল। সে ঢাকায় স্কুলছাত্রী রিশার হত্যাকারী।
এর আগে গত মঙ্গলবার রাতে ওবায়দুলকে ধরতে যৌথ অভিযান চালায় পুলিশ ও র্যা ব। অভিযানের পাশাপাশি স্থানীয় মানুষসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ওবায়দুলের ছবি বিতরণ করা হয়। পুলিশকে খবর দেওয়ার অনুরোধ করে পুলিশ ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান। স্থানীয়রা জানায়, ওই রাতে সোনারায় বাজারে অনেকে ওবায়দুলকে ঘোরাঘুরি করতে দেখেছে।
ডোমার উপজেলার সোনারায় বাজারে মাংসের ব্যবসা করেন দুলাল হোসেন (৪৫)।তার বাড়ি ডোমার উপজেলার হরিণচড়া ইউনিয়নের হরিণচড়া গ্রামে। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘সকালে বাজারে ওবায়দুলকে উদ্দেশ্যহীন ঘোরাঘুরি করতে দেখে আমার সন্দেহ হয়। পরে তাকে একটি চায়ের দোকানে বসিয়ে নাস্তা খেতে দিয়ে, তার পরিচয় জানতে চাই। কিন্তু তার কথাবার্তায় সন্দেহ হওয়ায় ডোমার থানায় খবর দেই। পরে পুলিশ ও র্যা ব এসে তাকে ধরে নিয়ে যায়।’
মাংস ব্যবসায়ী দুলাল জানান, পুলিশ গ্রেফতার করার পর জানতে পারি ওবায়দুল একজন খুনি। আরও জানতে পারি যে,রিশাকে ছুরিকাঘাত করে ওবায়দুল ঢাকা থেকে প্রথমে চলে আসে দিনাজপুরে তার বোনের বাড়িতে। সেখানে পুলিশের তাড়া খেয়ে চলে যায় ঠাকুরগাঁওয়ে। সেখান থেকে চলে আসে ডোমারে। ডোমারে তার আত্মীয় বা পরিচিত কেউ নেই। সম্ভবত সে ডোমারের সীমান্ত দিয়ে ভারতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল।’
এ বিষয়ে নীলফামারীর পুলিশ সুপার জাকির হোসেন খান বলেন, ‘বখাটে ওবায়দুলকে ধরতে র্যা ব-পুলিশের সদস্যরা যখন দিনরাত যৌথ অভিযান চালাচ্ছিল, তখন মাংস ব্যবসায়ী দুলাল ওবায়দুলকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দিয়ে প্রমাণ করেছেন, মানুষ এখন সচেতন হয়েছে।’
পুলিশ সুপার বলেন, ‘সমাজের সব মানুষ যদি দুলালের মতো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সাহায্য করে, তাহলে অপরাধীরা সমাজে লুকানোর জায়গা পাবেনা। ফলে সমাজ থেকে অপরাধ একেবারে নির্মূল করা যাবে।’
উল্লেখ্য, গত ২৪ আগস্ট দুপুরে পরীক্ষা শেষে স্কুল থেকে বেরিয়ে রিশা কাকরাইল ফুটওভার ব্রিজের ওপর ওঠে। এ সময় ওবায়দুল তাকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। গুরুতর অবস্থায় রিশাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২৮ আগস্ট (রবিবার) রিশা মারা যায়। এরপর রিশার মা তানিয়া হোসেন বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে রমনা মডেল থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় ওবায়দুলকে আসামি করা হয়।
/এপিএইচ/আপ-এইচকে/