X
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
১৭ বৈশাখ ১৪৩১

‘চোখ বেঁধে আটকে রেখেছিল, বুঝতে পারিনি কারা জড়িত’

জিল্লুর রহমান পলাশ, গাইবান্ধা
২১ জানুয়ারি ২০১৭, ১৫:৪৮আপডেট : ২১ জানুয়ারি ২০১৭, ১৫:৪৯

গাইবান্ধায় নিখোঁজ হওয়ার পর বাড়ি ফিরে আসা চার জন ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর আমাদের চোখ কাপড় দিয়ে বেঁধে ফেলা হয়। এরপর ছোট একটি ঘরে তাদের আটক করে রাখা হয়। হাতে হ্যান্ডকাফও লাগানো হয়েছিল। গত ১১ দিন ধরে এভাবেই পড়ে ছিলাম। ছেড়ে দেওয়ার সময়ও চোধ বাঁধা অবস্থায় রেখে যাওয়া হয়। বুঝতে পারিনি আসলে কারা এর সঙ্গে জড়িত।’ এভাবে কথাগুলো বলছিলেন ১১ দিন পর বাড়ি ফিরে আসা গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলার নলডাঙ্গা ইউনিয় আওয়ামী লীগ নেতা মাইদুল ইসলাম প্রিন্স ও যুবদল নেতা শফিউল ইসলাম শাপলা।

এর আগে ১০ দিন নিখোঁজ থাকার পর বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) ভোর রাতে একইভাবে সাদুল্যাপুর উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সহ-সভাপতি ও দামোদরপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মনোয়ারুল হাসান জীম মণ্ডল ও দামোদরপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাদেকুল ইসলাম সাদেককে রেখে যায় কয়েকজন। নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর শহরের মহাসড়কের পাশে ওই স্থান থেকে তারা নিজ মোটরসাইকেলে বাড়ি ফেরেন। তাদেরও উঠিয়ে নেওয়া হয়েছিল একই কায়দায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিচয়ে। তারাও তাদের অপহরণকারীদের চিনতে পারেননি।  নলডাঙ্গা রেল গেট থেকে প্রিন্সকে ও কাচারিবাজার এলাকা থেকে শাপলাকে তুলে নেওয়া হয়েছিল।

মাইদুল ইসলাম প্রিন্স সাদুল্যাপুর উপজেলার নলডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক। তার বাড়ি নলডাঙ্গার ইউনিয়নের প্রতাপ গ্রামে। তিনি প্রতাপ গ্রামের মৃত্যু মফিজল হকের ছেলে। এছাড়া শফিউল ইসলাম শাপলা নলডাঙ্গা ইউনিয়ন যুবদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক। তিনি নলডাঙ্গা ইউনিয়নের দশলিয়া গ্রামের আমিরুল ইসলামের ছেলে। 

বাড়ি ফেরার পর প্রিন্স সাংবাদিকদের বলেন, ‘নলডাঙ্গা রেলগেট এলাকা থেকে গত ১০ জানুয়ারি তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে মোটরসাইকেলসহ তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তার চোখ বেঁধে ফেলা হয়। ১১ দিন তার চোখ বাঁধাই ছিল। হাত-পায়ে ছিল হাতকড়া। চোখ বাঁধা অবস্থায়ই খাবার দেওয়া হতো। চোখ বাঁধা অবস্থায়ই তাদের একটি জায়গায় ছেড়ে দিয়ে চলে যায় কয়েকজন। এ কারণে ১১ দিন কোথায় ছিলেন তা জানতে পারেননি তিনি। এমনকি যারা তাদের আটক করে রেখেছিলেন তাদেরও চিনতে পারেননি।

শাপলা বলেন, ‘নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে আমাকে একটি ছোট ঘরে আটকে রাখা হয়েছিল। সেখানে  চোখ বাঁধা ও হাতে হ্যান্ডকাফ পড়ানো হয়েছিল। চোখ ও হাত বাধা অবস্থায়ই খাবার দেওয়া হতো। সারতে হতো টয়লেটের কাজও। তবে কোথায় কীভাবে ছিলাম তা জানতে পারিনি। তাদের কাউকে চিনতেও পারিনি। তবে আমাদের কোনও নির্যাতন বা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি।’

বৃহস্পতিবার মুক্তি পাওয়া জীম মণ্ডল বলেন, ‘গত ৯ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১০টার দিকে সাদুল্যাপুর-নলডাঙ্গা পাকা সড়কের লালবাজারের অদূরে ১০-১২ জন পথরোধ করে আমাদের মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। পরে একটি ছোট ঘরে আমাদের আটক করে রাখা হয়। প্রতিনিয়ত আমাদের খাবার দেওয়া হতো। এরমধ্যে একদিন অসুস্থ বোধ করলে ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধের ব্যবস্থাও করা হয়। তবে কোনোভাবেই তাদের চিনতে পারিনি।’

ছাত্রলীগ নেতা সাদেকুল ইসলাম সাদেক বলেন, ‘গত ১০ দিন ধরে একটি ছোট ঘরে আটক ছিলাম। সেখানে তিনবেলা খাবারও দেওয়া হতো। আমাদের কেন কী কারণে আটক করে রাখা হয়েছে এ বিষয়ে জানতে চেয়েছি। তবে কেউ কিছু জানায়নি।’

উদ্ধার হওয়া প্রিন্সের বড় ভাই নলডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও নলডাঙ্গা ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. তরিকুল ইসলাম নয়ন বলেন, ‘তাদের জনসম্মুখে দিনের বেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর বিভিন্নভাবে চেষ্টা চালিয়েও তাদের খোঁজ মেলেনি। এমনকি তুলে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে পুলিশ, র‌্যাবসহ সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা তাদের সম্পর্কে কোনও তথ্য দিতে পারেনি। পরে এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়।

তিনি আরও বলেন, ‘যদি তাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেও তুলে না নিয়ে যায় তাহলে কারা তাদের তুলে নিয়ে গেলো? আর কে বা কারা কী কারণে তাদেরকে হাতে হ্যান্ডকাফ ও চোখ বেঁধে রেখেছিল তা বোধগম্য নয়। তবে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের উচিত বিষয়টি খতিয়ে দেখা।’

সাদুল্যাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহারিয়ার খাঁন বিপ্লব বলেন, ‘এভাবে চারজন নেতাকে তুলে নিয়ে গিয়ে চোখ বেঁধে আটক করে রাখা বর্বরতা। যাদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয় তাদের ফিরিয়েও দেওয়া হলো। কিন্তু কেন কী কারণে কে বা কারা তাদের তুলে নিয়ে গিয়ে আটকে রাখে তা কোনোভাবেই স্পষ্ট নয়। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে দাবি কারা এভাবে এমন ঘটনা ঘটাচ্ছেন। তাদের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া উচিত। কারণ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী নিখোঁজের বিষয়টি বেশ উদ্বেগজনক। এমন ঘটনার পর অনেক নেতাকর্মীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।’

সাদুল্যাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরহাদ ইমরুল কায়েস জানান, চার নেতা নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় সাদুল্যাপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি হয়। এরপর বিভন্নভাবে তাদের উদ্ধারে তৎপর ছিল পুলিশ। অবশেষে দুজন অক্ষত অবস্থায় বাড়ি ফিরেছেন।

/এফএস/ 

আরও পড়ুন- 


ভুল চিকিৎসায় বাংলাদেশি শিশুর মৃত্যু, ৩ বছর পর ভুল স্বীকার ব্রিটিশ হাসপাতালের

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করছে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়
বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করছে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়
সিস্টেম লস কমাতে সার্বক্ষণিক ম্যাজিস্ট্রেট চায় পেট্রোবাংলা
সিস্টেম লস কমাতে সার্বক্ষণিক ম্যাজিস্ট্রেট চায় পেট্রোবাংলা
ছেলেবেলার ক্লাবের শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন রোনালদো
ছেলেবেলার ক্লাবের শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন রোনালদো
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে নাটকীয় উন্নতি হয়েছে: ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে নাটকীয় উন্নতি হয়েছে: ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
সর্বাধিক পঠিত
এসি কেনার আগে মনে রাখতে হবে এই ৭ বিষয়
এসি কেনার আগে মনে রাখতে হবে এই ৭ বিষয়
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
ফালুর বিরুদ্ধে দুদকের চার্জশিট অনুমোদন
ফালুর বিরুদ্ধে দুদকের চার্জশিট অনুমোদন