X
শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫
১৯ আষাঢ় ১৪৩২

তবে কি ভর্তি হয়ে ভুল করলাম?

বিপুল সরকার সানি, দিনাজপুর
৩০ জানুয়ারি ২০১৯, ২১:১৩আপডেট : ৩০ জানুয়ারি ২০১৯, ২১:৪৭

রাস্তায় হাঁটু গেঁড়ে কান ধরে মানববন্ধন (ছবি– প্রতিনিধি)

‘দীর্ঘ আড়াই মাস ধরে ক্লাস ও পরীক্ষা চালুর দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু শিক্ষকেরা বা প্রশাসন তা শুনছে না। বাবা-মা অনেক আশা নিয়ে লেখাপড়ার জন্য এখানে পাঠিয়েছেন; খরচ যোগাচ্ছেন। অথচ আমাদের শিক্ষাজীবনই এখন অন্ধকারের দিকে ধাবিত হচ্ছে। তবে কি এখানে ভর্তি হয়ে ভুল করলাম?’

বুধবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুর আড়াইটার দিকে দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি) ক্যাম্পাসে রাস্তায় হাঁটু গেঁড়ে বসে কান ধরে মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা। এসময় অনেকের হাতে রশিও দেখা যায়। অভিনব এই মানববন্ধনের কারণ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে এ মন্তব্য করেন  ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) অনুষদের লেভেল-৪, সেমিস্টার-২ এর ছাত্র সজীব চৌধুরী।

সজীব আরও বলেন, ‘দীর্ঘ আড়াই মাস ধরে আমাদের ক্লাস-পরীক্ষা হচ্ছে না। কবে হবে, তাও জানি না। এ অবস্থায় আমাদের আত্মাহুতি দেওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। আমরা আত্মাহুতি দিলে তার দায়ভার প্রশাসন ও শিক্ষকদেরই নিতে হবে।’

শুধু সজীব নয়; প্রায় একই ধরনের কথা বলেন বিশ্ববিদ্যালয়টির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই),বিজ্ঞান ও ফিশারিজ অনুষদের আরও অনেক শিক্ষার্থী।

অভিনব উপায়ে মানববন্ধনের কারণ প্রসঙ্গে সিএসই অনুষদের লেভেল-৪, সেমিস্টার-২ এর ছাত্র শামীম ইসলাম বলেন,‘এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়াটা জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ছিল। সেই ভুলের জানান দিচ্ছি হাঁটু গেড়ে কান ধরে মানববন্ধন করে।’

রাস্তায় হাঁটু গেঁড়ে কান ধরে মানববন্ধন (ছবি– প্রতিনিধি)

হাতে রশি কেন, জানতে চাইলে শামীম বলেন, ‘ক্লাস-পরীক্ষা চালু না হলে আমরা রশিতে ঝুলে ফাঁস নেবো। আর আমাদের আত্মহুতির জন্য দায়ী থাকবে প্রশাসন।’

মাহবুব নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘জীবনে হয়তো কোনও পাপ করেছি। আর তার প্রায়শ্চিত্ত করতে এসেছি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। শিক্ষক-প্রশাসন দ্বন্দের কারণে আমাদের ক্লাস-পরীক্ষা হচ্ছে না। এমনিতেই আমরা সেশনজটে পড়েছি। তার ওপর ক্লাস-পরীক্ষা না হওয়ায় আমাদের শিক্ষাজীবনই এখন অন্ধকারের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। প্রশাসন ও শিক্ষকেরা আমাদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে।’

এ শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘ক্লাস ও পরীক্ষা চালুর দাবিতে শিক্ষকদের পা-ধরেও কাজ হচ্ছে না, তাদের বিবেকবোধকে নাড়া দিতে পারছি না। কোনও দোষ না থাকলেও তাদের দ্বন্দ্বের কারণে আমাদের জীবনকে অন্ধকারের মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে তারা।’

ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রশাসন ও শিক্ষকদের দ্বন্দ্বে তারা শিক্ষাজীবন নিয়ে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন। শিক্ষকেরা শুধু নিজেদের দিকটাই বড় করে দেখছেন, শিক্ষার্থীদের কথা ভাবছেন না।

এদিকে, গতকাল মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৪টায় নিজ বাসভবনে নতুন পদোন্নতি পাওয়া আন্দোলনরত সহকারী অধ্যাপক, প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরাম, ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে বৈঠকে বসেন হাবিপ্রবি উপাচার্য প্রফেসর ড. মু. আবুল কাশেম। রাত ১২টা পর্যন্ত বৈঠক চললেও দীর্ঘ আড়াই মাস ধরে চলা সংকটের নিরসন হয়নি। ফলে আজ বুধবারও ক্লাস ও পরীক্ষা শুরু হয়নি।

রাস্তায় হাঁটু গেঁড়ে কান ধরে মানববন্ধন (ছবি– প্রতিনিধি)

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত সহকারী অধ্যাপকদের নেতৃত্বদাতা কৃষ্ণ চন্দ্র রায় বলেন, ‘ক্লাস-পরীক্ষা হচ্ছে না –এটা আমাদের জন্য দুঃখজনক। শিক্ষার্থীদের দেখে কষ্ট লাগে আমাদের। কিন্তু আমরা আমাদের মর্যাদার জন্য লড়াই করছি। এই জায়গা থেকে সম্মানজনক নিষ্পত্তি পাচ্ছি না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চেয়েছিলাম, মঙ্গলবারের বৈঠকেই সমাধান হোক। সব দাবি থেকে আমরা সরেও এসেছিলাম; একটামাত্র দাবিই তুলেছি। আর তা হলো রেজিস্ট্রারের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করতে হবে। কিন্তু প্রশাসন সেই সভাটি ভণ্ডুল করে দেয়। ফলে আমাদের সম্মানজনক নিষ্পত্তি হয়নি।’

হাবিপ্রবির প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরামের নেতা প্রফেসর ড. হারুন-উর-রশিদ বলেন, ‘মঙ্গলবার আমরা সমাধানের জন্য বসেছিলাম। কিন্তু প্রশাসনের কিছু শিক্ষকের জন্যই আলোচনাটি ভেস্তে যায়। এটি খুবই দুঃখজনক।’ সংকট সমাধান করে ক্লাস ও পরীক্ষা চালুর জন্য প্রশাসনের প্রতি তিনি আহ্বান জানান।

এ ব্যাপারে হাবিপ্রবির রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. সফিউল আলম বলেন, ‘একাধিকবার আলোচনার পরও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। এরপরও আলোচনা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়গুলো তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে কমিটি প্রতিবেদন জমা দেবে, এরপরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ তবে এর আগেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস ও পরীক্ষা শুরু হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

উল্লেখ্য, গত ১৪ নভেম্বর থেকে বেতন বৈষম্য দূরীকরণ, সহকারী অধ্যাপকদের লাঞ্ছিত ও নারী শিক্ষিকাদের শ্লীলতাহানিকারীদের বিচার, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর-রেজিস্ট্রার-ছাত্র উপদেষ্টাকে বহিষ্কার ও দুই সহকারী অধ্যাপকের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলন করে আসছেন নতুন পদোন্নতি পাওয়া সহকারী অধ্যাপকেরা। তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরামও। এতে গত আড়াই মাস ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমে সৃষ্টি হয়েছে অচলাবস্থার।

 

/এমএ/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
হাসপাতালের বারান্দায় দুই প্রসূতির সন্তান প্রসব, এক নবজাতকের মৃত্যু
হাসপাতালের বারান্দায় দুই প্রসূতির সন্তান প্রসব, এক নবজাতকের মৃত্যু
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সীসা কারখানায় অভিযান, তিন চীনা নাগরিকসহ ৬ জনকে কারাদণ্ড
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সীসা কারখানায় অভিযান, তিন চীনা নাগরিকসহ ৬ জনকে কারাদণ্ড
পাবনায় দুই শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে যুবক গ্রেফতার
পাবনায় দুই শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে যুবক গ্রেফতার
জাপার অফিস ভাঙচুর: নুরসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা নিতে বললেন আদালত
জাপার অফিস ভাঙচুর: নুরসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা নিতে বললেন আদালত
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ মাকে পিটিয়ে হত্যা
মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ মাকে পিটিয়ে হত্যা
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল
বাংলাদেশের মেয়েদের সামনে রয়েছে বিশ্বকাপে খেলার হাতছানিও!
বাংলাদেশের মেয়েদের সামনে রয়েছে বিশ্বকাপে খেলার হাতছানিও!