মৌসুম শুরুর আগেই টাকা এসেছিল কৃষকের ঘরে। যখন ধানের দাম না পেয়ে কৃষকের বিবর্ণ মুখ দেখা যায়, ঠিক তখন উল্টো ছবি দেখা গেছে ঠাকুরগাঁওয়ের আগাম আলু চাষিদের ক্ষেত্রে। গ্রানোলা, কাঠিলাল, এসটেরিক্স, ডায়মন্ডসহ বিভিন্ন জাতের আগাম আলু চাষ করে লাভবান হয়েছেন তারা। তবে কৃষকের অভিযোগ, কৃষি বিভাগ থেকে তেমন সহযোগিতা পাননি তারা। কৃষি বিভাগ বলেছে, সবাইকে সমানভাবে পরামর্শ ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।
চলতি মৌসুমে জেলার বালিয়াডাঙ্গী, হরিপুর, রাণীসংকৈল, পীরগঞ্জ ও সদর উপজেলায় আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে ২৩ হাজার ৫২৮ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। আর আলু চাষ হয়েছে ২৫ হাজার ৩০ হেক্টর জমিতে। বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ২০-২৫ টাকা দরে। ব্যবসায়ীরা ক্ষেত থেকেই আলু কিনছেন ১৫-১৭ টাকা দরে। এবার আলু চাষ করে বিঘা প্রতি লাভ হয়েছে ৪০-৫০ হাজার টাকা।
নারগুন এলাকার আলু চাষি খবির উদ্দিন বলেন, ‘৭৫ শতক জমিতে আগাম আলু চাষ করতে আমার খরচ হয়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। আর আলু বিক্রি করেছি ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকার।’
একই এলাকার খায়রুল ইসলাম জানান,তিনি চুক্তি নিয়ে সাড়ে ৮ একর জমিতে আলু চাষ করেছেন। এর মধ্যে আড়াই একর জমিতে আগাম আলু চাষ করেছেন। যা থেকে লাভ হয়েছে প্রায় আড়াই লাখ টাকা। বাকি আলু মৌসুমের, যার কিছুটা বীজ আর কিছু বেশি দামের আশায় কোল্ড স্টোরে সংরক্ষণ করবেন। গড়েয়ারের কৃষক আব্দুল আউয়াল জানান, ঘন কুয়াশার কারণেআগাম আলু রোগে আক্রান্ত হয়। তারপরও ফলন ভালো হয়েছে এবং বাজার দামও ভালো ছিল। আল চাষ করে এবারের মতো আগে কখনোই লাভবান হননি।
আলু চাষি লাভলুর অভিযোগ, কৃষি বিভাগ কখনই তার কাছে আসেনি। তবে নিজের অভিজ্ঞতা ও কীটনাশক দোকানদারের পরামর্শে প্রয়োজনীয় সার-কীটনাশক সঠিক সময়ে প্রয়োগ করে তিনি ভালো ফলন ও দাম পেয়েছেন।
কৃষকদের পাশাপাশি আলু ক্ষেতে কাজ করা শ্রমিকরাও তুলনামূলক বেশি মজুরি পেয়েছেন। সদর উপজেলার গৌরিপুরের কৃষি শ্রমিক আনসারুল জানান, আগাম আলুতে লেবার বেশি লাগে। কারণ স্বাভাবিক মৌসুমের চাইতে এ আলুতে কীটনাশক স্প্রেসহ যত্ন নিতে হয় বেশি। তাই বড় বড় আলুর প্রজেক্টে তাদের কাজ ছিল, আর মজুরিও গত বছরের তুলনায় বেশি। আলু তোলার মজুরিও কিছুটা বেশি ছিল।
আলু কিনে দেশের বিভিন্ন মোকামে পাঠাচ্ছেন বলে জানালেন আলু ব্যবসায়ী সোহরাব আলী। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা হলেও ঢাকা,চট্টগ্রাম,কুমিল্লা,নোয়াখালীর বিভিন্ন আড়তে তিনি আলু পাঠান।
আলুর আরেক পাইকার আসলাম জানালেন, অন্যান্য বারের মতো আলুর ট্রাক লোড দিতে তাদের বেশি দেরি হয়নি। কারণ আলুর ভালো আমদানি ছিল।
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক এই কর্মকর্তা আনিসুর রহমান জানান, গত দুই তিন বছরের তুলনায় এবার আলুর আবাদ বেশি হয়েছে এবং দামটাও ভালো পাচ্ছেন চাষিরা। এই অবস্থা থাকলে আগামীতে আলুর আবাদ আরও বাড়বে।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষ্ণ রায় বলেন, আলু আবাদের জন্য সরকারি কোনও ভুর্তকি বা বিশেষ সহযোগিতা ছিল না। তবে তারা মাঠ ঘুরে ঘুরে কৃষকদের পর্যাপ্ত সহযোগিতা, প্রযুক্তিগত পরামর্শ দিয়েছেন। কৃষকদের কাছে না যাওয়া বা কোনোরকম অবহেলার কথা অস্বীকার করেন।