দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার আলিহাট ইউনিয়নের তুলসীগঙ্গা নদীর ওপর সেতু না থাকায় ভোগান্তি পোহাচ্ছেন তিন গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষজন। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় সেখানে কাঠের সাঁকো নির্মাণ করেছেন এলাকাবাসী। কিন্তু সেটিও জরাজীর্ণ। ফলে সাঁকোর ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে স্থানীয়রা। দুর্ভোগ লাঘবে সেতু নির্মাণের দাবি তাদের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আলিহাট ইউনিয়নকে বিভক্ত করেছে তুলসীগঙ্গা নদী। এই নদীর একপাশে কাশিয়াডাঙ্গা গ্রাম অপরপাশে বাঁশমুড়ি ও ডুগডুগী। তিন গ্রামের পাশাপাশি ঘোড়াঘাট ও পাঁচবিবি উপজেলার কয়েক গ্রামের মানুষ এই নদী পারাপার হন। শুষ্ক মৌসুমে কোনোমতে পার হতে পারলেও বর্ষায় নৌকাই ভরসা। এতে হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া, জমি থেকে ধান কেটে নেওয়া এবং স্কুলে যেতে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। নৌকায় নদী পাড়ি দিতে বিভিন্ন সময় ঘটে দুর্ঘটনা।
সমস্যা সমাধানে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের প্রতিশ্রুতি মিলেছে বারবার। কিন্তু আজো প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন হয়নি। এজন্য প্রতিশ্রুতি নয় এবার সেতু নির্মাণের দাবি স্থানীয়দের। সেতু হলে কয়েক হাজার মানুষের যাতায়াতের যেমন সুবিধা হবে তেমনি জীবনযাত্রার উন্নয়ন হবে।
কাশিয়াডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা ওসমান আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘স্থানীয়দের দুর্ভোগ নিরসনে স্থানীয় যুবসমাজকে সঙ্গে নিয়ে কাঠ ও বাঁশ দিয়ে সাঁকো করেছিলাম। কাঠের সাঁকো এক থেকে দুই বছর স্থায়ী হয়। এখানে একটি সেতু দরকার। স্থানীয় এমপি ও চেয়ারম্যান-মেম্বার বারবার প্রতিশ্রুতি দিলেও সেতু হয়নি। আমরা একটি সেতু চাই।’
একই গ্রামের বাসিন্দা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘সেতু না হওয়ায় তিন গ্রামের মানুষের যাতায়াতে ভোগান্তিতে পোহাতে হয়। গ্রামের ছেলেমেয়েদের নদী পার হয়ে পার্শ্ববর্তী স্কুলে যেতে হয়। ছেলেমেয়েরা সবসময় যেতে পারে না। অনেক সময় নৌকা ডুবে দুর্ঘটনা ঘটে। সেতু হলে সবার উপকার হবে।’
স্থানীয় বাসিন্দা মকবুল হোসেন বলেন, ‘সেতু না থাকায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকা ঘুরে যাতায়াত করতে হয়। সেতু হলে যাতায়াতের পথ এক কিলোমিটার। যেখানে খরচ হতো ১০ টাকা সেখানে হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা। বর্ষা মৌসুমে যানবাহনে যাতায়াত করা যায় না। ভোগান্তি পোহাতে হয়।’
স্থানীয় আরেক বাসিন্দা নাজমা বেগম বলেন, ‘চলাচলে খুব কষ্ট হয় আমাদের। সেতু হবে হবে বলে কত বছর কেটে গেলো। আজো হয়নি।’
ওই গ্রামের স্কুলছাত্র আব্দুর রহমান জানায়, কাঠের সাঁকো দিয়ে নদী পার হয়ে স্কুলে যেতে ভয় লাগে। বর্ষাকালে দুই পাশ ডুবে যায়। কাঠের সাঁকোর অনেক স্থান ভেঙে গেছে। সেতু হলে সুন্দরভাবে স্কুলে যেতে পারতাম।
এলাকাবাসী জানিয়েছেন, বর্ষাকালে বৃষ্টি হলে দুই পাড়ের মানুষের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। রোগী ও প্রসূতিদের হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা থাকে না। জমি থেকে ধান কেটে আনতে পারেন না কৃষকরা।
স্থানীয় ট্রাক্টরচালক খালেদ হোসেন বলেন, ‘এখন বৃষ্টি নেই। ফলে নদীতে পানি না থাকায় নিচ দিয়ে চলাচল করতে পারছি। বর্ষাকালে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ি। আমাদের দুর্ভোগের শেষ নেই।’
এ বিষয়ে আলিহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু সুফিয়ান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ইউনিয়নের দুটি ওয়ার্ডের মধ্যবর্তী স্থানে তুলসীগঙ্গা নদী। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এই পথ দিয়ে যাতায়াত করেন। সেতু না থাকায় কয়েক গ্রামের মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। সেতু নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে বারবার যোগাযোগ করছি। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলেছেন, টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। দ্রুত সময়ে সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হবে।’
তবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের হাকিমপুর উপজেলা প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সেতু নির্মাণের কাজের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। টেন্ডার হয়ে থাকলে জেলা অফিস থেকে হয়েছে। উনারা এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর দিনাজপুর কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী শহীদুজ্জামান মুন্সী বলেন, ‘একমাস হলো আমি এখানে যোগদান করেছি। তাই বিষয়টি আমার জানা নেই।’
হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নূর-এ আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মানুষের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে তুলসীগঙ্গা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর সেতু নির্মাণের জন্য ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার কাজ শুরু করেননি। বিষয়টি জেলা কমিটির পরবর্তী বৈঠকে উপস্থাপন করবো। যারা কার্যাদেশ পেয়েছেন তারা যেন দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ করেন সে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’