নীলফামারী সদর উপজেলার একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক একজন, নিরাপত্তা কর্মী একজন ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী তিন পদে নিয়োগে অর্ধ কোটি টাকার বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার সোনারায় ইউনিয়নের বেড়াকুটি কৈপাড়া শাপলা বালিকা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি অশ্বিনী কুমার বিশ্বাস ও প্রধান শিক্ষক মোকছেদুল শাহের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ তুলেছেন কয়েকজন পরীক্ষার্থী।
তারা বলছেন, নিয়োগ পরীক্ষার জন্য রাতে চিঠি দিয়ে পরের দিন সকালে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। আর এ কারণে তিন থেকে চার জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষাই দিতে পারেনি। আর যারা পরীক্ষা দিতে কেন্দ্রে উপস্থিত হয়েছিলেন, তাদেরও কয়েকজনকে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিতে দেননি বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক।
বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) পরীক্ষা শেষ করে ফিরে যাওয়ার সময় মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আলী শাহরিয়ার গাড়ি আটকে ধরেন পরীক্ষা দিতে না পারা পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা।
এসময় প্রতিষ্ঠানের সভাপতি অশ্বিনী কুমার বিশ্বাস এক চাকরিপ্রার্থী জীবন কুমার বিশ্বাসের গালে থাপ্পড় মারেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগকারী জীবন কুমার বিশ্বাস বলেন, আজ নিয়োগ পরীক্ষা, আর রাতে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের প্রবেশপত্র (চিঠি) পেয়েছি। আমি দিনাজপুরে লেখাপড়া করি, খবর পেয়ে রাতেই বাড়িতে আসি। সকালে পরীক্ষাকেন্দ্রে গেলে প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি আমাদের বেশ কয়েক জনকে পরীক্ষা দিতে বাধা দেন। আমি মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার স্যারের সামনে দাঁড়িয়েছি, আর স্কুলের সভাপতি আমার কানে থাপ্পড় মেরে মাটিতে ফেলে দেয়। এখন কানের সমস্যায় ভুগছি।
পরীক্ষা বাতিল করে পুনরায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে পরীক্ষা দিয়ে যোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়ারও দাবি করেন তিনি।
অপর এক প্রার্থীর অভিভাবক রাজেন কুমার বিশ্বাস বলেন, আমি প্রধান শিক্ষকের হাতে ৮ লাখ টাকা দিয়েছি। আমার ছেলের চাকরি হলে স্কুলের ভেতরে থাকা জমিও আমি লিখে দেবো কথা দিয়েছিলাম। পরে কী হলো জানি না, আমাকে টাকা ফেরত দিয়েছে। প্রধান শিক্ষকের মোবাইল নম্বর বন্ধ থাকায় আর যোগাযোগ করাও সম্ভব হয়নি।
এদিকে, পরীক্ষার্থী থাপ্পড় দেওয়ার অভিযোগ স্বীকার করে সভাপতি অশ্বিনী কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘সে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের সামনে দাঁড়িয়ে বেয়াদবি করছিল। তাই আমি থাপ্পড় মেরেছি।’
‘নিয়োগ বাণিজ্য’ হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি কৌশলে এড়িয়ে যান। তিনি বলেন, তারা কেন পরীক্ষা দিতে পারেনি, সে ব্যাপারে আমি কিছুই বলতে পারবো না। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বলতে পারবেন।
অপরদিকে, পরীক্ষার অনিয়ম, নিয়োগ বাণিজ্য ও স্কুল চলাকালীন সময় নিয়োগ পরীক্ষার বিষয়ে জানতে চাইলে কৌশলে এড়িয়ে যান প্রধান শিক্ষক মোকছেদুল শাহ।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আলী শাহরিয়ার বলেন, নিয়োগ পরীক্ষা আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। থাপ্পড়ের বিষয় আমি কিছুই বলতে পারবো না। কে পরীক্ষা দিলো, আর কে পরীক্ষা দিলো না; এ ব্যাপারেও আমি কিছুই বলতে পারবো না। সেটা স্কুল কর্তৃপক্ষই ভালো বলতে পারবেন। তাছাড়া শুনেছি, তারা ইচ্ছাকৃতভাবে পরীক্ষা দেয়নি।