X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

এক আঙিনায় মসজিদ-মন্দির

লালমনিরহাট প্রতিনিধি
২২ অক্টোবর ২০২৩, ২২:১৩আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০২৩, ২২:২৬

সারাদেশে উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপন করা হচ্ছে শারদীয় দুর্গাপূজা। পূজার উৎসবমুখরতার পাশাপাশি লালমনিরহাট হয়ে উঠেছে সম্প্রীতির উজ্জ্বল নিদর্শন। এক পাশে মন্দিরের ভেতরে-বাইরে চলছে পূজা-অর্চনা ও উলুধ্বনি। আরেক পাশে মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ছেন মুসল্লিরা। 

রবিবার (২২ অক্টোবর) দুপুরে লালমনিরহাট জেলা শহরের কালিবাড়ী এলাকায় পাশাপাশি শতবর্ষী মসজিদ-মন্দির প্রাঙ্গণে এ দৃশ্য দেখা যায়। ধর্মীয় সম্প্রীতির দেশে যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে; এর যথার্থই প্রমাণ পুরান বাজার জামে মসজিদ ও পুরান বাজার কালীবাড়ি দুর্গা মন্দির। এ যেন ধর্মীয় সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মসজিদ ও মন্দিরের দেয়াল একসঙ্গে লাগোয়া। মসজিদে আজানের সময় থেকে নামাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত মন্দিরের মাইক, ঢাকঢোলসহ যাবতীয় পূজা-অর্চনার কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখেন হিন্দু ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের লোকজন। নামাজ শেষ হলে মন্দিরের কার্যক্রম শুরু হয়। সুষ্ঠু ও শৃঙ্খলা বজায় রেখে একই উঠানে বছরের পর বছর ধর্মীয় রীতিনীতি পালন করে আসছেন উভয় ধর্মের মানুষজন।

স্থানীয়রা জানায়, ১৮৩৬ সালে দুর্গা মন্দির প্রতিষ্ঠার আগে এখানে কালী মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়। এ কারণে পুরান বাজার এলাকা অনেকের কাছে কালীবাড়ি নামে পরিচিত। মন্দিরের পাশে ১৯০০ সালে একটি নামাজের ঘর নির্মিত হয়। পরে নামাজের ঘরটি ‘পুরান বাজার জামে মসজিদ’ নামে পরিচিতি পায়। সকাল-সন্ধ্যা স্বাভাবিক নিয়মে চলে নামাজ ও পূজার আয়োজন। প্রতি বছর জাঁকজমক পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয় শারদীয় দুর্গোৎসব। কখনও চিড় ধরেনি সম্প্রীতির বন্ধনে।

কালিবাড়ী এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রহমান (৭৫) বলেন, ‘পাশাপাশি মসজিদ-মন্দির হলেও উভয় ধর্মের মানুষ সম্প্রীতির বন্ধনে থেকে স্ব স্ব ধর্ম পালন করে আসছেন। ধর্ম পালন নিয়ে কখনও কারও বাগবিতণ্ডা হয়নি। নিঃসন্দেহে এটি আমাদের জন্য গর্বের।’

জেলা শহরের কালিবাড়ী এলাকায় পাশাপাশি শতবর্ষী মসজিদ-মন্দির প্রাঙ্গণে সম্প্রীতির বন্ধনের দৃশ্য দেখা যায়

পুরান বাজার জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, ‘ঐতিহ্যবাহী পুরান বাজার মসজিদের পাশেই মন্দির। তবে মসজিদের আগে মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখানে হিন্দু-মুসলিম যার যার ধর্ম সে সে পালন করছে। উভয় ধর্মের লোকদের সমান সুযোগ দিয়ে সম্প্রীতির বন্ধন তৈরি করে ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করা হয়। তাই ধর্ম পালনে কারও কোনও সমস্যা হয় না। যুগ যুগ ধরে চলছে সম্প্রীতির এই বন্ধন।’

কেন্দ্রীয় কালীবাড়ি মন্দিরের সভাপতি ও প্রধান পুরোহিত শংকর চক্রবর্তী বলেন, ‘১৮৩৬ সালে দুর্গা মন্দির প্রতিষ্ঠার আগে এখানে কালী মন্দির প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় পুরান বাজার এলাকা অনেকের কাছে কালীবাড়ি নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। এরপর মন্দিরের পাশে ১৯০০ সালে নামাজ ঘর নির্মিত হয়। নামাজ ঘরটি পরবর্তীতে পুরান বাজার জামে মসজিদ নামে পরিচিতি পায়। কোনও ঝামেলা ছাড়াই সম্প্রীতির সঙ্গে ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি পালন করে আসছে দুই সম্প্রদায়ের মানুষজন। জন্মের পর থেকেই সম্প্রীতির এই বন্ধন দেখছি আমি।’

লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, ‘এখানকার মানুষ সব ধর্মের মানুষের সহাবস্থানে বিশ্বাসী।  যার যার ধর্ম সে সে পালন করছেন, কোনও সমস্যা হচ্ছে না কারও।’

লালমনিরহাটের পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘জেলায় এবার ৪৭৪টি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা চলছে। প্রতিটি পূজামণ্ডপের নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন পুলিশ ও আনসার সদস্যরা।’

/এএম/
সম্পর্কিত
পাগলা মসজিদের দানবাক্সে এবার মিললো রেকর্ড ৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকা
পাগলা মসজিদের দানবাক্সে এবার মিললো ২৭ বস্তা টাকা
আগুনে বিলীন ২৫০ মাদ্রাসাশিক্ষার্থীর পাঠকেন্দ্র
সর্বশেষ খবর
ইট-পাথরের নগরীতে একটুখানি প্রশান্তির খোঁজে
ইট-পাথরের নগরীতে একটুখানি প্রশান্তির খোঁজে
তাইওয়ানের কাছাকাছি আবারও সামরিক কার্যকলাপ চালালো চীন
তাইওয়ানের কাছাকাছি আবারও সামরিক কার্যকলাপ চালালো চীন
বাগেরহাটে ট্রাকচাপায় দুই ভাইসহ ৩ ভ্যানযাত্রী নিহত
বাগেরহাটে ট্রাকচাপায় দুই ভাইসহ ৩ ভ্যানযাত্রী নিহত
শিল্পীদের সমস্যাগুলো সংসদে চিহ্নিত করতে চাই: ফেরদৌস
শিল্পীদের সমস্যাগুলো সংসদে চিহ্নিত করতে চাই: ফেরদৌস
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!