X
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১
মান নিয়ে প্রশ্ন, নেই প্রতিকার

রংপুরে খেজুর বিক্রি নিয়ে চলছে তেলেসমাতি কারবার

লিয়াকত আলী বাদল, রংপুর
১৯ মার্চ ২০২৪, ১৭:১৮আপডেট : ১৯ মার্চ ২০২৪, ১৯:০০

পবিত্র রমজানে ইফতারের অন্যতম অনুষঙ্গ খেজুর। কিন্তু সুমিষ্ট এই ফল নিয়ে রংপুর নগরে চলছে তেলেসমাতি কারবার। সরকারনির্ধারিত দামের চেয়ে তিন-চারগুণ বেশি দরে খেজুর বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। খেজুরের বিভিন্ন নাম দিয়ে ক্রেতাদের প্রতারিত করে হাতিয়ে নিচ্ছেন বিপুল পরিমাণ অর্থ। অন্যদিকে আড়তদাররা বছরের পর বছর পড়ে থাকা নিম্নমানের খেজুর চড়া দামে বিক্রি করলেও কোনও প্রতিকার মিলছে না বলে অভিযোগ সাধারণ ভোক্তাদের।

সরেজমিন নগরী সিটি বাজারে দেখা গেছে, হাতেগোনা চার-পাঁচ জন আড়তদারের কাছে জিম্মি সাধারণ মানুষ। আড়তে তিউনিসিয়া, মদিনা, কাবাস, মরিয়ম, লেজিম, দাম্মাম, সাহারাসহ বিভিন্ন নাম দিয়ে রেখেছেন তারা। ১ থেকে দেড় হাজার টাকা কেজি দরে খেজুর বিক্রি করছেন, যা সরকারনির্ধারিত দরের কয়েকগুণ বেশি।

তবে কিছু খেজুর ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করলেও সেগুলো অত্যন্ত নিম্নমানের। এই খেজুরগুলো কত বছর আগের, তার কোনও ইয়ত্তা নেই। আর বিভিন্ন নাম দেওয়ার খেজুরের প্যাকেটে উৎপাদন কিংবা মেয়াদ শেষ হওয়া তারিখ উল্লেখ নেই।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সিটি বাজারের সবচেয়ে বড় খেজুরের আড়তদার আল্লাহর দান ফল ভান্ডারের মালিক মোজাম্মেল হোসেন কবীর দাবি করে জানান, এবার খেজুরের দাম গত বছরের চেয়ে অনেক বেশি। পাইকারি মদিনা খেজুর পাঁচ কেজির প্যাকেট ৪ হাজার ৬০০ টাকা, তিউনিসিয়া খেজুর ৪ হাজার ২০০ টাকা, মরিয়ম খেজুর ৪ হাজার ৮০০ টাকা, দাম্মাম ৪ হাজার টাকা, মাগাল ৪ হাজার টাকা দরে বিক্রি করছেন তিনি। এতে গড়ে প্রতিকেজি ৮০০ টাকার বেশি পড়ে বলে জানান তিনি।

তবে সরকারিভাবে কোনও খেজুর ৩০০ থেকে ৪০০ টাকার ওপরে আমদানি করতে পারবে না বলে সরকার দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার পরও এত দাম কেন, এর সঠিক কোনও জবাব দিতে পারেননি এই বিক্রেতা। এ ছাড়া পাঁচ কেজির বিভিন্ন কোম্পানির প্যাকেটে উৎপাদন ও মেয়াদ শেষের তারিখ উল্লেখ না থাকার কারণ জানতে চাইলে কোনও সদুত্তর মেলেনি ওই আড়তদারের কাছ থেকে।

কার্টুনে ভরা খেজুর

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক খেজুর ব্যবসায়ীর ম্যানেজার জানান, কম দামি খেজুর ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেনা দাম পড়ে। কিন্তু এগুলো চার-পাঁচ বছর আগে আমদানি করা। এগুলো রমজানের সময় চাহিদা বাড়ার কারণে পানি দিয়ে পরিষ্কার করে বিক্রি করা হয়। এগুলোর মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে।

অন্যদিকে খুচরা খেজুর বিক্রেতা সাহাবুল, আনিসুরসহ কয়েকজন ব্যবসায়ী সর্বনিম্ন ৪০০ টাকা থেকে শুরু করে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত কেজি দর হাঁকিয়ে বিভিন্ন নাম দিয়ে খেজুর বিক্রি করছেন। সরকারের বেঁধে দেওয়া মূল্য তারা মানছেন না। তারা বলছেন, সরকার দাম নির্ধারণ করলে তো হবে না। আমরা আড়তদারদের কাছ থেকে বেশি দামে খেজুর কিনে কম দামে বিক্রি করতে পারবো না।

এদিকে নগরীর সিও বাজার এলাকা থেকে খেজুর কিনতে আসা আল আমিন বলেন, পৃথিবীর সব দেশে রোজার সময় পণ্যের দাম কমে, আমাদের দেশে বাড়ে। খেজুর দিয়ে ইফতার করলে সওয়াব হয়, এই কারণে বাধ্য হয়ে কিনতে হচ্ছে। এ ব্যাপারে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর বা জেলা প্রশাসনের কোনও নজরদারি না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। একই অভিযোগ ব্যাংক কর্মচারী আসমা সুলতানাসহ অনেকের।

রমজান মাসে খেজুর দিয়ে ইফতার করেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। খেজুর দিয়ে ইফতার করা সুন্নত। এই সুযোগে হাতেগোনা কয়েকটি সিন্ডিকেট জিম্মি করে রেখেছে খেজুরের বাজার। এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন রোজাদাররা।

এ ব্যাপারে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর রংপুর বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক আজাহারুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে বেশি দামে খেজুর বিক্রি করায় শনিবার বিকালে অভিযান চালিয়ে তিন দোকানিকে ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। এরপরও অনিয়ম রোধে আমাদের অভিযান চলমান থাকবে।

/এনএআর/এমওএফ/
সম্পর্কিত
আজ ঈদ
ঈদুল ফিতরে করণীয়
চাঁদ দেখা যায়নি, ঈদ বৃহস্পতিবার
সর্বশেষ খবর
সবসময় কি টাকা পিছনে ছুটে সময় ব্যয় করবেন?
সবসময় কি টাকা পিছনে ছুটে সময় ব্যয় করবেন?
মানুষকে স্বস্তি দিতে বিনামূল্যে শরবত খাওয়াচ্ছে ছাত্রলীগ
মানুষকে স্বস্তি দিতে বিনামূল্যে শরবত খাওয়াচ্ছে ছাত্রলীগ
‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ারের’ কার্যক্রমের তদন্ত চায় মানবাধিকার কমিশন
‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ারের’ কার্যক্রমের তদন্ত চায় মানবাধিকার কমিশন
বুন্দেসলিগায় গোলের রেকর্ডে চোখ কেইনের
বুন্দেসলিগায় গোলের রেকর্ডে চোখ কেইনের
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
মিয়ানমারে গিয়ে সেনা ট্রেনিং নিলেন ২ রোহিঙ্গা, বাংলাদেশে ঢুকলেন বুলেট নিয়ে
মিয়ানমারে গিয়ে সেনা ট্রেনিং নিলেন ২ রোহিঙ্গা, বাংলাদেশে ঢুকলেন বুলেট নিয়ে