ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি এবং জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরিতে মুখের ছবি তুলে নয়, শুধুমাত্র ফিঙ্গারপ্রিন্টের মাধ্যমে পরিচয় যাচাইয়ের দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করেছে ‘পর্দানশীন নারী সমাজ’ ব্যানারে একটি সংগঠন।
সোমবার (২৭ জানুয়ারি) দুপুরে কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে এই মানববন্ধন করেন তারা। এ সময় ১৬ বছর যাবত ‘পর্দানশীন নারীদের’ নাগরিকত্ব বঞ্চিত রাখার অভিযোগ তুলে এর প্রতিবাদ জানানো হয়।
মানববন্ধনে বিভিন্ন দাবি ও অভিযোগ সংবলিত ব্যানার-ফেস্টুন প্রদর্শন করেন অংশগ্রহণকারীরা। এ সময় পর্দানশীন নারী সংগঠনের সংগঠক আহমদ উম্মুল হায়া, সাইয়েদ মুহাম্মদ আশরাফুর রহমানসহ জেলার পর্দানশীন নারীরা উপস্থিত ছিলেন। পরে একটি র্যালি নিয়ে কুড়িগ্রাম জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর স্মারকলিপি দেয় সংগঠনটি।
পর্দানশীন নারী সংগঠনের সংগঠক আহমদ উম্মুল হায়া বলেন, ‘ধর্মীয় মতে নিজ ইচ্ছায় নারীরা পর্দা করলেও পরিচয় শনাক্তের জন্য তাদের হেনস্তা করা হচ্ছে। ফিঙ্গারপ্রিন্টের মাধ্যমে যেহেতু পরিচয় শনাক্ত করা যায়, সেহেতু চেহারা না দেখে পরিচয় শনাক্ত করা হোক। তাহলে আমাদের ধর্মীয় অনুভূতি ঠিক থাকবে।’
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, ‘বেশ কয়েকজন নারী ও পুরুষ একটি স্মারকলিপি নিয়ে এসেছিলেন। আমি প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর সেটি পাঠিয়েছি।’
স্মারকলিপির দাবি এবং আইনি সম্ভাব্যতার বিষয়ে প্রশ্নের নির্বাচন কর্মকর্তা বলেন, ‘তাদের দাবি ছিল মুখের ছবি না তুলে শুধু ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যবহার করে পরিচয়পত্র তৈরি করতে হবে। কিন্তু বিদ্যমান আইনে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে মুখবিবরের ছবি তোলা ছাড়া প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার সুযোগ নেই।’
ছবি তোলায় ‘পর্দা লঙ্ঘন’ বিষয়ে শরিয়ত কী বলে
‘পর্দানশীল নারী সমাজের’ দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম আলিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা নুর বখত বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জরুরি প্রয়োজনে নারীদের মুখবিবরের ছবি তুললে পর্দার লঙ্ঘন হবে না। বরং শরিয়তে রাষ্ট্রীয় কাজে সহায়তা করার নির্দেশনা রয়েছে। তবে নারীদের ছবি তোলার জন্য নারী কর্মী নিয়োজিত করা উচিত।’
শুধু জাতীয় পরিচয়পত্র কিংবা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত নয়, পাসপোর্ট ও ভিসার ক্ষেত্রেও মুখবিবরের ছবি তোলা আবশ্যক। এটা শুধু দেশে নয়, বিশ্বজুড়ে প্রচলিত। এমনটা জানিয়ে সরকারিভাবে হজ গাইড হিসেবে কাজ করা শিক্ষক ও ইমাম মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘পরিচয় শনাক্তে ছবি তুললে পর্দা লঙ্ঘন হওয়ার সুযোগ নেই। নারীরা হজেও যান। পাসপোর্ট ও ভিসা করতে মুখবিবরের ছবি তোলা বাধ্যতামূলক। জরুরি প্রয়োজনে মুখের ও হাতের তলা দেখানো যেতে পারে। এতে পর্দার লঙ্ঘন হওয়ার প্রশ্ন নেই।’