লালমনিরহাট সদর উপজেলায় ভুট্টাক্ষেত থেকে দেহ উদ্ধারের তিন দিন পর সেই নারীর মাথা সীমান্তের তামাকক্ষেত থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় ওই নারীর সতিন মেহেরুন নেছাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
শনিবার (০৮ মার্চ) বিকালে আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুর সীমান্ত এলাকার একটি তামাকক্ষেত থেকে মাথাটি উদ্ধার করা হয়। সেটি তামাকক্ষেতে পুঁতে রাখা হয়েছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গত বুধবার (০৫ মার্চ) দুপুরে সদরের মোগলহাট ইউনিয়নের ভাড়ালদা এলাকার ভুট্টাক্ষেত থেকে মাথাবিহীন লাশটি উদ্ধার করা হয়। ওই সময় মাথার খোঁজ পাওয়া যায়নি, এমনকি পরিচয়ও মেলেনি। পরে আঙুলের ছাপ নিয়ে পরিচয় শনাক্ত করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) রংপুর ক্রাইমসিন ইউনিট।
সেই সূত্রে জানা যায় নিহত হাসিনা বেগম (৪৫) আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের দীঘলটারী গ্রামের ভ্যানচালক আশরাফুল ইসলামের (৫৪) স্ত্রী। ওই বাড়িতে গিয়ে আশরাফুলকে পায়নি পুলিশ। তবে তার ঘর থেকে রক্তমাখা কালো রঙের একটি জ্যাকেট ও ধুলাবালুমাখা একটি জামা আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া আশরাফুলের ঘর থেকে একটি দেশি অস্ত্র (হাঁসুয়া) উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এটি হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার করা হয়েছে কিনা, এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। ঘটনার পর থেকে আশরাফুল পলাতক রয়েছেন।
পুলিশ জানায়, ভুট্টাক্ষেত থেকে মাথাবিহীন লাশ উদ্ধারের পর ঘটনায় জড়িতদের সন্ধানে মাঠে নামে পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে আশরাফুলের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকে রক্তমাখা জ্যাকেট ও একটি হাঁসুয়া উদ্ধার করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, আশরাফুল হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন।
শনিবার বিকালে হাসিনা বেগমের স্বামী আশরাফুল ইসলামের দ্বিতীয় স্ত্রী মেহেরুন নেছার (৪৫) দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের নামাটারী কুটিবাড়ী এলাকায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে অভিযান চালায় পুলিশ। পরে সীমান্তের একটি তামাকক্ষেতে পুঁতে রাখা মাথাটি উদ্ধার করা হয়। হত্যার ঘটনায় ভুট্টাখেতের মালিক শফিকুল ইসলাম অজ্ঞাতদের আসামি করে সদর থানায় মামলা করেন।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, আশরাফুল ইসলামের দ্বিতীয় স্ত্রী হাসিনা বেগম। হাসিনার এটি দ্বিতীয় বিয়ে। আগের স্বামী নুর ইসলামের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের পর আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে তার বিয়ে হয়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুর রাজ্জাক সরকার বলেন, ‘আশরাফুল ইসলাম চর কুটিরপাড় গ্রামের নবাব আলীর ছেলে। তিনি দুটি বিয়ে করেছেন। হাসিনা বেগম তার দ্বিতীয় স্ত্রী। এই সংসারে তাদের তিন মেয়ে রয়েছে। পারিবারিক কলহ ও টাকা-পয়সা এবং মাদকসংক্রান্ত বিষয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে থাকতে পারে।’
গত বৃহস্পতিবার বিকালে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের মর্গে নিহত হাসিনা বেগমের মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। লাশ হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়েছে। স্বজনরা এলে লাশ হস্তান্তর করা হবে বলে লালমনিরহাট সদর থানার পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) বাদল কুমার মন্ডল বলেন, ‘হাসিনার স্বামী আশরাফুলের দ্বিতীয় স্ত্রী মেহেরুন নেছাকে জিজ্ঞাবাদ করি আমরা। একপর্যায়ে মেহেরুন বলেন, আশরাফুলের কাছ থেকে শুনেছি ওই খণ্ডিত মাথা সীমান্তে মাটির নিচে পুঁতে রেখেছে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে সীমান্তের বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি চালানো হয়। শনিবার বিকালে সীমান্তের তামাকক্ষেতে পুঁতে রাখা মাথাটি উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতের স্বামী পলাতক থাকায় এখনও হত্যার কারণ জানা যায়নি। গ্রেফতারের পর রহস্য জানা যাবে। তাকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে।’
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নুরনবী বলেন, ‘হত্যার ঘটনাটি অধিকতর তদন্তের পাশাপাশি পলাতক আশরাফুল ইসলামকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। মেহেরুন নেছাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। রবিবার তাকে আদালতে তোলা হবে।’