রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. ওয়াজেদ আন্তর্জাতিক রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের ১১ কর্মকর্তা-কর্মচারী কোনও কাজ না করেই প্রতি মাসে বেতন-ভাতা তোলার অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বুধবার (১২ মার্চ) দুপুরে দুদকের রংপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক হোসাইন শরীফের নেতৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধি দল ড. ওয়াজেদ আন্তর্জাতিক রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে গিয়ে তদন্ত শুরু করেন। এতে ওই ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তাদের অনিয়ম ও অবৈধ বেতন তোলার সত্যতা পান। প্রতিনিধি দল ইনস্টিটিউটের বিভিন্ন কক্ষ পরিদর্শন করে কাগজপত্র যাচাই-বাছাইসহ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন।
দুদকের সহকারী পরিচালক হোসাইন শরীফ বলেন, ‘বাংলা ট্রিবিউনে প্রকাশিত সংবাদটি দেখে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে অভিযান চালানো হয়েছে। ড. ওয়াজেদ আন্তর্জাতিক রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের বৈধতা না থাকা সত্ত্বেও এখানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিপুল পরিমাণ অর্থ তুলছেন বলে সত্যতা পাওয়া গেছে। আমরা এখানের কাগজপত্র সংগ্রহ করে যাচাই করেছি। এখানে কোনও কাজ না থাকা সত্ত্বেও বেতন-ভাতা তুলছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তবে সম্প্রতি ইনস্টিটিউটের নীতিমালা চ্যান্সেলর কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে মর্মে জানতে পেরেছি। ইতিপূর্বে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তারা অবৈধভাবে বেতন-ভাতা তুলেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘পুরো বিষয়টির প্রতিবেদন তৈরি করে দুদকের প্রধান অফিসে পাঠানো হবে। কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
গত ১১ মার্চ ‘৩ বছর ধরে অফিস কার্যক্রম বন্ধ, বসে বেতন নিচ্ছেন সাত কর্মকর্তা’ শিরোনামে বাংলা ট্রিবিউনে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, তিন বছর ধরে বন্ধ রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. ওয়াজেদ আন্তর্জাতিক রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম। অফিস কার্যক্রম না থাকলেও বসে বসে নিয়মিত বেতন-ভাতা নিচ্ছেন সাত কর্মকর্তা।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. ওয়াজেদ আন্তর্জাতিক রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে গবেষক নেওয়ার অনুমোদন না পাওয়ায় ২০২২ সাল থেকে অফিস কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তবু ইনস্টিটিউটে সাত জন কর্মকর্তা এবং একজন অফিস সহায়ক কর্মরত আছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, ড. ওয়াজেদ আন্তর্জাতিক রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে কর্মরত আছেন অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার খন্দকার গোলাম মোস্তফা, প্রিন্সিপাল সায়েন্টিফিক অফিসার ড. প্রসেনজিৎ সরকার, সায়েন্টিফিক অফিসার সাবেক উপাচার্য আব্দুল জলিলের মেয়ে রুমানা ফেরদৌসী জলীল, ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রধান রফিউল আজম খানের স্ত্রী ডেপুটি রেজিস্ট্রার সিরাজুম মুনিরা, সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার আবু সায়েম, সিনিয়র রিসার্চ অফিসার মেহজাবিন ইলাহী (রংপুরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার শহীদ মুখতার ইলাহীর বোন) এবং রংপুর বিভাগের জিয়া পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক রিসার্চ অফিসার ড. মো. রোকনুজ্জামান।
এ বিষয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. শওকত আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ড. ওয়াজেদ আন্তর্জাতিক রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের কার্যক্রমের অনিয়মের অভিযোগ পাওয়ার পর আমি কর্মকর্তাদের শোকজ করেছিলাম। তখন তারা ক্ষমা চেয়েছেন। কিন্তু যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সবকিছু হবে। বিশ্ববিদ্যালয় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন আমরা ইতিমধ্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি।’