রংপুর মহানগর পুলিশের সদ্য প্রত্যাহার হওয়া উপকমিশনার মোহাম্মদ শিবলী কায়সারের বিরুদ্ধে ১০ লাখ টাকা ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ করা ব্যবসায়ী লিপি খান ভরসাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রবিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর গুলশান থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে রংপুর মহানগর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান বলেন, ‘লিপি খান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি। তিনি এতোদিন পলাতক ছিলেন।’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার অভিযোগে গত ১৩ নভেম্বর রংপুরের হারাগাছার ব্যবসায়ী লিপি খান ভরসার বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়। মামলার পর রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বারের পরিচালক অমিত বণিকের মাধ্যমে লিপি খানের কাছে ১০ লাখ টাকা ঘুষ দাবির অভিযোগ ওঠে পুলিশ কর্মকর্তা শিবলী কায়সারের বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে ১১ মার্চ পুলিশ সদর দফতরে শিবলী কায়সারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন লিপি খান। অভিযোগের সঙ্গে অমিত বণিকের সঙ্গে ঘুষ দাবির কথোপকথনের কয়েকটি অডিও রেকর্ড জমা দেন লিপি। অভিযোগ করার সময় লিপি খান দাবি করেন, তিনি বিড়ি ব্যবসায়ী। কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন।
অভিযোগের পর গত বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে অমিত বণিককে থানায় ডেকে নেয় কোতোয়ালি থানা পুলিশ। ওই দিন বিকাল ৪টার দিকে লিপি খানের পক্ষে থানায় মামলা করতে যান তার প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক পলাশ হাসান। ওই দিন বিকাল ৫টার দিকে থানায় যান উপপুলিশ কমিশনার শিবলী কায়সার। শিবলী কায়সার থানায় ঢুকেই পলাশ হাসানের ওপর চড়াও হন এবং তাকে বেধড়ক মারধর করেন। একপর্যায়ে কনস্টেবলের রাইফেল কেড়ে নিয়ে পলাশকে গুলি করতে উদ্যত হন। পরে চাঁদাবাজির অভিযোগে থানায় মামলা হলেও এতে শুধু অমিত বণিককে আসামি করা হয়। মামলায় আগে থেকেই থানা হেফাজতে থাকা অমিত বণিককে গ্রেফতার দেখিয়ে গত শুক্রবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
ঘুষ-বাণিজ্য ও থানায় মামলার বাদীকে মারধরের অভিযোগ ওঠার পর উপকমিশনার মোহাম্মদ শিবলী কায়সারকে গতকাল শনিবার দুপুরে রংপুর মহানগর পুলিশ থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দফতরে সংযুক্ত করা হয়। তাকে রবিবার সদর দফতরে যোগ দিতে বলা হয়।
লিপি খানের বিরুদ্ধে মামলা বিবরণীতে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ১৯ জুলাই বিকালে রংপুর নগরের গ্র্যান্ড হোটেল মোড় থেকে আন্দোলনকারীরা একটি মিছিল নিয়ে সিটি বাজারের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তাদের ওপর গুলি করেন। এ ঘটনায় গত ১৩ নভেম্বর কোতোয়ালি থানায় হত্যাচেষ্টার মামলা করেন আহত মামুনুর রশিদ। লিপি খান মামলার এজাহারনামীয় ১৭৯ নম্বর আসামি।
মহানগরের কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান বলেন, ‘হত্যাচেষ্টা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি লিপি খান ভরসাকে গ্রেফতার করে গুলশান থানায় নেওয়া হয়েছে। আইনগত প্রক্রিয়া শেষে তাকে রংপুরে এনে আদালতে তোলা হবে।’