X
মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪
২৪ বৈশাখ ১৪৩১

‘লেম্বর চিয়ারম্যানরে কতো কইরা কইছি, আইজো একটা কার্ড জুটলো না’

হিমাদ্রি শেখর ভদ্র, সুনামগঞ্জ
২৯ আগস্ট ২০১৭, ১৩:০০আপডেট : ২৯ আগস্ট ২০১৭, ১৪:১৫

ত্রাণের জন্য হাওরবাসীর দীর্ঘ লাইন ‘লেম্বর চিয়ারম্যানরে কতো কইরা কইছি আমারে একটা কার্ড দেওয়নের লাইগা। আইজো একটা কার্ড জুটলো না আমার কপালে।’ সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের নাগরপুর গ্রামের তারা বানু এভাবেই তার ভিজিএফ কার্ড না পাওয়ার কথা বলছিলেন বাংলা ট্রিবিউনকে। পাশে বসা ছিলেন জামবাঁক গ্রামের আনেছা খাতুন। তিনি এসে বললেন, ‘আমার নামটা লেখো পুত, আমার পরিবারে তিনটা ঝি ছাড়া আর কেউ নাই। কতো মানুষ সরকারি সাহায্য পায় আমি পাই না। মানুষের বাড়িঘরে ভিক্ষা করে দু’বেলা ভাতের যোগাড় করি।’

এক বছরের মধ্যে বেশ কয়েকবার প্রাকৃতিক দুর্যোগে কয়েক লাখ হাওরবাসী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। প্রথম দফা অকাল বন্যায় ফসল হারিয়ে তিন লাখ মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। একের পর এক ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে চোখের সামনে তলিয়ে গেছে ১ লাখ ৬৭ হাজার জমির ফসল। গত বছরও অকাল বন্যায় হাওরবাসীর বোরো ধান নষ্ট হয়েছে। তবে সে সময় দেরিতে পানি আসায় স্থানীয় কৃষকরা কিছু ধান কেটে গোলায় তুলতে পেরেছিলেন। কিন্তু এ বছর কাঁচা ধানক্ষেত তলিয়ে গেছে। তাই গবাদি পশু ও মানুষের খাদ্য সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। সরকারি খাদ্য সহায়তার বাইরে রয়েছে লক্ষাধিক মানুষ।

ত্রাণের জন্য অপেক্ষা জানা গেছে, গভীর হাওর এলাকায় সরকারি সাহায্যের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম। যেসব জায়গা মানুষ সহজেই যোগাযোগ করতে পারে সেখানকার মানুষ বেসরকারি ত্রাণ বেশি পরিমাণে পেয়ে থাকেন।  হাওরের উত্তাল জলরাশি পার হয়ে কেউ কষ্ট করে গভীর হাওর এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করতে যান না। তাই দুর্গতরা বেশি অসুবিধায় পড়েছেন।

এছাড়া চৈত্রের বন্যার পর মরার উপর খাড়ার ঘা হিসেবে শ্রাবণের বন্যায় নষ্ট হয়েছে রোপা আমন ও বীজতলা। ফলে অগ্রায়ণ মাসের ধান তারা ঘরে তুলতে পারবেন না।

স্থানীয়রা জানান, হাওরাঞ্চল বছরের ৬ থেকে ৮ মাস জলমগ্ন থাকে। এ সময় হাওরের চারদিকের বিশাল জলরাশি গ্রামগুলোকে ঘিরে রাখে। মাছ ধরা ও কৃষিকাজ ছাড়া হাওর এলাকায় বিকল্প কোনও কর্মসংস্থান নেই। তাই হাওর পাড়ের মানুষজন কর্ম সংকটে ভোগেন। এ অবস্থায় হাওর এলাকায় এগ্রোফিসারি স্থাপন করে বিকল্প কর্মসংস্থানের দাবি জানান তারা।

হাওরপাড়ের লোকজন জানান, বিকল্প কর্মসংস্থান না থাকায় হতদরিদ্র মানুষ উজানের জেলাগুলোতে কাজের সন্ধানে ছুটে যায়। এ বছর উজানে বন্যা হওয়ায় কাজের জন্য কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই তাদের। ফলে অভাব তীব্র আকার ধারণ করছে।

‘লেম্বর চিয়ারম্যানরে কতো কইরা কইছি, আইজো একটা কার্ড জুটলো না’ সুন্দর পাহাড়ি গ্রামের জোবেদা খাতুন জানান, আগে তাহিরপুর উপজেলার বড়ছড়া চারাগাঁও ও বাগলী শুল্ক স্টেশনে কয়লা শ্রমিকের কাজ করে ৫০ হাজার মানুষের জীবন চলতো। এখন আইনি জটিলতায় কয়লা আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মানুষ আরও বেশি বিপদে পড়েছে। জামবাঁক গ্রামের আনেছা খাতুন জানান, কোথাও ত্রাণ বিতরণের খবর পেলে গ্রামবাসী ভোর থেকে ওই এলাকায় গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে। কারো ভাগ্যে ত্রাণ জুটে, কেউ বা ফেরেন খালি হাতে। গ্রামের হতদরিদ্র মানুষ কয়েক কেজি চালের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে। 

রমজান বানু বলেন, ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় সরকার ৩০ কেজি করে চাল ও নগদ ৫০০ টাকা দেয়। এতে তাদের পরিবারের ১৫ দিন যায়। বাকি দিনগুলো অনাহারে অর্ধাহারে কাটে। কারণ একটি পরিবারে সর্বনিম্ন ৬ থেকে ১০ জন শিশু সন্তান রয়েছে।

তাহিরপুর উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ তালুকদার বলেন, হাওর এলাকায় দুটি সন্তানের পরিবারের সংখ্যা খুব কম। একেকটি পরিবারে ৫ থেকে ১০ জন লোকজন রয়েছে। ৩০ কেজি চালে তাদের মাস চলে না।

জামালগঞ্জ উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাজ্জাদ মাহমুদ তালুকদার সাজিব বলেন, সরকার যে পরিমাণ কার্ড বরাদ্দ দেয় তাতে সবাইকে ত্রাণের কার্ড দেওয়া যায় না। কার্ডের পরিমাণ বাড়ানো না হলে বঞ্চিতরা সীমাহীন কষ্টের মধ্যে পড়বে। কারণ ফসল নষ্টের পরপর তারা স্বাভাবিক ক্রয় ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন। ইচ্ছে করলে বাজার থেকে চড়া দামে চাল কিনতে পারছেন না কৃষকরা।

জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ভিজিএফ কার্ড বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট অফিসকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনও উত্তর আসেনি।  

আরও পড়ুন:

‘তিন ছেলেকে ধরে নিয়ে গেছে, নাতিকে হত্যা করেছে, আমি আছি নো-ম্যানস ল্যান্ডে ’

/বিএল/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
উপজেলায় ভোটের প্রস্তুতি, কেন্দ্রে কেন্দ্রে গেলো সরঞ্জাম
উপজেলায় ভোটের প্রস্তুতি, কেন্দ্রে কেন্দ্রে গেলো সরঞ্জাম
‘প্রমাণ-অপ্রমাণের যাত্রা সুদীর্ঘ, সেখানে জড়িয়ে আছে হাহাকার’
বিচারপ্রার্থীদের প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি‘প্রমাণ-অপ্রমাণের যাত্রা সুদীর্ঘ, সেখানে জড়িয়ে আছে হাহাকার’
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি, বিএনপির প্রস্তুতি কী?
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি, বিএনপির প্রস্তুতি কী?
নিলামে উঠছে ম্যারাডোনার গোল্ডেন বল
নিলামে উঠছে ম্যারাডোনার গোল্ডেন বল
সর্বাধিক পঠিত
ভিটামিন ডি কমে গেলে কীভাবে বুঝবেন?
ভিটামিন ডি কমে গেলে কীভাবে বুঝবেন?
বৃষ্টি ও বন্যার কী পূর্বাভাস পাওয়া গেলো?
বৃষ্টি ও বন্যার কী পূর্বাভাস পাওয়া গেলো?
ছুড়ে দেওয়া সব তীর সাদরে গ্রহণ করলাম: ভাবনা
ছুড়ে দেওয়া সব তীর সাদরে গ্রহণ করলাম: ভাবনা
যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি হামাস, অগ্রহণযোগ্য বলছে ইসরায়েল
যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি হামাস, অগ্রহণযোগ্য বলছে ইসরায়েল
আসছে ব্যয় কমানোর বাজেট
আসছে ব্যয় কমানোর বাজেট