X
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
১৭ বৈশাখ ১৪৩১

জামিনের শর্ত ভেঙে ঈদ করলো যুদ্ধাপরাধ মামলার আসামি

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
০৫ আগস্ট ২০২০, ০১:২৪আপডেট : ০৫ আগস্ট ২০২০, ০২:০১

ছবিতে সামনে থেকে বাঁয়ে যুদ্ধাপরাধী জুবায়ের মনির সুনামগঞ্জের শাল্লায় যুদ্ধাপরাধ মামলায় গ্রেফতারকৃত আসামি জোবায়ের মনির অসুস্থতা দেখিয়ে আদালত থেকে জামিন নিয়ে জামিনের শর্ত ভঙ্গ করে গোপনে এলাকায় এসে ঘুরে গেছেন। তিনি ঈদের আগের দিন গ্রামের বাড়ি শাল্লা উপজেলার দৌলতপুরে গিয়ে পশু কোরবানিতে অংশ নেন। পরে নিজস্ব লোকজন নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে সোমবার (৩ আগস্ট) ঢাকায় ফিরেন।  
এ ঘটনায় মামলার বাদী, সাক্ষী ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষজন আতঙ্কে আছেন। এ এলাকায় একক প্রভাবশালী হিসেবে এখনও প্রতিষ্ঠিত জোবায়ের মনিরের পরিবার। এ কারণে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষজন সব সময়ই তটস্থ থাকেন।
যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৬ সালে ট্রাইব্যুনালে একাত্তরে গণহত্যা, নারী নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের অভিযোগে জোবায়ের মনির, তার ভাই প্রদীপ মনির ও চাচা মুকিত মনিরসহ যুদ্ধাপরাধে সম্পৃক্তদের বিরুদ্ধে চারটি অভিযোগ দায়ের করা হয়। ওই বছরের ২১ মার্চ অভিযোগের তদন্ত শুরু করে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। পেরুয়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা রজনী দাসের দায়েরকৃত মামলায় ২০১৮ সালের ২০ ডিসেম্বর জোবায়ের মনির, জাকির হোসেন, তোতা মিয়া টেইলার, সিদ্দিকুর রহমান, আব্দুল জলিল, আব্দুর রশিদসহ অভিযুক্ত ৬ যুদ্ধাপরাধীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অভিযোগ দায়েরের পরই আমেরিকায় পালিয়ে যায় অভিযুক্ত জুবায়ের মনির, যুদ্ধাপরাধ মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত কামরুজ্জামানের আইনজীবী ও ইসলামি ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি শিশির মনিরের বাবা যুদ্ধাপরাধী মুকিত মনির। ২০১৯ সালের ১৭ জুন তদন্ত সংস্থা একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে জোবায়ের মনিরসহ ১১ জন জড়িত বলে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিল করে। গত ফেব্রুয়ারিতে আদালতকে অসুস্থতার সাজানো তথ্য দিয়ে জোবায়ের মনির ‘টাউন জামিন’ মঞ্জুর করিয়ে নেয়। শর্ত মতে শহরে বাসায় অবস্থানের নির্দেশনা দিয়ে জামিন মঞ্জুর করা হলেও সুস্থ জোবায়ের মনির প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ান এলাকায়ও।

এবার ঈদুল আজহার আগে শাল্লা উপজেলার দৌলতপুর গ্রামে এসে ঈদের জামাত আদায়সহ একাধিক পশু কোরবানি দিয়েছেন। এছাড়া ঈদের পরদিন স্পিডবোট ও নৌকা নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন।
বিষয়টি আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের সংশ্লিষ্টরা সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপারকে বিষয়টি অবগত করে। সংস্থার পক্ষ থেকে শাল্লা থানা ও দিরাই থানার ওসির সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলে লিখিতভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।
শাল্লা থানার ওসি সনজুর মোরশেদ বলেন, শুনেছি যুদ্ধাপরাধ মামলায় জামিনে থাকা আসামি জোবায়ের মনির ঈদে বাড়িতে এসেছেন। তবে নৌবিহার করেছেন কিনা জানি না। আমরা এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে লিখিত প্রতিবেদন দেওয়ার চেষ্টা করবো। হুমকি দেওয়ার কোনও অভিযোগ থানা পুলিশকে কেউ করেনি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. নূর হোসেন জানান, যুদ্ধাপরাধী হিসেবে জোবায়ের মনিরসহ ১১ জনের অপরাধের অভিযোগপত্র ট্রাইব্যুনালে জমা দিয়েছি। এরমধ্যে ৬ জন গ্রেফতার হয়েছে। জোবায়ের মনির অসুস্থতার কথা বলে আদালত থেকে জামিন নিয়ে এলাকায় এসেছেন বিষয়টি জানতে পেরেছি। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান জানান, তিনি জামিন পেয়ে এলাকায় এসেছেন। কাউকে হুমকি ধমকি দেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই।

উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের ৪ ডিসেম্বর হাওরাঞ্চলের শীর্ষ দালাল আব্দুল খালেকের নির্দেশে পেরুয়া, উজানগাঁও, শ্যামারচরে ভয়াবহ গণহত্যা, অগ্নিসংযোগসহ যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হয়। শ্যামারচর বাজারের স্কুলের সামনে ২৭ জন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে লাইন ধরিয়ে জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করে ব্রাশফায়ারে হত্যা করা হয়। পরে কয়েকটি পল্লিতে প্রায় ৩ শতাধিক প্রশিক্ষিত রাজাকার বাহিনী দিয়ে নারীদের ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ করে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করে। এই গণহত্যায় নেতৃত্ব দেয় দালাল আব্দুল খালেকের ভাই মুকিত মনির, কদর আলী, ছেলে প্রদীপ মনির, জোবায়ের মনিরসহ প্রশিক্ষিত রাজাকার বাহিনী। ১৯৭২ সালে কদর আলীকে দালাল আইনে গ্রেফতার করা হয়। জোবায়ের মনিরের পরিবারের কারণে এখনও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষজন কোণঠাসা। মুক্তিযুদ্ধের পর গণহত্যার চিহ্ন মুছে ফেলে তারা। ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে গঠিত গণজাগরণ মঞ্চের আগে তাদের হুমকি-ধমকিতে এই এলাকায় কখনও গণহত্যা দিবস পালন করা সম্ভব হয়নি।

/আরআইজে/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
রাজশাহীতে গরমে নাকাল প্রাণিকুল, মারা যাচ্ছে পাখি
রাজশাহীতে গরমে নাকাল প্রাণিকুল, মারা যাচ্ছে পাখি
দুর্নীতির অভিযোগে ইসলামপুর পৌর মেয়র বরখাস্ত
দুর্নীতির অভিযোগে ইসলামপুর পৌর মেয়র বরখাস্ত
মাটি কাটার সময় ‘গরমে অসুস্থ হয়ে’ নারী শ্রমিকের মৃত্যু
মাটি কাটার সময় ‘গরমে অসুস্থ হয়ে’ নারী শ্রমিকের মৃত্যু
সাকিবের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সাক্ষাৎ
সাকিবের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সাক্ষাৎ
সর্বাধিক পঠিত
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
আজ কি বৃষ্টি হবে?
আজ কি বৃষ্টি হবে?
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে
খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে সরকার
খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে সরকার