চলতি মাসের নির্ধারিত বরাদ্দ শেষ হওয়ায় মৌলভীবাজার জেলায় তিনটি সিএনজি গ্যাস স্টেশনে সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেড। এতে যানবাহনে গ্যাস ভরতে না পেয়ে তীব্র জ্বালানি সংকটে পড়েছে মৌলভীবাজারে চলাচলকারী হাজার হাজার যানবাহন।
স্টেশন তিনটি হলো- মৌলভীবাজার শহরের কুসুমবাগ এলাকার মেসার্স সাজ্জাদুর রহমান, শহরের শমসেরনগর রোডের এমএফ ও রাজনগরের ডেলটা সিএনজি অ্যান্ড ফিলিং স্টেশন।
গত কয়েকদিন ধরে মৌলভীবাজার ও রাজনগর উপজেলায় প্রধান তিনটি সিএনজি স্টেশন বন্ধ থাকায় এই অবস্থা তৈরি হয়েছে। জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী চলতি মাসের গ্যাস বরাদ্দের পরিমাণ শেষ হওয়ায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে।
স্টেশনের মালিকরা জানান, শুধুমাত্র মৌলভীবাজারের স্টেশনগুলোর বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ এই ব্যবস্থা নিয়েছে। সিলেট, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জের স্টেশনগুলো বরাদ্দ পাচ্ছে। সিলেট বিভাগের ৫৪টি স্টেশনের মধ্যে মৌলভীবাজারের এই তিনটি স্টেশনে কী কারণে এই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে তা মালিকরা জানেন না। তবে আশা করছেন, অচিরেই এই সুরাহা হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেড কর্তৃপক্ষ সিলেট ও মৌলভীবাজারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা বলেন, সরকার নির্ধারিত নির্দেশ মেনে চলতে হবে। সরবরাহ বন্ধ করা স্টেশনগুলোর গত ২০ জুলাইয়ের মধ্যে বরাদ্দের পরিমাণ শেষ হয়েছে। এর আগে এসব প্রতিষ্ঠানগুলোকে সতর্ক করা হয়েছে, যাতে বরাদ্দের ভেতরে তারা গ্যাস সরবরাহ করে।
বরাদ্দের পরিমাণ বাড়ানো হবে কি-না এমন প্রশ্নের তারা বলেন, বর্তমানে সরকার সবক্ষেত্রেই গ্যাস সরবরাহ সীমিত করছে। তাই এখন বাড়ানোর বিষয়ে কিছু বলা যাবে না। তবে চলতি মাস শেষ হলে পুনরায় তারা বরাদ্দকৃত গ্যাস পাবে এবং সরবরাহ করতে পারবে।
তবে স্টেশন মালিকরা দাবি করেন, বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য বারবার আবেদন করার পরও বরাদ্দ বাড়াচ্ছে না জালালাবাদ কর্তৃপক্ষ। ফলে হাজার হাজার চালক ও মালিক গ্যাস না পেয়ে এখন যানবাহন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। হাজার হাজার যানবাহন সারাদিন সড়কে অবস্থান করছে। চরম দুর্ভোগ ও হতাশার মাঝে রয়েছে যানবাহন চালকরা।
জানা যায়, মেসার্স সাজ্জাদুর রহমান সিএনজি ফিলিং স্টেশনটি ২০১২ সালে এক লাখ ৬২ হাজার ২৪০ কিউবিক মিটার বরাদ্দ নিয়ে ২০১৪ সালে যানবাহনে গ্যাস সরবরাহ চালু করে। কিন্তু প্রতিবছরই যানবাহন বেড়ে যাওয়ায় এই বরাদ্দে স্টেশন চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না বিধায় বারবার বরাদ্দ বাড়াতে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করে। কিন্তু বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে জালালাবাদ কর্তৃপক্ষ বরাদ্দ বাড়ায় না।
স্টেশনের প্রোপাইটর ইফতেখার আহমেদ বলেন, ‘২০১২ সালে যে চুক্তি হয়েছিল তা দিয়ে আমি ২০১৪ সালে স্টেশনটি চালু করি। ওই সময়ে যানবাহনের সংখ্যার জন্য এই বরাদ্দ সঠিক ছিল। এখন প্রায় ১০ বছর পেরিয়ে গেছে। যানবাহন কয়েকগুণ বেড়েছে। চাহিদাও প্রায় দ্বিগুণের চেয়ে বেশি হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে বরাদ্দ আরও বাড়ানোর জন্য আমি ২০১৫ সাল থেকে কিছুদিন পর পর আবেদন করছি কিন্তু বরাদ্দ বাড়ানো হয় না। ফলে গত ১৮ জুলাই গ্যাস বরাদ্দের পরিমাণ শেষ হওয়ায় কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে।’
এদিকে, শহরের শমসেরনগর রোডের এমএফ সিএনজি ফিলিং স্টেশনটির বরাদ্দের পরিমাণ ছিল এল লাখ ৪৮ হাজার কিউবিক মিটার। তাদের বরাদ্দের পরিমাণ শেষ হওয়ায় ২০ জুলাই দুপুর থেকে তারাও এই মাসের জন্য গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়।
স্টেশনের প্রোপাইটর ফরহাদ আলী ইমন বলেন, ‘বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে আমিসহ সিলেট বিভাগের সিএনজি অ্যান্ড ফিলিং স্টেশনের মালিকরা ৫০০ টাকা দিয়ে ফরম কিনে আবেদন করেছি। পরে দ্বিতীয় সপ্তাহেই আমাদেরকে জানানো হয় বরাদ্দ বাড়ানো হবে না।’
অন্যদিকে, রাজনগর উপজেলার একমাত্র ডেল্টা সিএনজি অ্যান্ড ফিলিং স্টেশনটির বরাদ্দের পরিমাণ ছিল এক লাখ ৬২ হাজার ২৪০ কিউবিক মিটার। তাদেরও বরাদ্দের পরিমাণ শেষ হওয়ায় ২২ জুলাই সকাল ১১টা থেকে তারাও গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়।
তবে তিন স্টেশন বন্ধ হলেও মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল রোডে মাজ সিএনজি ফিলিং স্টেশন ও রহমান সিএনজি ফিলিং স্টেশন চালু রয়েছে। কিন্তু এই দুটি স্টেশন যানবাহনের চাপ সামলাতে পারছে না। সিএনজি অটোরিকশা, গণপরিবহন ও প্রাইভেট যানবাহনের কারণে এই দুটি স্টেশনে প্রতিদিনই সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। যানবাহন চালক ও স্টেশনের কর্মরত কর্মীদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডাও হচ্ছে। গ্যাস ভরতে কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষার কারণে যানবাহনের চালকদের আয়ও কমেছে।
