এক মাস ১২ কর্মবিরতি পালনের পর বকেয়া মজুরি পাওয়ার শর্তে কাজে যোগ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন রাষ্ট্রমালিকানাধীন ন্যাশনাল টি কোম্পানির (এনটিসি) চা-শ্রমিকরা। সেইসঙ্গে কর্মবিরতি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন তারা। গত ২১ অক্টোবর থেকে দেশের এনটিসির ১৬টি চা-বাগানের শ্রমিকরা কাজে যোগ না দিয়ে কর্মবিরতি শুরু করেছিলেন।
সিলেট বিভাগীয় শ্রম অধিদফতরের উদ্যোগে ত্রিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে দীর্ঘদিনের এই আন্দোলনের সমাধান হয়েছে রবিবার (১ ডিসেম্বর)। এদিন দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আলোচনা সভা শেষে বকেয়া পরিশোধের পর ৫ ডিসেম্বর থেকে কাজে যোগ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন শ্রমিকরা। পরে আলোচনা সভায় নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো পড়ে শোনান বিভাগীয় শ্রম অধিদফতরের উপপরিচালক মোহাম্মদ নাহিদুল ইসলাম।
সভায় উপস্থিত ছিলেন ন্যাশনাল টি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহমুদুল হাসান, মহাব্যবস্থাপক এমদাদুল হক, চা-শ্রমিক ইউনিয়নের বিভিন্ন স্তরের নেতা, পঞ্চায়েত নেতৃবৃন্দ, চা ছাত্র-যুবক নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন বাগানের ১২ জন ব্যবস্থাপক ও সহকারী মহাব্যবস্থাপক প্রমুখ। সভায় আগামী বুধবার শ্রমিকদের ছয়টি বকেয়া মজুরির মধ্যে দুটি পরিশোধের পর বৃহস্পতিবার থেকে কাজে যোগ দেবেন বলে জানান।
অপরদিকে মাসিক বেতনধারী শ্রমিকদের এক মাসের বেতন ওই দিন দেওয়ার হবে। বাগানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তিন মাসের বকেয়া পাওনা থেকে এক মাসের বকেয়া বেতন ডিসেম্বরের ২০ তারিখের মধ্যে দেওয়া হবে। এ ছাড়া শ্রমিকদের চলমান ছয় সপ্তাহের বেতনের দাবি উঠালে তা চা-বোর্ড কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আশ্বাস দেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহমুদুল হাসান।
বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা বলেন, ‘ছয় সপ্তাহের মজুরি বকেয়া ছিল শ্রমিকদের। এর মধ্যে দুই সপ্তাহের মজুরি এই সপ্তাহে আর চার সপ্তাহের মজুরি মার্চের মধ্যে পরিশোধের সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামী বুধবার দুই সপ্তাহের মজুরি দিলে বৃহস্পতিবার থেকে কাজে যোগ দেবেন শ্রমিকরা। বুধবার না দিয়ে বৃহস্পতিবার মজুরি দিলে শুক্রবার থেকে কাজে যাবেন। পরবর্তীতে যাবতীয় পাওনা ও মজুরি নিয়মিত দেওয়া হবে মর্মে ত্রিপক্ষীয় আলোচনা সভায় লিখিত সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
বিভাগীয় শ্রম অধিদফতরের উপপরিচালক মোহাম্মদ নাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি সমাধান হয়েছে। শ্রমিকদের ছয় সপ্তাহের মজুরি কিস্তি আকারে দেওয়া হবে। এর মধ্যে দুই সপ্তাহের মজুরি বুধবার-বৃহস্পতিবার দেওয়া হলে শ্রমিকরা কাজে যোগ দেবেন।’
ন্যাশনাল টি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘করোনার পর থেকে আমাদের সংকট তৈরি হয়েছে। চায়ের যে উৎপাদন খরচ বাড়ছে, তুলনামূলক বাজারে দাম পাওয়া যায়নি। ফলে কোম্পানি কিছুটা লোকসানের মধ্যে পড়েছে। এর মধ্যে সরকার পরিবর্তন হওয়ায় আরও বেশি সংকটে পড়েছি। ব্যাংক থেকে কোনও লোন পাওয়া যায়নি বিধায় মজুরি দিতে হিমশিম খাচ্ছি। আমরা চেষ্টা করছি, শিগগিরই সংকট কাটিয়ে উঠার জন্য।’