X
শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫
২১ আষাঢ় ১৪৩২

‘বিদেশি স্টাডি সেন্টার স্থাপন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক’

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১১ মে ২০২১, ২২:৪৩আপডেট : ১১ মে ২০২১, ২৩:২৮

বাংলাদেশে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের লাভজনক শাখা ক্যাম্পাস বা স্টাডি সেন্টার স্থাপন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে উল্লেখ করেছে বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি। মঙ্গলবার (১১ মে) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন এ কথা উল্লেখ করেন।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সম্প্রতি বাংলাদেশে অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ কলেজের স্টাডি সেন্টার স্থাপন ও পরিচালনার সাময়িক অনুমতি দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই অনুমোদনের পর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির পক্ষ থেকে বলা হয়, লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস বা স্টাডি সেন্টার পরিচালনার অনুমোদন দেওয়ায় দেশের ক্রমবিকাশমান উচ্চশিক্ষা খাতে ব্যাপক উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা সৃষ্টি হয়েছে। 

বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস বা স্টাডি সেন্টার স্থাপন ও পরিচালনার অনুমোদন প্রসঙ্গে একক নীতি এবং ২০১০ সালের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিধি প্রণয়নের অনুরোধ জানিয়ে বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি (এপিইউবি) ২০১৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন-ইউজিসি বরাবর চিঠি দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস বা স্টাডি সেন্টার পরিচালনা বিধিমালা-২০১৪ পুনর্মূল্যায়ন তথা সংশোধন ছাড়া এসব লাভজনক শাখা ক্যাম্পাস বা স্টাডি সেন্টার স্থাপন ও পরিচালনার অনুমোদন দেওয়া হবে না মর্মে বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতিকে আশ্বস্ত করা হয়।

এরপর গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস বা স্টাডি সেন্টার পরিচালনার আকস্মিক অনুমোদন দেওয়া হয়, যা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মনে করে বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন এবং বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস/ স্টাডি সেন্টার পরিচালনা প্রজ্ঞাপন-২০১৪-এর বৈসাদৃশ্য এবং এর ফলে উচ্চশিক্ষা খাতে সৃষ্ট বৈষম্যের কয়েকটি দিক উল্লেখ করা হয়।

১. ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০’ অনুযায়ী বাংলাদেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ট্রাস্ট আইন-১৮৮২-এর অধীন অলাভজনক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালিত হয়। এক্ষেত্রে ‘বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানের শাখা ক্যাম্পাস/স্টাডি সেন্টার কোম্পানি আইন, ১৯৯৪’-এর অধীন লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে অনুমোদন দেওয়ায় কথা উল্লেখ করা হয়েছে,  যা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

২. বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০-এর ৪৪(৭) ধারা অনুযায়ী, ‘কোনও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ তহবিলের অর্থ ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয় ব্যয় ছাড়া অন্য কোনও উদ্দেশ্যে ব্যয় করা যাবে না’, অথচ বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস/স্টাডি সেন্টার প্রজ্ঞাপন ২০১৪-এর বিধি ৭(ঝ) অনুযায়ী, উদ্বৃত্ত অর্থ-সম্পদ উদ্যোক্তা, স্থানীয় প্রতিনিধি ও বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে আনুপাতিক হারে বণ্টন হবে মর্মে উল্লেখ করা হয়েছে। উচ্চশিক্ষা খাতে এ জাতীয় দ্বৈতনীতি কার্যকর হলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উদ্যোক্তারা নিরুৎসাহিত হয়ে পড়বেন।

৩. বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে স্থায়ী ক্যাম্পাস স্থাপন, কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেল গঠন, শিক্ষার্থীদের জন্য কোটা ও বৃত্তি প্রদানের বাধ্যবাধকতাসহ নানাবিধ শর্ত থাকলেও বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস/স্টাডি সেন্টার পরিচালনার ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনও বিধিমালা রাখা হয়নি।

৪. বৈষম্যমূলক বিধির আওতায় সহজ শর্তে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর লাভজনক শাখা ক্যাম্পাস পরিচালনার অনুমোদন কার্যকর হলে দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অসম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হবে। সম্ভাবনাময় অনেক বিশ্ববিদ্যালয় স্বল্প সংখ্যক শিক্ষার্থীর বিপরীতে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিশাল অঙ্কের ব্যয় মেটাতে গিয়ে বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। এছাড়া উচ্চশিক্ষা খাতে বৈদেশিক মুদ্রাপাচার রোধের বিপরীতে নিম্নমানের বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামসর্বস্ব ক্যাম্পাস পরিচালনার মাধ্যমে সনদ বাণিজ্যের আশঙ্কা রয়েছে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা খাতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গত তিন দশক ধরে স্বল্প খরচে মানসম্পন্ন উচ্চশিক্ষা প্রদান করে আসছে। বর্তমানে বেশ কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সক্ষমতা ও মানের বিচারে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিদেশি শিক্ষক ও শিক্ষার্থী এসব ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবর্তে দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য সরকারি সহযোগিতা বৃদ্ধি করা হলে উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হবে।

সমিতির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস/স্টাডি সেন্টার স্থাপন ও পরিচালনার বিভিন্ন বিধিমালা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং অলাভজনক উচ্চশিক্ষার নীতির পরিপন্থী।

সার্বিক বিবেচনায় বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানের শাখা ক্যাম্পাস/স্টাডি সেন্টার পরিচালনার অনুমোদন স্থগিত করে দেশের উচ্চশিক্ষা খাতে বৈষম্যহীন একক নীতি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিধি প্রণয়নের কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়।

/এসএমএ/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের করহার কমিয়ে ১০ শতাংশ করলো সরকার
লাঠিচার্জ করে ইউআইইউ শিক্ষার্থীদের সড়ক থেকে সরিয়ে দিয়েছে পুলিশ
রাজধানীর নতুন বাজারে সড়ক অবরোধ করেছেন ইউআইইউ শিক্ষার্থীরা
সর্বশেষ খবর
রানওয়েতে বিকল বিমান, শাহ আমানতে ২ ঘণ্টা ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ
রানওয়েতে বিকল বিমান, শাহ আমানতে ২ ঘণ্টা ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করেছে ডিএসসিসি
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করেছে ডিএসসিসি
স্ট্রেস বাড়ায় এই ৫ অভ্যাস
স্ট্রেস বাড়ায় এই ৫ অভ্যাস
গাজা যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ‘ইতিবাচক মনোভাব’ নিয়ে সাড়া দিয়েছে হামাস
গাজা যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ‘ইতিবাচক মনোভাব’ নিয়ে সাড়া দিয়েছে হামাস
সর্বাধিক পঠিত
ইরানি তেল বাণিজ্যে আবারও আঘাত যুক্তরাষ্ট্রের
ইরানি তেল বাণিজ্যে আবারও আঘাত যুক্তরাষ্ট্রের
দেশের এই পরিস্থিতিতে কীসের নির্বাচন: জামায়াত আমির
দেশের এই পরিস্থিতিতে কীসের নির্বাচন: জামায়াত আমির
৯ ধরনের মামলার আগে মধ্যস্থতার বাধ্যবাধকতা: বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি কমবে?
৯ ধরনের মামলার আগে মধ্যস্থতার বাধ্যবাধকতা: বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি কমবে?
জামায়াতের অনুষ্ঠানে ‘সৎ’ লোককে ভোট দিতে বলা পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা
জামায়াতের অনুষ্ঠানে ‘সৎ’ লোককে ভোট দিতে বলা পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা
আই উইল বি আ মাদার: জায়েদ খানকে তিশা
আই উইল বি আ মাদার: জায়েদ খানকে তিশা