X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আবাসন সংকটের প্রভাব পরীক্ষার ফলে, পরিবর্তন প্রয়োজন মূল্যায়ন পদ্ধতিতে

আবিদ হাসান
১০ জুন ২০২২, ০৮:০০আপডেট : ১০ জুন ২০২২, ০৮:০০

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে। কিন্তু প্রতিষ্ঠার শতবর্ষে এসেও আবাসন সংকট রয়েছে গেছে প্রকট আকারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের দু-একটি হল ছাড়া সব হলে সিট দিতে প্রশাসন অপারগ। যেগুলো দেওয়া হয়, সেগুলোও ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের সুপারিশে দেওয়া হয়। তাই শিক্ষার্থীরাও বাধ্য হয়ে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের ছত্রছায়ায় হলে থাকেন। ফলে বাধ্য হয়ে ওই সব সংগঠনের কর্মসূচিতে যেতে হয় শিক্ষার্থীদের। এ ছাড়াও হলগুলোতে নেই শিক্ষার সুস্থ পরিবেশ।

আর এই আবাসন সংকটের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে শিক্ষার্থীদের অ্যাকাডেমিক ফলের ওপর। সম্প্রতি পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের প্রকাশিত ফলে দেখা যায়, পাসের হার ২৮.৬৮ শতাংশ। এর কারণ জানতে চাইলে বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন দায়ী করেন আবাসন সংকটকে। তিনি শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনার কথা বলেন।

বিভাগের এই ফল বিপর্যয়ের ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ২৮ শতাংশ পাস দেখানোর কারণ হলো, আমাদের পড়াশোনার সিস্টেমে সমস্যা। একজন শিক্ষার্থী যখন প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়, তখন সে কী করে সাতটি বিষয়ের মধ্যে তিন অথবা চারটি বিষয় ভালো করে পড়ে বাকি তিনটি রেখে দিতে পারে দ্বিতীয় বর্ষের জন্য? কারণ এখন তো খুব সহজেই ইমপ্রুভমেন্ট পরীক্ষা দেওয়া যায়। আমাদের সময় এই পরীক্ষা সহজে দেওয়া যেতো না। কেউ যদি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ৪০ শতাংশের নিচে নাম্বার পেতো তখন ইমপ্রুভমেন্ট দেওয়া যেতো। তার ফলে কিন্তু রেজাল্টও ভালো হতো না, শিক্ষকরাও এটাকে ভালো চোখে দেখতেন না। যার জন্য ইমপ্রুভমেন্টের ক্ষেত্রে একটা অনীহা কাজ করতো। কিন্তু বর্তমানে বিষয়টা খুবই সহজ। এখন অনেকেই দুই-তিন বিষয় পরীক্ষায় অংশগ্রহণই করে না। পরের বছর ইমপ্রুভমেন্ট দেয়।’

তিনি আরও বলেন ‘প্রথম বর্ষের সবগুলো বিষয়ে পাস না করেই অনেক শিক্ষার্থী দ্বিতীয় বর্ষে উঠে যায়, এইভাবে দ্বিতীয় বর্ষেরগুলো তৃতীয় বর্ষে, তৃতীয় বর্ষেরগুলো চতুর্থ বর্ষে। আবার চতুর্থ বর্ষেরগুলো মাস্টার কোর্স সম্পন্ন করে। অনেক সময় এমনও দেখা যায়, চতুর্থ বর্ষে উঠে গেছে, কিন্তু প্রথম বর্ষের সাবজেক্টে পাস করা বাকি। আর ইমপ্রুভমেন্টের নাম্বার আমাদের কাছ থেকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কমিটির কাছে যেতে সময় লাগে। যার ফলে এই বিশাল অকৃতকার্যের হার দেখা দেয়। এখানে মূলত আমাদের সমস্যা, কারণ আমরা এই সিস্টেম মেনে নিচ্ছি।’

‘শিক্ষার্থীদের ফল খারাপ হওয়ার পেছনে রয়েছে আমাদের আবাসন ব্যবস্থার সংকট। হলের শিক্ষার্থীদের বাধ্য হয়ে মিছিল-মিটিংয়ে যেতে হয়, তারা পড়ালেখার সময় পায় না। পরীক্ষা চলাকালেও তাদের জড়াতে হয় মারামারিতে। হলগুলোতে ন্যূনতম পড়ার পরিবেশ নেই। প্রথম বর্ষ থেকেই শিক্ষার্থীদের জন্য একটা সুষ্ঠু পড়ালেখার পরিবেশ তৈরি করা গেলে, এই ধরণের শিক্ষার নিয়ম পরিবর্তন করা গেলে এবং ইমপ্রুভমেন্ট পরীক্ষার ক্ষেত্রে অনীহা সৃষ্টি করা গেলে, এ অবস্থার সৃষ্টি হতো না,’– বলেন অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন।

হলের শিক্ষার্থীদের পড়ার ন্যূনতম পরিবেশ নেই বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক অধ্যাপক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের তানজিম উদ্দীন খান। এই অধ্যাপক বলেন, ‘যেসব শিক্ষার্থী ভালো ফল করতে চায়, তারা হলে থাকতে চায় না। হলগুলোতে পড়ালেখার কোনও পরিবেশ নেই। শিক্ষার্থীদের গেস্টরুমে নিয়ে যাওয়া, জোর করে মিছিলে নিয়ে যাওয়া– এগুলো নজিরবিহীন ঘটনা। আগে শুধু ছাত্রদল, ছাত্রলীগের কর্মীদের নিয়ে যাওয়া হলেও বর্তমানে সাধারণ শিক্ষার্থীদেরও নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনগুলো তাদেরকে পদাতিক বাহিনীতে পরিণত করছে। আরও দুঃখজনক বিষয় হলো, আমাদের প্রশাসনের যতটুকু সচেতন হওয়া দরকার ততটুকু সচেতন না। আর এর প্রভাব পড়ছে শিক্ষার্থীদের অ্যাকাডেমিক রেজাল্টে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগই ঢাকার বাইরে থেকে আসে। তাই তাদের আবাসন ব্যবস্থা বিশ্ববিদ্যালয়কেই নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে নতুন শিক্ষার্থীদের প্রাধান্য দিতে হবে এবং অবশ্যই সেটা মেধার ভিত্তিতে। তবে এটি করা হয়নি রাজনৈতিক কারণে। শিক্ষার্থীদের প্রথম বর্ষ থেকে সিট না দেওয়ার মতো ভুল আর থাকতে পারে না। এটি বহাল থাকার কারণ, রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল।’

শিক্ষার্থীবান্ধব যুগোপযোগী মূল্যায়ন পদ্ধতি প্রয়োজন

বর্তমানে শিক্ষার্থীদের যেভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে, সেটি যুগোপযোগী নয়। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষার্থীদের আর্থিক-সামাজিক ও পারিপার্শ্বিক দিকগুলো বিবেচনায় নিয়ে বর্তমান মূল্যায়ন পদ্ধতিকে উন্নত করা প্রয়োজন বলে মনে করেন শিক্ষাবিদরা। অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন পদ্ধতিতে পরিবর্তন প্রয়োজন। প্রশ্ন মানে পরিবর্তন প্রয়োজন, আমরা শিক্ষার্থীদের গরু রচনা লেখার মতো প্রশ্ন করি। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের পরবর্তী বর্ষে উন্নতির জন্য নিয়মনীতির পরিবর্তন প্রয়োজন।’

শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান বলেন, ‘মূল্যায়ন পদ্ধতি বিশ্ববিদ্যালয় ভাগভিত্তিক হয়ে থাকে। শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে আগের তুলনায় আমরা পিছিয়ে আছি, আমাদের আরও উন্নতি করতে হবে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখা যায়, একটা অ্যাসাইনমেন্টই একটা কোর্স, সেটি হয়ে থাকে একশ’ নাম্বারে এবং সেখানে কী কী থাকবে, সে নির্দেশনা দেওয়া হয়। সেটি করার জন্য শিক্ষার্থীদের অনেক পড়াশোনা করতে হয়, গবেষণা করতে হয়, আড্ডা দিতে হয়। কিন্তু আমরা দেখি, শিক্ষার্থীদের অনেক অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হয়, সেখানে তারা কী লেখে, সেটি ভালোভাবে দেখা হয় না। শিক্ষার্থীদের লেভেল স্ট্যান্ডার্ড ব্যবস্থা নেওয়া উচিত কিন্তু আমরা নিতে পারছি না।’

তিনি আরও জানান, বিশ্বের সব বিশ্ববিদ্যালয় এবং তাদের বিভাগগুলো শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে নিজস্ব নীতিমালা গ্রহণ করে। পরবর্তী বর্ষে বা সেমিস্টারে প্রোমোশন দেওয়ার ক্ষেত্রে ন্যূনতম একটি শর্ত নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। একটা নির্দিষ্ট পার্সেন্টেজ না পেলে প্রোমোশন পাবে না। তবে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে যেটি ঘটেছে, সেটি অস্বাভাবিক। আমাদের এখানে এমন কোনও শিক্ষার্থী ভর্তি হয় না, যাদের মধ্যে শুধু ২৮ শতাংশ পাস করবে। শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন পদ্ধতি অবশ্যই যুগোপযোগী করা উচিৎ। সেক্ষেত্রে আমাদের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পারিপার্শ্বিক অবস্থাকে বিবেচনা করতে হবে। আমাদের শিক্ষার্থীরা কে কোথায় থাকে, কত জন হলে থাকে, তাদের পড়ার পরিবেশ– এগুলো বিবেচনায় নেওয়া দরকার। মূল্যায়নের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী সুবিধা ও যুগোপযোগী পদ্ধতি অনুসরণ করা উচিৎ বলে মনে করেন মোহাম্মদ মজিবুর।

/আরকে/এমএস/
সম্পর্কিত
কোড সামুরাই হ্যাকাথনের দ্বিতীয় পর্বের ফল প্রকাশ, ৪৬ দল নির্বাচিত
ঢাবির সুইমিংপুলে শিক্ষার্থীর মৃত্যু: বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটি
অ্যাকাডেমিক মান উন্নয়নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘মাস্টারপ্ল্যান’
সর্বশেষ খবর
মশা তাড়ানোর ৫ প্রাকৃতিক উপায়
মশা তাড়ানোর ৫ প্রাকৃতিক উপায়
মেলা থেকে অস্ত্রের মুখে দুই নারীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ
মেলা থেকে অস্ত্রের মুখে দুই নারীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ
তীব্র গরমে সিল্কসিটি ট্রেনে আগুন
তীব্র গরমে সিল্কসিটি ট্রেনে আগুন
দ্বিতীয় বিয়ে করায় স্বামীর অঙ্গহানি করলেন স্ত্রী
দ্বিতীয় বিয়ে করায় স্বামীর অঙ্গহানি করলেন স্ত্রী
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
ট্রাকেই পচে যাচ্ছে ভারত থেকে আনা আলু, বাজারে ৫৫ টাকা কেজি
ট্রাকেই পচে যাচ্ছে ভারত থেকে আনা আলু, বাজারে ৫৫ টাকা কেজি