X
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪
১৮ বৈশাখ ১৪৩১
শিক্ষক দিবস আজ

 ‘সমাজে শিক্ষকদের অবস্থান যেকোনও সময়ের চেয়ে দুর্বল’

আবিদ হাসান
২৭ অক্টোবর ২০২২, ০৮:০০আপডেট : ২৭ অক্টোবর ২০২২, ১০:০৯

‘শিক্ষকরা মানুষ গড়ার কারিগর। অন্ধকার জাতিকে আলোর পথ দেখানোর কাজ করেন তারা। কিন্তু বর্তমানে শিক্ষকরা অনেকে রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে শিক্ষকতাকে গৌণ করে ফেলেছেন। যার কারণে বর্তমানে সমাজে শিক্ষকদের অবস্থান আগের যেকোনও সময়ের চেয়ে দুর্বল হয়ে গেছে’, এমন মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক।

বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) ‘শিক্ষক দিবস’ উপলক্ষে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. তানজিম উদ্দিন খান এবং শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান। এদিকে শিক্ষক দিবস উপলক্ষে সব শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন ঢাবি উপাচার্য ড. মো. আখতারুজ্জামান।

উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামানের কাছে তার প্রিয় উপাচার্য কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোনও উপাচার্যের সঙ্গে ওভাবে মেলামেশার সুযোগ হয়নি। তবে সব উপাচার্যের প্রতি শ্রদ্ধা রয়েছে। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিতে কাজ করেছেন। বিশেষ কারও প্রতি ভালোলাগার কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।

শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা জীবনে যার কাছ থেকে শিখেছি সবাই আমাদের শিক্ষক, আমরা যে হলে থেকেছি সেখানে যিনি দায়িত্ব পালন করেছেন, তারাও আমাদের শিক্ষক, এভাবেই আমাদের ভাবতে হবে এবং সবার প্রতি শ্রদ্ধা।’

ঢাবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. তানজিম উদ্দিন খান বলেন, ‘শিক্ষকদের জন্য এখন একটা সংকটের সময়। শিক্ষকরা এখন শিক্ষক হিসেবে বেশি পরিচিত না। শিক্ষকরা রাজনৈতিক অভিলাস চরিতার্থ করতে গিয়ে শিক্ষকতাকে গৌণ  করে ফেলেছি। এই কারণে সমাজে শিক্ষকদের অবস্থান আগের যেকোনও সময়ের চেয়ে দুর্বল হয়ে গেছে। এই জায়গা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। অপরদিকে  শিক্ষার্থীরা আমাদের যেভাবে বুঝতে চায়, তাদের সামনে আমরা নিজেদের সেভাবে উপস্থাপন করতে পারি না। শিক্ষক দিবসে আমাদের মনে করা উচিত— শিক্ষার্থী ছাড়া কেউই শিক্ষক হয়ে ওঠেন না। আবার শিক্ষক ছাড়া কেউ শিক্ষার্থীও হয়ে ওঠেন না।’

শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান বলেন, ‘মা-বাবার পরেই শিক্ষকরাই শিক্ষার্থীদের মনে সবচেয়ে বড় জায়গায় দখল করে। এটা প্রাইমারিতে একরকম, মাধ্যমিকে একরকম, আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে আরেক রকম। বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। আমরা এমনও দেখেছি, বাবা-মা অনেক  পড়াশোনা জানা সত্ত্বেও প্রাথমিকের অনেক শিক্ষার্থী তাদের কথা না মেনে বলে— ‘আমার শিক্ষক বলেছে’, অর্থাৎ শিক্ষকের কথা শুনে। এরপর তারা যখন অ্যাডাল্ট হয়, তখন তারা বাস্তবিকতা বুঝতে শেখে, সমালোচনা করতে শেখে, প্রশংসা করতে শেখে। তখন তাদের আর অন্ধ বিশ্বাসের  জায়গাটা থাকে না।’’

শিক্ষকরা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ

বাংলাদেশে সার্বিকভাবে শিক্ষকরা তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ বলে উল্লেখ করে এই শিক্ষাবিদ বলেন, ‘বাংলাদেশ ওভারঅল ব্যবস্থাটা হলো শিক্ষক হিসেবে যে দায়িত্ব পালন করার কথা, তারা সেটি করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। প্রশ্ন হলো, কীভাবে ব্যর্থ হচ্ছেন, কেন ব্যর্থ হচ্ছেন এবং সেটি কীভাবে রিকভার করা যায়। প্রথমত কথা হলো— শিক্ষকতা পেশায় কারা আসছেন? ৫০ বছর আগে যেরকম দেখেছি, এখন দেখছি তার ভিন্ন চিত্র। বর্তমানে কেন যেন মেধাবী শিক্ষার্থীরা এ পেশায় আসতে চাচ্ছেন না। অন্যান্য পেশাতে তারা চলে যাচ্ছেন। বিশেষ করে ক্ষমতাকেন্দ্রিক, অর্থকেন্দ্রিক  বিষয়গুলোর দিকে তারা ধাবিত হচ্ছেন। যারা আরও  বেশি সক্ষম, আরও  যোগ্যতাসম্পন্ন তারা না আসার কারণে শিক্ষা ব্যবস্থায় এক ধরনের শূন্যতা তৈরি হয়ে গেছে।’

যে তিনটি গুণ শিক্ষকদের থাকা দরকার

শিক্ষকদের তিনটি আবশ্যিক গুণের কথা উল্লেখ করে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান বলেন, ‘একজন শিক্ষকের তিনটি গুণাবলি আবশ্যক। তার মধ্যে অন্যতম প্রধানটি হলো সেই শিক্ষক হতে চাই কিনা, নাকি বাই-চান্স শিক্ষক হয়ে গেছেন। আমরা বিসিএসে দেখি, অনেকেরই শেষ দিকের পছন্দের তালিকায় থাকে শিক্ষকতা। প্রথম দিকের যে শর্তটা, সেখানে আমরা মেজরিটি শিক্ষকদের পাচ্ছি না। অধিকাংশ শিক্ষকই শিক্ষকতাকে ভালোবেসে পেশায় আসছেন না। দ্বিতীয়ত হলো— ‘কনটেক্সট নলেজ’ বা বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান। যিনি যে বিষয়ে পড়াবেন, তাকে সে বিষয়ে গভীর জ্ঞান রাখতে হবে। আমরা অনেক সময় দেখি যে, শিক্ষকরা গ্র্যাজুয়েশন করে আসার পরও অনেক ঘাটতি থাকে। তৃতীয় বিষয়টি হলো— শিখন পদ্ধতি সম্পর্কে জানা। অর্থাৎ একজন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের কীভাবে পড়াবেন, সে বিষয়ে জানা। প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের কীভাবে পড়াবেন, মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের কীভাবে পড়াবেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কীভাবে পড়াবেন?’

শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা যাচ্ছে না

শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় ট্রেনিং নিশ্চিত করা যাচ্ছে না উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘অনেকে আছেন, অনেক আগ্রহ নিয়ে আসেন, সে বিষয়ে তার অনেক জ্ঞানও আছে। কিন্তু তিনি সে বিষয়টি কীভাবে শিক্ষার্থীদের কাছে উপস্থাপন করবেন বা কাজে লাগাবেন, সে বিষয়ে তার গ্যাপ রয়ে গেছে। প্রাথমিক শিক্ষা থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পর্যন্ত এটি রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেশি রয়েছে। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের কোনও ব্যবস্থা নেই। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষকরা প্রশিক্ষণের পর্যাপ্ত সুযোগ পাচ্ছেন না। একদিকে অনেক শিক্ষক  অবসরে চলে যাচ্ছেন, অপরদিকে নবীন  শিক্ষকরা আসছেন। কিন্তু যে পরিমাণ শিক্ষক আসছেন, সেই পরিমাণে তাদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না। অতীতের তুলনায় শিক্ষার্থীদের মনে শিক্ষকদের যে একটা প্রভাব ছিল— তাদের মনোজগৎ গঠনের ক্ষেত্রে, তাদের ভবিষ্যৎ লক্ষ্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে, সেই প্রভাব কমে এসেছে।’

‘এখন এই বিষয়টি থেকে যদি আমরা উত্তর চাই, তাহলে প্রথম কাজ হলো— এই পেশায় মেধাবী ও যোগ্যদের নিয়ে আসা। তাদের সম্মানি বাড়িয়ে দিতে হবে। সোশ্যাল সেফটির ইনফিনিটি জায়গাটা আমরা নিশ্চিত করবো। অন্য পেশার চেয়ে এই পেশাটা যেনো তারা পছন্দ করেন, সেই সুযোগ-সুবিধা আমরা এখানে তৈরি করে দেবো। দুই নম্বর হলো— যারা এ পেশায়  আসবেন, তাদেরকে যেনো আমরা ধরে রাখতে পারি, চলে যেনো না যান। তিন নম্বর হলো— তারা যে জ্ঞান ও আকাঙ্ক্ষা নিয়ে এসেছেন, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের সময় যেন তারা সেই বিষয়টা কাজে লাগাতে পারেন। সে জন্য পর্যাপ্ত ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে শিক্ষকরা শিক্ষার উন্নয়নে ও জাতির উন্নয়নে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।’

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ঘরের মাঠে পিএসজিকে হারিয়ে এগিয়ে থাকলো ডর্টমুন্ড
চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনালঘরের মাঠে পিএসজিকে হারিয়ে এগিয়ে থাকলো ডর্টমুন্ড
ইজিবাইক ছিনতাইয়ের সময় স্থানীয়দের পিটুনিতে একজনের মৃত্যু
ইজিবাইক ছিনতাইয়ের সময় স্থানীয়দের পিটুনিতে একজনের মৃত্যু
স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে শ্রমিকরাও অংশীদার হবে: এমপি কামাল
স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে শ্রমিকরাও অংশীদার হবে: এমপি কামাল
মোস্তাফিজের শেষ ম্যাচে চেন্নাইয়ের হার
মোস্তাফিজের শেষ ম্যাচে চেন্নাইয়ের হার
সর্বাধিক পঠিত
শিশু ঝুমুরকে ধর্ষণ ও হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখ মুছলেন র‌্যাব কর্মকর্তা
শিশু ঝুমুরকে ধর্ষণ ও হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখ মুছলেন র‌্যাব কর্মকর্তা
মিল্টন সমাদ্দার আটক
মিল্টন সমাদ্দার আটক
আজও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে, পথচারীদের জন্য শরবত-পানির ব্যবস্থা
আজও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে, পথচারীদের জন্য শরবত-পানির ব্যবস্থা
একজন অপরাধীর গল্প বলতে চেয়েছিলেন তিশা
একজন অপরাধীর গল্প বলতে চেয়েছিলেন তিশা
সিয়াম-পরীর গানের ভিউ ১০০ মিলিয়ন!
সিয়াম-পরীর গানের ভিউ ১০০ মিলিয়ন!