প্রশিক্ষণ ছাড়া বিএড সনদ বিক্রির অভিযোগে লাল তালিকাভুক্ত দেশের ২৩টি বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ দেশব্যাপী গুজব ও বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। প্রশিক্ষণ নিয়ে বাণিজ্য করার উদ্দেশ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদফতরের বাতিল করা চিঠি প্রচার করে এই বিভ্রান্তি ছাড়ানো হচ্ছে। বিভ্রান্তি ছড়ানোর ঘটনায় এর আগেও বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
নতুন করে এই গুজব ও বিভ্রান্তি ছড়ানো হলে তা ঠেকাতে রবিবার (২৯ অক্টোবর) বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করেছে বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ শিক্ষক সমিতি। এতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ আদেশ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ নিয়ে বিভ্রান্তি নিরসনের দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন কলেজের অধ্যক্ষ ও বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম খান। এ সময় সমিতির সেক্রেটারি জেনারেল উপাধ্যক্ষ বাবুল হোসেন এবং সমিতির অন্য নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম খান জানান, ১৯৯২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের যাত্রা শুরু হয়। ১৯৯৬ সালে বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে প্রথম অধিভুক্তি লাভ করে। এরপর ২০০৮ সাল থেকে কিছু কিছু মানহীন কলেজের ব্যর্থতার কারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি পর্যবেক্ষণ টিম সারা দেশের বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজগুলোকে পরিদর্শন করে প্রশিক্ষণের মান নির্ণয়ের চেষ্টা করেন। প্রশিক্ষণের গুণগতমান বজায় রাখতে ব্যর্থ হওয়ায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন টিম ৩৮টি বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজকে লাল তালিকাভুক্ত করে তা বন্ধের সুপারিশ করে। কিন্তু সরকারের আদেশের বিরুদ্ধে ২৩টি কলেজ আদালতে মামলা করার কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তাদের বন্ধ করতে পারেনি। ফলে প্রতি বছর প্রশিক্ষণার্থী ভর্তির সময় কলেজগুলো গুজব-বিভ্রান্তি ছড়িয়ে বলছে ২৩ কলেজের বাইরে ভর্তি করানো যাবে না। অথচ দেশে অধিভুক্ত বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ রয়েছে ৭০টির বেশি।
নজরুল ইসলাম বলেন, লাল তালিকাভুক্ত কলেজগুলোর ২০০৮ সালে করা মামলার রায় হয়েছে ২০১৫ সালে। রায়ে লাল তালিকাভুক্ত কলেজ থেকে যারা পাস করেছে তাদেরকে এমপিও স্কেল দিতে বলা হয়। কিন্তু কলেজগুলোর বর্তমান-ভবিষ্যৎ নিয়ে আদালত কোনও প্রকার পর্যবেক্ষণ দেননি। ফলে কলেজগুলোর মালিক পক্ষ একটি অনলাইন পত্রিকার মাধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে যাচ্ছে। প্রশিক্ষণার্থী নিয়ে বাণিজ্য করার জন্য তারা বলছে— ২৩টি কলেজ ছাড়া অন্য কলেজ থেকে বিএড করলে তাদের সনদ গ্রহণযোগ্য হবে না। যা আদালত অবমাননার শামিল। কারণ সারা দেশে অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠান রয়েছে প্রায় ৭০টি।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আদালতের রায়ের ভুল ব্যাখ্যা করে ২০১৯ সালে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদফতর থেকে সেই ২৩টি কলেজের পক্ষে পত্র দেওয়া হয় মাঠ পর্যায়ে। পরে ওই ভুল চিঠি বাতিল করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর। একইভাবে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখাও দুটি ভুল পত্র দেয়, যা ২০২৩ সালে বাতিল করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এসব বাতিল আদেশ নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর কারণে অনেক জেলা ও উপজেলা/থানা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সঠিক আদেশ বাস্তবায়নে গড়িমসি করছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়।