দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে শিল্প খাত ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা বাড়াতে একটি পলিসি পেপার তৈরি করবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। দেশে মধ্যম সারির ব্যবস্থাপক ও দক্ষ জনবল তৈরি করতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সহযোগিতার সম্পর্ক জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছে ইউজিসি।
রবিবার (১০ মার্চ) ইউজিসিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ে বাজার চাহিদার প্রতি লক্ষ্য রেখে দেশে মধ্যম সারির ব্যবস্থাপক তৈরি সংক্রান্ত এক সভায় পলিসি পেপার তৈরিরি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে মধ্যম সারির ব্যবস্থাপক ও দক্ষ জনবল তৈরির আহ্বান জানানো হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন ইউজিসির চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর। ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেন। মধ্যম সারির ব্যবস্থাপক ও দক্ষ জনবল তৈরির লক্ষ্যে একটি নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ, যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ, শিল্প ও বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি, ভাষা দক্ষতা, ইন্টার্নশিপ ও ট্রেড কোর্স বাধ্যতামূলকভাবে চালু করা, দক্ষতার ধরন পরিবর্তন, সফট স্কিলস বাড়ানো, ল্যাব সুবিধা বৃদ্ধি ও জব ফেয়ার আয়োজনের করার সুপারিশ করা হয়। এছাড়াও চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় উচ্চশিক্ষা কারিকুলাম যুগপোযোগী করা এবং কারিকুলাম প্রণয়নে শিল্প প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিদের যুক্ত করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
সভায় অধ্যাপক আলমগীর বলেন, বাংলাদেশে ব্লেন্ডেড শিক্ষা পদ্ধতি বাস্তবায়ন এবং বাজারভিত্তিক দক্ষতা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান নিশ্চিতকরণ বিষয়ে জাতীয় টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের শ্রমবাজারের উপযোগী করে গড়ে তুলতে দেশের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পারেন। এক্ষেত্রে তারা জাপানসহ উন্নত দেশের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করতে পারে। যুগের চাহিানুসারে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করা না গেলে বিদেশি কর্মীদের কাজ করার সুযোগ রোধ করা যাবে না।
অধ্যাপক আবু তাহের বলেন, প্রতি বছর প্রায় ২০ লাখ মানুষ চাকরির বাজারে প্রবেশ করছে। ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে হলে এসব জনগোষ্ঠীর উপযুক্ত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে।
টিআইবি প্রতিবেদনের তথ্য উল্লেখ করে অধ্যাপক আবু তাহের আরও বলেন, দেশের ১ দশমিক ১৫ কোটির বেশি শ্রমিক বছরে ২০-২২ বিলিয়ন বৈদিশিক মুদ্রা আয় করছে। অন্যদিকে, মাত্র ২ দশমিক ৫ লাখ বিদেশি কর্মী ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার দেশ থেকে নিয়ে যাচ্ছে। বাজারের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলা না গেলে অর্থের বহিঃপ্রবাহ রোধ করা যাবে না। দেশের ৭ দশমিক ৩ কোটি কর্মক্ষম জনবলের দক্ষতা উন্নয়নে ১৪টি প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় স্বার্থে একসেঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।
সভায় বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জি এস এম জাফর উল্লাহ, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম হাবিবুর রহমান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমদাদুল হক চৌধুরী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন আহমদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শাহ আলিমুজ্জামান, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সৈয়দ মিথুন আলী, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আব্দুর রব খান, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আলী আকবর খান, বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির ভাইস-চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান চৌধুরী, বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি মাহবুবুল আলম, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিব মো. সারওয়ার হোসেন এবং বিজিএমইএ’র সিনিয়র সহকারী সচিব রাশেদুল ইসলাম অংশ নেন।
