X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

হ‌ুমায়ূন আহমেদ প্রসঙ্গে জাফর ইকবাল: যদি জানতাম দূরত্বটা ঘোচানোর চেষ্টা করতাম

রায়হানুল ইসলাম আকন্দ, গাজীপুর প্রতিনিধি
১৪ নভেম্বর ২০১৬, ০০:০২আপডেট : ১৪ নভেম্বর ২০১৬, ১৪:৩৩

জাফর ইকবাল ও হুমায়ূন আহমেদ। কোলাজ ছবি নন্দিত ও দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হ‌ুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পর ভাই সম্পর্কে সে অর্থে তেমন কিছুই বলেননি লেখক-বিজ্ঞানী মুহম্মদ জাফর ইকবাল। তবে রবিবার হুমায়ূনের জন্মদিনে নুহাশ পল্লীর ছায়ায় দাঁড়িয়ে বাংলা ট্রিবিউনকে বললেন অনেক কথাই।

শুরুটা করলেন এভাবে- ‘হ‌ুমায়ূন আহমেদকে রক্ষা করতে হবে বলে আমার মনে হয় না। কারণ সে যত বই লিখে গিয়েছে, যতদিন বাংলাদেশের কিংবা পৃথিবীর অন্য সব জায়গার বাঙালিরা সে বইগুলো পড়বে, ততদিন হ‌ুমায়ূন আহমেদ বেঁচে থাকবে। সে যে নাটকগুলো করেছে, যে সিনেমাগুলো করেছে- এগুলো যতদিন মানুষ দেখবে, ততদিন হ‌ুমায়ূন আহমেদ বেঁচে থাকবে। হ‌ুমায়ূনকে আলাদাভাবে বাঁচিয়ে রাখার জন্য আমাদের কারও চেষ্টা করতে হবে বলে মনে হয় না।’
এদিকে হ‌ুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে কেউ অন্যায় বাণিজ্য করছে কিনা- সে বিষয়েও কথা বলেছেন এই জনপ্রিয় শিক্ষক-সাহিত্যিক। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যে জিনিসটা দেখা দরকার তা হলো- তাকে নিয়ে অনেকেই তো অনেক ধরনের বাণিজ্য করছেন ওই জিনিসগুলো মাঝে মধ্যে আমাকে অনেক কষ্ট দেয়। যারা তাকে নিয়ে বাণিজ্য করছেন সেটা সঠিকভাবে করছেন কিনা- এটা আমার জানার কৌতূহল রয়েছে।’
এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, ‘বাণিজ্য কথাটা হয়তো শুনতে অনেকটা খারাপ শোনা যাচ্ছে। বাণিজ্যটা বন্ধ করার হয়তো কোনও প্রয়োজন নাই। কারণ তারা হ‌ুমায়ূন আহমেদকে অন্যান্য জায়গায় ছড়িয়ে দিচ্ছে। কিন্তু বাণিজ্যটা এককভাবে করছে। হ‌ুমায়ূন আহমেদের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা আছে। তার ইনটেলেকচুয়াল প্রপার্টিগুলোর মালিক তো আসলে তারা। যারা বাণিজ্য করছেন তারা ঠিকভাবে তাদের রয়্যালিটি দিচ্ছেন কিনা? সে জিনিসগুলো হয়তো খোঁজ নেওয়া যেতে পারে। আমি কখনও সেগুলোর খোঁজ নিইনি।’

উদাহরণ টেনে জাফর ইকবাল আরও বলেন, ‘যেমন কিছুদিন আগে খবর পেলাম, তার একটা নাটক হিন্দি ভাষায় ডাবিং হয়ে সারাবিশ্বে প্রচার হচ্ছে। এটা নিশ্চয়ই বিশাল একটা বাণিজ্যিক ব্যাপার। এ ক্ষেত্রে আমার প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে, এর বাণিজ্যের ক্ষেত্রে তার উত্তরাধিকারের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে করেছেন কিনা? আমি ধরে নিচ্ছি, এর সঙ্গে যেহেতু বড় বড় প্রতিষ্ঠান জড়িত তারা নিশ্চয়ই আইন মেনে কাজগুলো করছে। এ নাটকগুলো হিন্দি ভাষায় হওয়ার কারণে হিন্দি ভাষাভাষি বিশাল জনগোষ্ঠীসহ বিশ্বের এক বিলিয়ন মানুষ কেন দেখবে না? দেখুক। কিন্তু অনুমতি কি নিয়েছে? এটা আমার জানার ইচ্ছা।’

হ‌ুমায়ূন প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে ড. জাফর ইকবাল আরও বলছেন, তার সমস্ত বিষয় নিয়ে আসলে গবেষণার ব্যাপার আছে।
বলেন, ‘হ‌ুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে চর্চা বা গবেষণা হতেই পারে। আমি নিজেই যেহেতু লিখি, কাজেই লেখার ব্যাপারটা বা প্রক্রিয়াটার সঙ্গে অমি পরিচিত। কাজেই আমার কাছে খুব রহস্যময় বলে মনে হয়, মানুষটি কেমন করে এত সহজে কোনও জিনিস লিখে, যে জিনিসটা সবাই এত উপভোগ করে! তার বাক্যগুলো ছোট ছোট। পাঁচ শব্দ ছয় শব্দে একটা করে বাক্য লিখে। আমি যখন কিছু লিখি অনেক লম্বা লাইন না লিখে আমি একটা জিনিস বুঝাতে পারি না। কিন্তু হ‌ুমায়ূন আহমেদ কেমন করে একই জিনিস পাঁচটা শব্দের একটা বাক্য লিখে এত সহজে বুঝিয়ে দিতে পারে? সেটাই আমি বুঝি না। তাই তাকে নিয়ে গবেষণার সুযোগ রয়েছে।’

একই প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘হ‌ুমায়ূন আহমেদের সেন্স অব হিউমার কিংবা লিখতে লিখতে হঠাৎ করে একটা জায়গায় কী রূপে ‘একটা’ পরিবর্তন করে দিলো, একটা কঠিন কষ্ট বা খুব দুঃখের জিনিস সে কীভাবে বললো- তার সমস্ত বিষয় নিয়ে আসলে গবেষণার ব্যাপার আছে। আগে হোক পরে হোক, তাকে নিয়ে গবেষণা হবে। একজন মানুষ এত জনপ্রিয় হতে পারে, তা আমার আপন ভাই হয়েও আমি জানতাম না। সে যখন মারা গেছে, তখন আমরা টের পেয়েছি বাংলাদেশের মানুষ তাকে কত ভালোবাসে! পুরো দেশ কার্যত কয়েকদিন অচল ছিল। মানুষ টেলিভিশনের সামনে বসেছিল দেখার জন্য যে কী হচ্ছে, না হচ্ছে। পরে আমি খোঁজও নিয়েছিলাম এর কারণটা কী? আমাদের টেলিভিশনগুলো একটা হাইপ তৈরি করে জোর করে মানুষকে দেখাচ্ছে নাকি এটা বাস্তব? আমি দেখেছি, এটা আসলেই বাস্তব।’

‘একজন সাহিত্যিক এত জনপ্রিয় হতে পারে! আমার জানামতে পৃথিবীতে মনে হয় এরকম কোনও উদাহরণ নেই। শুধু লিখে একজন সাধারণ মানুষ এত জনপ্রিয় হয়েছিল! কেন হলো, কীভাবে হলো, কারণটা কী? কী লিখে, কেন লিখে, কীভাবে লিখে? আমি নিশ্চিত, এগুলো নিয়ে অনেক গবেষণা হবে।’

বড় ভাই হ‌ুমায়ূনকে নিয়ে একধরণের অপরাধবোধে ভোগেন ছোট ভাই জাফর ইকবাল। কথায় কথায় সে কথাটাও বললেন তিনি। জাফর ইকবাল বলেন, ‘হ‌ুমায়ূন আহমেদের ব্যক্তিগত জীবনের জন্য বা যে কারণেই হোক তার সঙ্গে আমাদের একটু দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। এখন যেটার জন্য আমি খুব কষ্ট পাই। আমি যদি জানতাম, তাহলে দূরত্বটা ঘোঁচানোর চেষ্টা করতাম, আরেকটু ক্লোজ হওয়ার চেষ্টা করতাম। আমি নিজে একধরণের অপরাধবোধে ভুগি। আসলে তাকে তো...। সে যখন অসুস্থ নিউ ইয়র্কে, তখন কিন্তু আমি সঙ্গে সঙ্গে নিউ ইয়র্কে গিয়েছি। দুভার্গ্যবশত, তখন সে লাইফসাপোর্টে ছিল। কিছু বলতে না পারলেও আমাদের কথা হয়তো সে বুঝেছে কিন্তু উত্তর দিতে পারেনি। তার শূন্যতাটা তো আমরা সবাই খুবই অনুভব করি, প্রতি মুহূর্তেই অনুভব করি। আমার ধারণা, বাংলাদেশে শুধু আমারা বা তার পরিবার নয়, অনেক মানুষ তার অভাবটা খুব অনুভব করে। ওখান থেকেই একটা সান্ত্বনা পাই যে, হুমায়ুন আহমেদ শুধু আমাদের না অসংখ্য মানুষের হ‌ুমায়ূন।’ রবিবার নুহাশ পল্লীতে জাফর ইকবাল

এদিকে, গাজীপুরের পিরুজালী গ্রামের ‘নুহাশ পল্লী’র আয়োজনে হ‌ুমায়ূন সমাধিতে পুষ্পার্ঘ্য দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। সকাল সাড়ে ৯টায় হুমায়ুনপুত্র নিষাদ, নিনিত, স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন সমাধিতে আনুষ্ঠানিকভাবে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
সকাল ১০টার দিকে হ‌ুমায়ূন আহমেদের দুই ভাই ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, ‘উন্মাদ’ সম্পাদক-কার্টুনিস্ট আহসান হাবিবসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা হ‌ুমায়ূন সমাধি জিয়ারত করেন।

/এমএম/এম/

সম্পর্কিত
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
‘জংলি’ মিশনে সিয়ামের সঙ্গী বুবলী
‘জংলি’ মিশনে সিয়ামের সঙ্গী বুবলী
পুরনো লাইনআপে ফিরছে ‘ব্ল্যাক’!
পুরনো লাইনআপে ফিরছে ‘ব্ল্যাক’!
ফটোগ্রাফারদের ওপর খেপলেন নোরা ফাতেহি!
ফটোগ্রাফারদের ওপর খেপলেন নোরা ফাতেহি!
শিল্পকলায় মঞ্চায়িত হলো আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের ‘হি-রোজ’
শিল্পকলায় মঞ্চায়িত হলো আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের ‘হি-রোজ’
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…