বাংলাদেশে এমন সৌভাগ্যবানের সংখ্যা এখন হাতেগোনা দুই-চার জন আছেন। যারা কিংবদন্তি লতা মঙ্গেশকরের স্পর্শ পেয়েছেন সরাসরি। তার মধ্যে অন্যতম কণ্ঠশিল্পী আঁখি আলমগীর। যিনি ২০১৭ সালে লতার বাসায় গিয়ে দেখা করে আসেন। তাকে সেই কিংবদন্তির কাছে নিয়ে যান আরেক নন্দিতজন রুনা লায়লা।
রবিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে ঘুম ভেঙেই বিষাদের খবরটি পান আঁখি। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘খবরটি শোনার পর আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। অস্থির হয়ে আছি।’
এরপর খুলে বসেন স্মৃতির ডালা। এই কিংবদন্তির সঙ্গে দেখা করার গল্পটি তুলে ধরেন বাংলা ট্রিবিউন-এর কাছে। তিনি একটানে বলে যান মুখস্থ—
২৭ মার্চ ২০১৭, আমার জীবনের এক শ্রেষ্ঠতম দিন। যেকোনও শিল্পীর জন্যই হওয়ার কথা। রুনা আন্টি (কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী রুনা লায়লা) আমাকে নিয়ে হাজির হলেন মুম্বাই, এক জীবন্ত কিংবদন্তির বাসায়।
দেখা পেলাম তাঁর। প্রথমে বিশ্বাস হলো না আমি সেখানে আছি। আমি সামনেই, একটু পরেই কাছে ডেকে পাশে বসালেন তিনি। অনেক উপহার দিলেন আমাকে। হায়— আমি যে কিছুই নিয়ে যাইনি তার জন্য। ছিঃ ছিঃ, কী লজ্জা! কিছু একটা তো নেওয়া উচিত ছিল।
অথচ রুনা আন্টি ঠিকই তার জন্য নিয়ে গেছেন অনেক উপহার। আর আমি, একটা মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে রইলাম দুই কিংবদন্তির সামনে। কি বলবো, কি করবো, বাংলা, হিন্দি, ইংরেজি সবই যে ভুলে গেলাম তখন। শুধু বসে রইলাম, তার পায়ের কাছে। হাত দুটো ধরলাম।
সবাই কথা বলছে, কত মজা করছে, হাসি-ঠাট্টা—অথচ আমি খুব বেশি শুনতে পেলাম না এসবের কিছু। তাকিয়ে রইলাম শুধু তার দিকে।
উনি অবাক হয়ে শুনলেন আমি বিদেশ ট্যুর ক্যান্সেল করে এসেছি শুধু একবার তার দেখা পাবো বলে। উনি আমার মাথায় হাত রেখে কতক্ষণ যে আশীর্বাদ করলেন জানি না। আমার চোখ থেকে টপ টপ করে পানি পড়ছে। কিন্তু মুখে হাসি। আমি শুধু তাকে ইংরেজিতে এটুকু বলেছি- আমি দুঃখিত, আমার কান্না আটকাতে পারছি না। এটা শুনে পরম মমতায় আমাকে তার বুকে টেনে নিলেন। মাথায় হাত বুলিয়ে কত আদর করলেন।
উনার বোনের মেয়ে বললেন—কাঁদো, লজ্জা পেয়ো না, তোমার ভালোবাসায় সারা ঘর ভরে গেছে।
সেদিন আরও কত কি হলো, সব বলে শেষ হবে না। তাকে দেখেছি, ছুঁয়েছি, দোয়া নিয়েছি, বুঝাতে পেরেছি আমার ভালোবাসা, এটাই যথেষ্ট। একজন পূজারীর আর কিছুই চাওয়ার থাকে না—সে যখন দেখা পায় তার দেবীর, সে যখন দেখা পায় একজন লতা মঙ্গেশকরের...।
এই বলে শেষ করলেন আঁখি।
প্রসঙ্গত, ১৯২৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর লতার জন্ম এক মারাঠি পরিবারে। বাবার হাত ধরেই গান ও অভিনয়ের জগতে প্রবেশ করেন তিনি। ১৩-১৪ বছরে প্রথম গান গেয়েছিলেন মারাঠি ছবিতে। হিন্দিতে প্রথম প্লেব্যাক করেন ‘মজবুর’ সিনেমা দিয়ে। লতার সুরেলা কণ্ঠ সিনেমা ও গানে প্রাণ ঢেলে দিতো। নক্ষত্রপতনে তাই শোকস্তব্ধ দুনিয়া।
২৭ দিন ধরে করোনা, চলেছে নিউমোনিয়ার সঙ্গে লড়াই। ৯ জানুয়ারি লতার করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসে। এরপর তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে। সেখানে অবস্থার অনেকটাই উন্নতি হয়েছিল লতার। ৩০ জানুয়ারি তাঁর করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। ভেন্টিলেশন থেকে বের করেও নিয়ে আসা হয় সুরসম্রাজ্ঞীকে। এরপর আজ (৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে না ফেরার দেশে চলে গেলেন লতা মঙ্গেশকর।