‘হঠাৎ খবরটা পাওয়ার পর কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছিল না। মনকে মানাতে পারছিলাম না। গাজী ভাই ও তার পরিবারের সঙ্গে আমার ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে সম্পর্ক। কত স্মৃতি, কত রকম কথা, কত গান, কোনটা ছেড়ে কোনটা বলবো!’
সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে কান্না জড়ানো কণ্ঠে কথাগুলো বললেন কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন। বাংলা গানের চিরস্মরণীয় গীতিকবি গাজী মাজহারুল আনোয়ারের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এসে অশ্রুসিক্ত হন তিনি। সাবিনা জানান, কবির লেখা ৬-৭ হাজার গানে তিনি কণ্ঠ দিয়েছেন।
গানের পাখির ভাষ্য, ‘তিনি ২০ হাজারের মতো গান লিখেছেন, আমার মনে হয় এরমধ্যে আমিই ৬-৭ হাজার গান গেয়েছি। গাজী ভাই, সত্যদা (সত্য সাহা) আমরা একটি টিমের মতো ছিলাম। একসঙ্গে অসংখ্য গান করেছি। কত ঘটনা, কত স্মৃতি, এগুলো এখন বলাও সম্ভব না। এই দিনটা যে এভাবে দেখতে হবে, কল্পনাও করিনি কখনও।’
শহীদ মিনারে গাজী মাজহারুল আনোয়ারের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন নন্দিত কণ্ঠশিল্পী কুমার বিশ্বজিৎও। বিষণ্ণ মনে তিনি বললেন, ‘আসলে মৃত্যু অনিবার্য। জন্ম নিলে মৃত্যু আসবেই। কিন্তু কিছু কিছু মৃত্যু আমাদের মনে অন্যরকম নাড়া দেয়। যেহেতু গত দশ বছর ধরে আমরা একে একে অভিভাবকশূন্য হয়ে যাচ্ছি, আমাদের গুরুজনেরা চলে যাচ্ছেন। এই শূন্যতা কীভাবে পূরণ করা যাবে, আমি জানি না।’
বাংলা গানে একটি মাইলফলক তৈরি করেছেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার। সে কথা উল্লেখ করে কুমার বিশ্বজিৎ আরও বলেন, “গাজী ভাই আমাদের বাংলা গানের কালপুরুষ। ওনাকে দেখেই অনেকে গান লেখা শিখেছেন। উনি ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ লেখার পর যদি আর গান না-ও লিখতেন, তবু তিনি চিরস্মরণীয় থাকতেন। এই গান আমাকেও দারুণভাবে নাড়া দিয়েছিল। স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে আমরা ওনার কাছে সারা জীবন ঋণী থাকবো, কৃতজ্ঞ থাকবো। তিনি এমন উচ্চতায় বাংলা গানকে নিয়ে গেছেন, সেটা একটি মাইলফলক। ওই জায়গায় যাওয়া তো প্রায় অসম্ভব, এরপরও বর্তমান প্রজন্ম যদি ওনাকে অনুসরণ করে, তাহলেও বাংলা গান সমৃদ্ধ হবে।”
প্রসঙ্গত, রবিবার (৪ সেপ্টেম্বর) সকালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান গাজী মাজহারুল আনোয়ার। আজ সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) বাদ আসর বনানী কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হবে।