দেশ, জাতি আর ধর্মের ঊর্ধ্বে উঠে কেবল মানুষ ও মানবতার কথা বলেন কবীর সুমন। গানের কথা-সুরে তিনি বরাবরই নিজের আদর্শ-দর্শন স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন। অথচ তাকেই নিন্দা সহ্য করতে হয় ধর্মীয় ইস্যুতে। কারণ, তিনি হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম গ্রহণ করেছেন, সুমন চট্টোপাধ্যায় থেকে কবীর সুমন হয়েছেন।
মূলত ধর্ম পাল্টানোর পর থেকেই ভারতীয়দের একটা বড় অংশ কবীর সুমনকে ঘৃণা করতে শুরু করে। শুক্রবার (২১ অক্টোবর) ঢাকার মঞ্চে গান গাইতে উঠে কিছুটা আক্ষেপের সুরেই কথাটি বলেছেন এই কিংবদন্তি।
‘আমি চাই’ গানটি পরিবেশনের প্রসঙ্গে কবীর সুমন বলেন, ‘এই গানটা যখন করি, তখন আমি সুমন চট্টোপাধ্যায়। এরপর কবীর সুমন হই এফিডেভিট করে। এরপর ভারতের মানুষ আমাকে ঘৃণা শুরু করে। অথচ চট্টোপাধ্যায় থাকতে কেউ আমাকে বলেনি হিন্দু নাম নিয়ে এই গান কেন করো? নামটা পাল্টাও। কবীর সুমন করার পর এখন ঠিকই আমাকে ঘৃণা করছেন। অথচ কবীর সুমন নামটার মধ্যে কোনও ধর্মীয় টাইটেল নেই, এটা তারা বুঝলো না।’
দীর্ঘ ১৩ বছর পর ঢাকায় গাইতে এসেছেন কবীর সুমন। গত ১৫ ও ১৮ অক্টোবর গান শুনিয়েছেন। আজ শুক্রবার (২১ অক্টোবর) চলছে শেষ দিনের আয়োজন। ইচ্ছে থাকলেও এরপর আর কখনও ঢাকায় আসার সম্ভাবনা নেই বলেও ইঙ্গিত করলেন গানওয়ালা। কারণ, বয়স হয়েছে, শরীরও ধরেছে চেপে।
কাঁপা হাতে কিবোর্ড বাজিয়ে গাওয়ার পাশাপাশি বললেন, ‘হতে পারে এটা আমার শেষ গান ঢাকায়। কারণ, শরীর টানছে না। কেউ আমাকে আটকাবে না, শরীর আটকাবে।’
ঢাকার গীতিকার এনামুল কবির সুজনের কথায় একটি গান করেছেন কবীর সুমন। ‘যাচ্ছে জীবন’ শীর্ষক সেই গানের কথাও বললেন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে। গানওয়ালার ভাষ্য, “এটা আমার লেখা না, লিখেছেন বাংলাদেশের গীতিকার এনামুল কবির সুজন। আমাদের পরিচয় ছিল না। উনি পেশাদারিত্বের সঙ্গে বলেছেন, ‘আমি চাই গানটা আপনি করুন।’ আমিও গাইলাম, সুর করলাম। কথাগুলো সুন্দর, সুরটাও মনে হয় খারাপ নয়। গানটা শুনতেই হবে।’’
উল্লেখ্য, ১৩ বছর আগে যখন ঢাকায় গাইতে এসেছিলেন কবীর সুমন, তখন ভেন্যু জটিলতা সৃষ্টি হয়েছিল। যার কারণে অভিমানে আর ঢাকামুখী হননি এই শিল্পী। এত বছর পর যখন আবারও এলেন, তখনও একই ঘটনার সাক্ষী হয়েছেন। প্রথমে অনুষ্ঠানটি হওয়ার কথা ছিল জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে। তবে অনুমতি দেয়নি পুলিশ। তাই অনুষ্ঠানের একদিন আগে স্থান পরিবর্তন করে রমনাস্থ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে নেওয়া হয় ‘তোমাকে চাই’-এর ৩০ বছর উদযাপন শীর্ষক এই আয়োজন।
ছবি: সাজ্জাদ হোসেন