X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০
গানের শিল্পী, গ্রামোফোন, ক্যাসেট ও অন্যান্য: পর্ব ১৪ (ক)

পংকজ মল্লিক: বাড়ি বাড়ি টিউশনি থেকে বেতার-সিনেমা ও রেকর্ডিংয়ে অবদান

শহীদ মাহমুদ জঙ্গী
২৩ অক্টোবর ২০২২, ১২:০৫আপডেট : ২৩ অক্টোবর ২০২২, ১৯:৫৫

পংকজ কুমার মল্লিকের বাবা মনিমোহন মল্লিক চাকরি করতেন বার্কমায়ার ব্রাদার্স-এ। ভালোই চলছিল। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির অবস্থা নাজুক হয়ে পড়ায় তাকে চাকরিটা ছাড়তে হয়। একটি বড় পরিবারের দায়িত্ব এসে পড়ে পংকজের ওপর। অল্প বয়সে নিজের কণ্ঠকে মূলধন করে, সংসারের চাকা সচল রাখার জন্য তিনি সাধ্যমতো চেষ্টা করেছেন। বাড়ি বাড়ি গান শেখানোর টিউশনি করেছেন।

গানের টিউশনি করে বাসায় ফিরতে প্রায় প্রতিদিন রাত বারোটা হয়ে যেতো। খাবার নিয়ে ঘরে মা মনোমোহিনী দেবী তার অপেক্ষায়। এই ছিল তার প্রতিদিনকার জীবন। তারপরও সংসারের চাহিদা মেটানো সম্ভব হয় না। তিনি একটি নিয়মিত কাজের অপেক্ষায় ছিলেন।

১৯২৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসের একদিন। প্রচুর বৃষ্টি। পংকজ পথে। প্রথমে একটি গাড়ি-বারান্দায় আশ্রয় নিলেন। বারান্দায় ভিড় বেড়ে গেলে, তিনি এক ডাক্তার বাবুর ডিসপেনসারির বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালেন । তার মনে গান ভর করলো। তিনি গেয়ে উঠলেন। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কোন গানটি গেয়েছেন, তা আর নিশ্চিত ভাবে মনে করতে পারেননি। নিজেকে নিজে প্রশ্ন করেছেন, ‌‘‌‌‌‘এমন দিনে তারে বলা যায়, এমন ঘন ঘোর বরিষায়’ নাকি অন্য কোনও গান?”

যাইহোক, মৃদু কণ্ঠে পংকজ গাইছিলেন। শুনতে পেয়ে, সুন্দর পোশাক পরা এক ভদ্রলোক এসে তাকে ডিসপেনসারির ভেতরে নিয়ে যান। আলাপে পংকজ জানতে পারেন তিনিই ডাক্তারবাবু। দক্ষিণ ভারতীয়। নাম রামস্বামী আয়েঙ্গার এবং তিনিই ডিসপেনসারির মালিক।

ডাক্তারবাবুর অনুরোধে তিনি গানটি আরেকবার গেয়ে শোনান। গান শুনে ডাক্তারবাবু উচ্ছ্বসিত। বলে উঠলেন, ‘ডু ইউ লাইক টু ব্রডকাস্ট?’

পংকজ কুমার মল্লিক পংকজ জানতেন, কয়েক মাস আগে কলকাতায় বেতার কেন্দ্র হয়েছে। বেতার বা রেডিও নিয়ে মানুষের বিস্ময় ছিল। অপার কৌতূহল ছিল। সেই সময়ে বেতারের অনুষ্ঠানসমূহের প্রতি মানুষের আগ্রহ ছিল সীমাহীন। বেতারে গান গাওয়ার সুযোগ পাওয়া মানে বিশাল ব্যাপার। ডাক্তার সাহেবের প্রস্তাবে পুলকিত পংকজ আনন্দের সঙ্গে সম্মতি জানান।

বেতারের অফিস ও স্টুডিও ছিল টেম্পল চেম্বার্স-এর বাড়িতে। অল্পদিনের মধ্যেই ডাক্তারবাবু তাকে সেখানে নিয়ে গেলেন। পরিচয় করিয়ে দিলেন প্রোগ্রাম পরিচালক নৃপেন মজুমদারের সঙ্গে।

২৬ সেপ্টেম্বর ১৯২৭। পংকজ প্রথমবারের মতো বেতারে গাইলেন। প্রথমে গাইলেন কবিগুরুর ‘এমন দিনে তারে বলা যায়, এমন ঘন ঘোর বরিষায়’। এরপর গাইলেন ‘একদা তুমি প্রিয়ে আমারই এ তরুমূলে’।

আলাপ-আলোচনায় পংকজকে পছন্দ করে ফেলেন নৃপেন মজুমদার। বেতারে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দেন। পংকজ খুশিমনে বেতারে যোগ দেন।

১৯২৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে শুরু, ১৯৭৫ সালের প্রায় শেষ পর্যন্ত তিনি বেতারের সাথে যুক্ত ছিলেন, প্রায় অর্ধ শতাব্দী! বেতারের সেই প্রথম যুগে নৃপেন মজুমদার, পংকজ কুমার মল্লিক ছাড়াও ছিলেন রাইচাঁদ বড়াল, রাজেন সেন, যোগেশ বসু। এর কিছুদিন পর যোগ দেন বাণীকুমার ও বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র।

উপমহাদেশে বেতারের যাত্রার প্রথমদিকেই অন্য কয়েকজনের সঙ্গে বেতারকে সংগঠিত করার সুযোগ পান পংকজ। এই সৌভাগ্যের সঙ্গে তার আরও কিছু প্রাপ্তি যোগ হয়। যার মধ্যে বড় প্রাপ্তি হচ্ছে, বেতারে ‘সংগীত শিক্ষার আসর’-এর পরিচালনা ও সংগীত শিক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব লাভ।

‘সংগীত শিক্ষার আসর’ পরিচালনায় পংকজের বিশেষত্ব ছিল, ব্যতিক্রমী শিক্ষাদান পদ্ধতি। যার কারণে তিনি দীর্ঘদিন জনপ্রিয়তা ধরে রেখে অনুষ্ঠান পরিচালনা করতে পেরেছিলেন।

সেপ্টেম্বর, ১৯২৯ সালে বেতারে প্রথমবারের মতো ‘সংগীত শিক্ষার আসর’ শুরু হয়। শুরু থেকেই দায়িত্ব পাওয়াতে পংকজ নিজের মেধা, সৃজনশীলতা দিয়ে অনুষ্ঠানকে উন্নত মানে উন্নীত করেছিলেন। নিজের সুরে অলোক গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা গান দিয়ে এই আসর শুরু করেছিলেন। দ্বিতীয় যেই গান তিনি শিখিয়েছিলেন, সেই গান ছিল নজরুলের ‘মোর ঘুম ঘোরে এলে মনোহর’।

ছেচল্লিশ বছর এই আসর পরিচালনা করেন, সংগীত শিক্ষা দেন। কেউ কল্পনাও করতে পারতো না যে, উপমহাদেশে কোনও প্রচার মাধ্যমে এত বছর একটি অনুষ্ঠান একজনকে দিয়ে পরিচালনা করা সম্ভব। এই অসম্ভবকে সম্ভব করে পংকজ নতুন ধরণের রেকর্ড সৃষ্টি করেছিলেন।

নিষ্ঠা, দক্ষতা ও সুনামের সঙ্গে এতগুলো বছর সংগীত শিক্ষার গুরু দায়িত্ব যেভাবে পালন করেছিলেন, তাতে করে তিনি অন্য আর কিছু না করলেও, শুধুমাত্র এই একটি কারণেই সংগীত জগতে অবিস্মরণীয় হয়ে থাকতেন।

অত্যন্ত সফল এই অনুষ্ঠানে, একটা বড় সময় তিনি রবীন্দ্রসংগীত শিখিয়েছিলেন। এজন্য রবীন্দ্রনাথ থেকে অনুমতি নিতে হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথ অনুমতি দিয়েছিলেন বটে, তবে গানে তবলার ব্যবহার যেন মৃদু হয়, শব্দ যেন সুরকে ছাপিয়ে না ওঠে সেই নির্দেশও ছিল।

পংকজ মল্লিক ও লতা মুঙ্গেশকর রবীন্দ্রসংগীতে একটা সময় পর্যন্ত তবলা ব্যবহার করা হতো না। পংকজ লিখেছেন, রবীন্দ্রসংগীতে বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকের শেষ পর্যন্ত তবলার ব্যবহার হয়নি। পংকজ রবীন্দ্রসংগীতে আগ্রহী হওয়ার পর থেকেই ব্যাপারটা নিয়ে ভাবতেন। এত চমৎকার সব গানে তবলার মৃদু স্নিগ্ধ বাঁধুনির অভাব তিনি বোধ করতেন। তবলা সম্পর্কে অনীহার কোনও যুক্তি তিনি খুঁজে পাননি। তাই রবীন্দ্রসংগীতে তবলা ব্যাবহারের অনুমতি আদায়ের জন্য তিনি কাজে নেমে পড়েন। এবং তিনি সহজ পথেই গেলেন, ধরলেন দিনেন্দ্রনাথকে। ধীরে ধীরে বরফ গললো।

অবশেষে রবীন্দ্রনাথ জানালেন, গানের রসহানি না ঘটলে তবলা ব্যবহারে আপত্তি নাই। দিনেন্দ্রনাথের মাধ্যমে রবীন্দ্রসংগীতে তবলা ব্যবহারের অনুমতি পংকজই প্রথম নিয়েছিলেন। ধীরে ধীরে তবলার ব্যবহার বাড়তে থাকে এবং বেতারে তবলা সহযোগে রবীন্দ্রসংগীত শিক্ষা এই ধারাকে বেগবান করে।

রবীন্দ্রসংগীতকে সর্বসাধারণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে, ‘সংগীত শিক্ষার আসর’ তথা পংকজের যথেষ্ট অবদান ছিল। তাছাড়া তিনি ফিল্মে রবীন্দ্রসংগীত ব্যবহার করেছেন। নিজেও নিয়মিতভাবে গেয়েছেন। তার সংগীত জীবনের বড় একটা অংশ রবীন্দ্রসংগীতের জন্য নিবেদিত ছিল।

রবীন্দ্রসংগীত ছাড়াও ‘সংগীত শিক্ষার আসর’-এ নজরুলগীতি, দ্বিজেন্দ্রগীতি, অতুলপ্রসাদের গান, পদকীর্তন, পল্লীগীতি, দেশাত্মবোধক গান, হিন্দি ভজন প্রভৃতি শেখানো হতো।

বেতারে নতুন নতুন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা ও আয়োজনে পংকজ, রাইচাঁদ, বাণীকুমার প্রমুখ তৎপর ছিলেন। বেতারে ক্রমান্বয়ে যুক্ত হয়েছিল নতুন নতুন অনুষ্ঠান যেমন- কথিকার আসর, গান দিয়ে সাজানো পল্লী-উৎসব প্রভৃতি।

বেতারের জনপ্রিয় অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল নাটক। প্রথম নাটক পরিবেশনের কৃতিত্ব ‘চিত্রা সংসদ’ নামক সাংস্কৃতিক সংগঠনের। পংকজ, বাণীকুমার ও বীরেন্দ্রকৃষ্ণ এই সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
‘চিত্রা সংসদ’ পরিবেশিত নাটকের নাম ছিল ‘চিকিৎসা সংকট’। বেতারের শ্রবণনির্ভর এই নাটক চারিদিকে ব্যাপক সাড়া ফেলে দেয়। যে কারণে পর পর বেশ কিছু নাটক অভিনীত হয়েছিল, যার মধ্যে জ্যোতিরিন্দ্রনাথের ‘অলীকবাবু’-ও ছিল।

সেই সময় গায়ক-গায়িকাদের মূল আশা-আকাঙ্ক্ষার কেন্দ্রবিন্দু ছিল নিজের গানের রেকর্ড প্রকাশ করা।
পংকজেরও স্বপ্ন ছিল গান রেকর্ড করার। ১৯২৭ সালে বেতারে নিজের গান প্রচারের পর গান রেকর্ড করার ইচ্ছা আরও তীব্র হয়।

উত্তর কলকাতার চিৎপুর রোডে বিষ্ণু ভবনে গ্রামোফোন কোম্পানির শিল্পীদের গান শেখানো হয়, রিহার্সাল হয়।
গ্রামোফোন কোম্পানির কর্মকর্তা ছিলেন ভগবতীবাবু। পংকজ গান রেকর্ড করার বাসনায় বিষ্ণুভবনে গেলেন। দেখা করলেন ভগবতীবাবুর সঙ্গে। তিনি গ্রামোফোন কোম্পানির শিক্ষকদের সঙ্গে দেখা করতে বললেন।
বিমল দাশগুপ্ত, কে মল্লিক, জমিরউদ্দিন খাঁ এবং ধীরেন দাস গ্রামোফোন কোম্পানিতে গানের শিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করতেন।

পংকজ একে একে সব শিক্ষকের সঙ্গেই দেখা করলেন। গান শোনালেন। কিন্তু কোনও না কোনও অজুহাতে তারা এড়িয়ে গেলেন। এরপর পংকজই বিষ্ণুভবনকে এড়িয়ে চলতে শুরু করলেন।

বিষ্ণুভবন অধ্যায়ের সমাপ্তির কয়েকমাসের মধ্যেই ‘ভিয়োলাফোন কোম্পানি’ নামে এক রেকর্ড কোম্পানি তার গান রেকর্ড করে প্রকাশ করে। পংকজ দুটি বর্ষার গান গেয়েছিলেন। গান লিখেছিলেন বাণীকুমার। প্রথম গানটি ছিল, ‘নেমেছে আজ নবীন বাদল ব্যথার গুরুভারে’, এটাই ছিল পংকজের প্রথম রেকর্ড করা গান। গানের জন্য তিনি বা গীতিকার কোনও অর্থ পাননি। এই রেকর্ডিং কোম্পানি খুব অল্পদিন ব্যবসায় ছিল।

১৯৩৩ সালে কলম্বিয়া গ্রামোফোন কোম্পানি কলকাতায় অফিস খোলে। পংকজ ততদিনে সংগীত শিক্ষক এবং কণ্ঠশিল্পী হিসাবে সাধারণ মানুষের কাছে পরিচিত হয়ে উঠেছেন। কলম্বিয়া কোম্পানি শিক্ষকের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য পংকজকে প্রস্তাব দেয়। একই প্রস্তাব তুলসী লাহিড়ীকেও দেওয়া হয়।

শিক্ষকের কাজ হচ্ছে শিল্পী নির্বাচন এবং নির্বাচিত শিল্পীদের যথাযথ ট্রেনিং দেওয়া, যাতে করে তারা গান রেকর্ডে সর্বোত্তম অবদান রাখতে পারেন। সেই সময় শিক্ষকের এই পদ ট্রেইনার হিসাবেও পরিচিত ছিল।

পংকজ ও তুলসী ব্যাপক উৎসাহে কাজে নেমে পড়েন।

কলম্বিয়া কোম্পানি সফলতা পেতে শুরু করে। এই সময়ে গ্রামোফোন কোম্পানির ভগবতীবাবু একদিন কলম্বিয়ার রিহার্সাল রুমে এসে পংকজকে তার কোম্পানিতে শিক্ষক এবং নিয়মিত শিল্পী হিসাবে যোগ দেওয়ার জন্য প্রস্তাব দেন! এবার পংকজের পালা। ১৯২৭ সালে বিষ্ণুভবনের অভিজ্ঞতার কথা সবিনয়ে স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি ভগবতীবাবুর প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন।

কলম্বিয়ায় পংকজের প্রথম করা রেকর্ডের গান লেখেন বাণীকুমার। গানটি ছিল ‘নমো নমো হে রুদ্র সন্ন্যাসী’। রেকর্ডে অন্য পিঠে ছিল একটি বাউল গান।

‘হিন্দুস্থান রেকর্ড’-এর চন্ডীচরণ সাহা রেকর্ডিং-এর ওপর জার্মানি থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়েছিলেন। নিজের শিক্ষাকে কাজে লাগানোর জন্য তিনি তৎপর হলেন। মাইক্রোফোন সহযোগে আধুনিক মেট্রিক্স পদ্ধতিতে তিনি রেকর্ডিং ট্রায়াল দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, এই ব্যাপারে পংকজ ও রাইচাঁদের কাছ থেকে সাহায্য চাইলেন। দু’জনেই সহযোগিতা করতে সম্মত হয়ে, অফিস শেষে রাতে চন্ডীবাবুর স্টুডিওতে যাওয়া শুরু করেন। একতলায় বসে পংকজ অর্গান বাজিয়ে গাইতেন, রাইচাঁদ ছিলেন তবলায়। দোতালায় বসে চন্ডীবাবু মেট্রিক্স-এ রেকর্ড করতেন। তখনও টেপ-রেকর্ডিং প্রথার উদ্ভব হয়নি।

মোমের মেট্রিক্স-এর ছাঁচ থেকেই হার্ড-ডিস্ক প্রস্তুত করা হতো। পংকজ নানান ধরণের গান গাইতেন। আর চন্ডীবাবু জার্মানি থেকে শিখে আসা জ্ঞান প্রয়োগ করে, ফলাফল পরীক্ষা করতেন।

নিয়মিত ট্রায়াল-এর শেষের দিনগুলোতে পংকজ গেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথের গান ‘প্রলয় নাচন নাচলে যখন আপন ভুলে হে নটরাজ’। চন্ডীবাবু পংকজকে জানালেন এই গানের রেকর্ডিং ও পরিবেশন খুব ভালো হয়েছে। তাই তিনি এই গান নিয়ে কোনও কাজ করেননি, মেট্রিক্সটা অক্ষত আছে। ডিস্ক রেকর্ডের জন্য দরকার দুটি গান। তিনি পংকজকে আরও একটি রবীন্দ্রনাথের গানে কণ্ঠ দেওয়ার অনুরোধ করলেন। যাতে করে ‘প্রলয় নাচন’ গানটিসহ একটি ডিস্ক রেকর্ড প্রকাশ করতে পারেন। পংকজ রাজি হয়ে, ‘তোমার আসন শূন্য আজি’ গানটি রেকর্ড করলেন। দুটি গানই রবীন্দ্রনাথের ‘তপতী’ নাটকের গান।

রেকর্ড প্রকাশিত হলো। এই রেকর্ড প্রকাশনা ছিল হিন্দুস্থান রেকর্ড কোম্পানির প্রথমদিকের কাজ, রেকর্ডের ক্রমিক সংখ্যা ছিল- ৯। রেকর্ডটি ভালো জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।

এখানে উল্লেখ করা যায় যে, সেই সময় কোনও কোম্পানির সাথে চুক্তিবদ্ধ থাকলে এর বাইরে অন্য কোম্পানি থেকে রেকর্ড প্রকাশ করা যেতো না। পংকজ গান গাওয়া নিয়ে কারও সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ছিলেন না। যে কারণে বিভিন্ন কোম্পানি থেকেই তার রেকর্ড প্রকাশ হয়েছে।

বেতার ও সিনেমায় পংকজের অবদান ছিল তুলনাহীন। কিন্তু গ্রামোফোন রেকর্ডে ঐ পরিমাণ না হলেও, রেকর্ডিং-এর মান উন্নয়নে চন্ডীবাবুকে দিনের পর দিন সহযোগিতা করে রেকর্ডিং-এর মান উন্নতিতে কিছুটা হলেও অবদান রেখেছেন এবং নিঃসন্দেহে নিজ কণ্ঠে গান রেকর্ড এবং নিজের সুরে অন্য গায়ক-গায়িকাকে দিয়ে গান রেকর্ড করাও ছিল, রেকর্ডিং শিল্পের জন্য ইতিবাচক সংযোজন।

চলবে...

(১৪তম পর্বে এছাড়াও দুটি অংশ আছে (খ ও গ)। ‘গ’ অংশ শেষে লেখার সবগুলো তথ্যসূত্র দেওয়া হবে)

লেখক: গবেষক, প্রাবন্ধিক ও গীতিকবি

/এমএম/
সম্পর্কিত
‘পদ্মশ্রী’ প্রাপ্তিতে সংগীত ঐক্যর পক্ষ থেকে রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে ফুলেল শুভেচ্ছা
‘পদ্মশ্রী’ প্রাপ্তিতে সংগীত ঐক্যর পক্ষ থেকে রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে ফুলেল শুভেচ্ছা
৫০-এ সোলস: ব্যান্ডের লোগো নির্বাচন ও গান লিখতে পারবেন আপনিও
৫০-এ সোলস: ব্যান্ডের লোগো নির্বাচন ও গান লিখতে পারবেন আপনিও
রবীন্দ্রনাথের সকল গানের ভাণ্ডারি দিনেন্দ্রনাথ
গানের শিল্পী, গ্রামোফোন, ক্যাসেট ও অন্যান্য: পর্ব ১৬রবীন্দ্রনাথের সকল গানের ভাণ্ডারি দিনেন্দ্রনাথ
নজরুল-আব্বাসউদ্দীন: ইসলামি গান সৃষ্টি ও জনপ্রিয়তার নেপথ্য গল্প
গানের শিল্পী, গ্রামোফোন, ক্যাসেট ও অন্যান্য: পর্ব ১৫ (গ)নজরুল-আব্বাসউদ্দীন: ইসলামি গান সৃষ্টি ও জনপ্রিয়তার নেপথ্য গল্প
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
পুষ্পা: আসবে তৃতীয় কিস্তি!
পুষ্পা: আসবে তৃতীয় কিস্তি!
সমুদ্র সৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
সমুদ্র সৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
যুক্তরাষ্ট্রে নোমান রবিনের ‘ছাই থেকে ফুল’
যুক্তরাষ্ট্রে নোমান রবিনের ‘ছাই থেকে ফুল’
২৪ বছর পরে আবার একসঙ্গে...
২৪ বছর পরে আবার একসঙ্গে...
সুবিধাবঞ্চিত ৪ শতাধিক বাচ্চার সঙ্গে ‘মেঘনা কন্যা’র ইফতার
সুবিধাবঞ্চিত ৪ শতাধিক বাচ্চার সঙ্গে ‘মেঘনা কন্যা’র ইফতার