X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১
গানের শিল্পী, গ্রামোফোন, ক্যাসেট ও অন্যান্য: পর্ব ১৬

রবীন্দ্রনাথের সকল গানের ভাণ্ডারি দিনেন্দ্রনাথ

শহীদ মাহমুদ জঙ্গী
২৭ মার্চ ২০২৩, ১০:২০আপডেট : ২৭ মার্চ ২০২৩, ১০:২০

১৯৩০-এর দশকে পত্রিকা কেন্দ্রিক কিছু আড্ডা ছিল। ‘কল্লোল’, ‘শনিবারের চিঠি’, ‘ভারতী’তে নিয়মিত আড্ডা হতো। সেই সময় সাহিত্যিক, সংগীত রচয়িতা, গায়ক, সুরকাররা ‘ভারতী’র আড্ডায় আসতেন।
 
যারা নিয়মিত আসতেন তাদের মধ্যে ছিলেন হেমেন্দ্রকুমার রায়, সৌরিন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায়, প্রেমাঙ্কুর আতর্থী, দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর, পংকজ মল্লিক, বাণীকুমার প্রমুখ। দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর সেই সময়ে দিনুবাবু নামেও সমধিক পরিচিত ছিলেন।

‘ভারতী’তে এমনই এক আড্ডায় প্রখ্যাত গায়ক কৃষ্ণচন্দ্র এলেন। সঙ্গে ছিলেন সবসময়ের সঙ্গী ও শিষ্য বলাইচন্দ্র। কৃষ্ণচন্দ্রের নতুন গানের রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছে। গানের কথা লিখেছেন হেমেন্দ্রকুমার। ঘরে প্রবেশ করেই কৃষ্ণচন্দ্র হেমন্দ্রকুমারকে তার লেখা গান শোনার জন্য বললেন। উত্তর দিতে গিয়ে হেমন্দ্রকুমার জানালেন, আসরে দিনুবাবুও উপস্থিত আছেন।
 
সঙ্গে সঙ্গে কৃষ্ণচন্দ্রের বিনম্র উচ্চারণ ‘দিনুবাবু? কই কোথায় তিনি? কী সৌভাগ্য আমার!’
 
চোখে তো দেখেন না, অনেক কষ্টে হাতড়ে হাতড়ে দিনুবাবুকে স্পর্শ করলেন। তারপর বললেন, ‘দিনুবাবু আমার প্রণাম নিন।’ দিনুবাবুও উচ্চস্বরে নমস্কার নমস্কার বলে কৃষ্ণচন্দ্রকে স্বাগত জানালেন।
 
কৃষ্ণচন্দ্র বলাইকে রেকর্ড বাজাতে বললেন। 

হেমন্দ্রকুমারের লেখা গানটি ছিল ‘বঁধু, চরণ ধরে বারণ করি, টেনো না আর চোখের টানে!’ কৃষ্ণচন্দ্রের অসাধারণ কণ্ঠে পুরো ঘরে ভালোলাগার অপূর্ব পরিবেশ তৈরি হলো। সবাই মুগ্ধ। সবার মুগ্ধতার প্রকাশও পেলো বিভিন্নভাবে। কিন্তু নীরব শুধু দিনেন্দ্রনাথ। গান শুনিয়ে দিনেন্দ্রনাথের মন্তব্য শুনার জন্য শিল্পী মাত্রই উদগ্রীব থাকতেন। এখানেও তাই হলো। কৃষ্ণচন্দ্র দিনেন্দ্রনাথকে বললেন, ‘কিন্তু দিনুবাবু আপনি তো কিছু বলছেন না। আপনার কেমন লাগলো বলবেন না?’

দিনুবাবু জবাব দিলেন, ‘এ্যাঁ কই লাগেনি তো’।

উপস্থিত সবাই বিভিন্নভাবে জানতে চাইলেও বেশ কয়েকবার একই জবাব দিলেন। এরপর অবশ্য তিনি আর রহস্য না করে নিজের মতামত জানালেন। তিনি কৃষ্ণচন্দ্রের অপূর্ব গলার প্রশংসা করে গানের কিছু অংশে গায়কী যথাযথ হয়নি বলে মত দেন। তার মতে, গানে মাঝে মাঝে এমন তান দেওয়া হয়েছে যে যাতে করে পুরো গানটাই মারা গেছে। তিনি বলেন, গানে বঁধুকে চরণ ধরে মিনতি করা হচ্ছে কিন্তু ব্যাকুলতার ভাবের মধ্যে ‘এ্যা বঁধু’ বলে অমন ধোবীর পাট গানের স্পিরিটকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। কৃষ্ণচন্দ্রের প্রতি উনার এই বিষয়ে শেষ বাক্য, ‘আপনি এত বড় গায়ক খুঁত ধরতে ভয় করে, তবু বলতে বাধ্য হলাম—লাগে নি তো!’

দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আড্ডায় উপস্থিত পংকজ মল্লিক স্মৃতিচারণ করেছেন, ‘কৃষ্ণচন্দ্র দে, সে যুগের অপ্রতিদ্বন্দ্বী কণ্ঠশিল্পী, দিনেন্দ্রনাথের এত তীক্ষ্ণ সমালোচনা শুনেও এতটুকু ক্ষুণ্ণ হলেন না। ঠাকুর বাড়ির ছেলে দিনেন্দ্রনাথ। তিনি সংগীত বিষয়ে পণ্ডিত এবং রবীন্দ্রসংগীতের ভাণ্ডারি। তথাপি কণ্ঠশিল্পী হিসাবে কৃষ্ণচন্দ্র ছিলেন অনেক বড়। কিন্তু সেই তিনিও এই সমালোচনায় মোটেই আহত হলেন না। বরং যেন লজ্জায় এতটুকু হয়ে গেলেন। বললেন, ‘তাই তো, তাই তো, এ কথাটা তো আমার ভাবা উচিত ছিল, এমন করে তো কখনও ভাবিনি, খুব ভুল হয়ে গেছে…।’
  
আসলেই কৃষ্ণচন্দ্র ছিলেন সেই সময়ের বিশাল তারকা। অহংকারহীন এই গায়ক বিনয়ের সঙ্গে দিনেন্দ্রনাথের মন্তব্যের সঙ্গে একমত হলেন, তবে এটা যে শুধু বিনয়ের জন্য তা নয়, কৃষ্ণচন্দ্র জানতেন সংগীতের ওপর দিনেন্দ্রনাথের দখল ও পাণ্ডিত্যের কথা। তাই ওনার মন্তব্যকে আন্তরিকভাবেই কৃষ্ণচন্দ্র গ্রহণ করেছিলেন। 

এই আড্ডায় যারা ছিলেন শুধু তারা নয়, সে সময়ের সংগীত জগতের প্রায় সবাই দিনেন্দ্রনাথকে শ্রদ্ধা করতেন, সংগীতে তার অসাধারণ পাণ্ডিত্যের জন্য। 

শিক্ষক হিসেবেও ছিলেন তিনি অসাধারণ। তার গান শেখানোর চমৎকার পদ্ধতি, অন্যের কণ্ঠে গান তুলে দেওয়ার আগ্রহের কথা এর আগে সাহানা দেবী ও পংকজ মল্লিক থেকে জেনেছি। 

উপমহাদেশে বেতার শুরুর প্রথম দিক থেকেই নিয়মিত প্রচারিত ‘সংগীত শিক্ষা’র আসর অত্যন্ত জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ছিল। অনুষ্ঠানের পরিচালক পংকজ মল্লিকের গান শেখানোর স্টাইলই এই জনপ্রিয়তার মূল কারণ বলে বিবেচনা করা হতো। আর পংকজ মল্লিক এই প্রসঙ্গে দিনেন্দ্রনাথের নামই উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন, দিনেন্দ্রনাথ থেকে তিনি যেভাবে শিখেছেন সেভাবেই তাঁর ছাত্রছাত্রীদের শিখিয়েছেন। আমরা সাহানা দেবীর বয়ানেও শুনেছি গান শেখানোর ব্যাপারে কতো আন্তরিক ছিলেন দিনেন্দ্রনাথ।
 
পংকজ মল্লিকের মতে, ‘রবীন্দ্রসংগীত বা বাংলা সংগীতের জগতে দিনুবাবুর চেয়ে বড় শিক্ষক আর কেউ ছিলেন না।’

শান্তিনিকেতনে গান শেখানোর সময় তিনি সাধারণত কোনও যন্ত্র ব্যবহার করতেন না। গান গেয়ে যেতেন, ছাত্রছাত্রীরা প্রথমে দু-একবার শুনতেন, তারপর দিনেন্দ্রনাথের সঙ্গে গাইতে শুরু করতেন। প্রতিটি ছাত্রছাত্রী গানের সুর শুদ্ধভাবে আয়ত্ত না করা পর্যন্ত তিনি বিরামহীনভাবে শেখাতেন।
 
সবার শেখবার ক্ষমতা সমান নয়। তিনি কিন্তু ধৈর্য ধরে শেখাতেন। ভুল সুরে কেউ গাইলে তাকে শুধরে ঠিক সুরে না গাওয়ানো পর্যন্ত যেন তার শান্তি হতো না। 

শান্তিনিকেতনে উনি যখন গানের ক্লাস নিতেন তখন তা  শুধু গান শেখার মধ্যেই সীমিত থাকতো না, পরিণত হতো ভাব আদান-প্রদানের এক অপরূপ আনন্দমেলায়। 

অমিতা সেন (খুকু) জানিয়েছেন, ‘গানের ক্লাস করতে গিয়ে শুধু গানই হতো না। তাকে ক্লাস বললে ক্লাসের চপলতা পরিশূন্য স্তব্ধ গাম্ভীর্য এবং ক্লাসের কর্ণধার মহাশয়ের অভ্রভেদী মর্যাদা এবং শব্দভেদী প্রতিষ্ঠার মাহাত্ম্য নিশ্চয় ক্ষুণ্ণ হবে। গান শেখা হয়ে যাবার পর দিনদা নানারকম গল্প করতেন, শুধু দিনদাই নয়, আমরাও তার সঙ্গে গল্প করতাম- অসংকোচে গল্প করতাম। কোথাও বাধা ছিল না, না বয়সের, না জ্ঞানের, না অনুশাসনের। ছোটদের সঙ্গে তিনি এমনি প্রাণ খুলে গল্প করতে ভালোবাসতেন।’

আমরা তো জানি, যেকোনও কিছু শেখার জন্য পরিবেশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বন্ধুত্বপূর্ণ আনন্দময় পরিবেশের চেয়ে শেখার জন্য ভালো আর কী হতে পারে?  দিনেন্দ্রনাথ সেই পরিবেশ নিশ্চিত করেছিলেন।
 
রবীন্দ্রনাথ শিক্ষক দিনেন্দ্রনাথ সম্পর্কে বলেছেন, ‘আমার সুরগুলিকে রক্ষা করা এবং যোগ্য এমনকি অযোগ্য পাত্রকেও সমর্পণ করা তার যেন একাগ্র সাধনার বিষয় ছিল। তাতে তার কোনদিন ক্লান্তি বা ধৈর্যচ্যুতি হতে দেখিনি।’

তিনি গান-কবিতা লিখতেন, গাইতেন, সুর করতেন কিন্তু প্রচার করতেন না। বেশিরভাগ সময় লিখে ছিঁড়ে ফেলে দিতেন। লিখে কাউকে হয়তো শোনালেন। শ্রোতা কয়েকদিন পর একই লেখা সম্পর্কে জানতে চাইলে নির্বিকার জবাব দিতেন, ‘ও তো ছিঁড়ে ফেলেছি!’ 

লেখা ছাপানোর ব্যাপারে বলতেন, ‘দেখ ছাপানোর মোহ একটা বড্ড নেশা—ওর মধ্যে না যাওয়াই ভালো। ছাপিয়ে কী হয়?’

শেষ পর্যন্ত তিনি একটি বই ছাপিয়েছেন—প্রচারের জন্য নয়, কারও স্মৃতির প্রতি নিবেদনের জন্য। অনুমান করা হয় তিনি তার প্রথম স্ত্রী বীণা দেবীর উদ্দেশে এই গ্রন্থ নিবেদন করেছিলেন। কয়েকটি বই শান্তিনিকেতন লাইব্রেরিতে উপহার দিয়ে বাকি সব বাক্সবন্দি করে রেখেছিলেন।
 
দিনেন্দ্রনাথের কিছু রচনা ও তার স্মরণে কিছু লেখা নিয়ে ১৩৪৩-এর ভাদ্রমাসে প্রকাশিত হয় ‘দিনেন্দ্র-রচনাবলি’। এই রচনাবলি প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছিলেন দিনেন্দ্রনাথের স্ত্রী কমলা দেবী। রবীন্দ্রনাথ গ্রন্থের ভূমিকা লিখেছিলেন। তিনি লিখেন, ‘গান নিয়ে যারা তার ব্যবহার করেছে তারা জানে সুরের জ্ঞান তার ছিল অসামান্য। আমার বিশ্বাস গান সৃষ্টি করা এবং সেটা প্রচার করার সম্বন্ধে তার কুণ্ঠার কারণই ছিল তাই। পাছে তার যোগ্যতা তার আদর্শ পর্যন্ত না পৌঁছায়, বোধকরি এই ছিল তার আশঙ্কা। কবি সম্বন্ধেও সেই একই কথা; কাব্য রসে তার মতো দরদী অল্পই আছে। তাছাড়া কবিতা আবৃত্তি করবার নৈপুণ্যও ছিল তার স্বাভাবিক। বিশেষ উপলক্ষে শান্তিনিকেতনের ছাত্রদের আবৃত্তি শিক্ষা দেবার আয়োজন ঘটলে, তাকেই অনুরোধ করতে হয়েছে। অথচ কবিতা সে নিজে লেখে, এ কথা প্রায় গোপন ছিল বললেই হয়। অনেক দিন কয়েকটি ছোট ছোট কবিতা সে বই আকারে ছাপিয়েছিল। ছেপেছিল মাত্র, কিন্তু পাঠকসমাজে সেটা প্রচার করবার জন্য সে লেশমাত্র উদ্যোগ করেনি। আমার মনে হয় কোনও একজনের উদ্দেশ্যে তার নিবেদন করাতেই পেয়েছে সে তৃপ্তি, পাঠক সাধারণের স্বীকৃতির দিকে লক্ষ্যই করেনি।’

দিনেন্দ্রনাথ গাইতেন অসাধারণ। তার ছাত্রদের মধ্যে অনেকেরই গান প্রকাশের প্রবল ইচ্ছা থাকলেও তিনি ছিলেন একবারেই বিপরীতে। এই বিষয়ে ছিলেন উদাসীন। গায়ক নয়, গ্রামোফোন রেকর্ডের বিজ্ঞাপনে তার নাম প্রথমবারের মতো আসে শিক্ষকতার সূত্রে।
 
১৯২৫-এ স্টার থিয়েটারে রবীন্দ্রনাথের ‘চিরকুমার সভা’ মঞ্চস্থ হয়। এখানে দিনেন্দ্রনাথ সংগীত শিক্ষার দায়িত্ব নেন। দিনেন্দ্রনাথ থেকে শিখে নীহার বালার গাওয়া গানগুলো বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। গ্রামোফোন কোম্পানি গানগুলোর রেকর্ড করে প্রকাশ করে। 

জুলাই ১৯২৬-এ গ্রামোফোন কোম্পানি প্রচারিত বিজ্ঞাপনে দিনেন্দ্রনাথের কাছে নীহার বালার গান শেখার কথা সম্মানের সাথে উল্লেখ করা হয়। আর পরের মাসেই আমরা দিনেন্দ্রনাথের কণ্ঠে গানের রেকর্ড পাই। তার কণ্ঠে গান রেকর্ড করা ছিল অসাধ্য সাধন করা। গ্রামোফোন কোম্পানিও তার গান রেকর্ড করাকে বড় ধরনের সাফল্য বিবেচনা করে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে।
 
আগস্ট ১৯২৬-এ গ্রামোফোন কোম্পানির প্রচারিত বিজ্ঞাপনে বলা হয়—

“Mr. Dinendra Nath Tagore (Amateur)
 শ্রীযুক্ত দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর (এমেচার)

মেঘের পরে মেঘ জমেছে
আমার পরান যাহা চায় 
আমাদের বহুদিনের কামনা আজ সফল হইল। বাংলার নব্য সংগীত কলার শ্রেষ্ঠ শিল্পী শ্রীযুক্ত দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয়ের রেকর্ড বহু চেষ্টায় আমরা এই প্রথম বাহির করিলাম। শ্রীযুক্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলিয়াছেন, ‘আমি কথা দিনু সুর’ সেই মধুর সুর আজ রেকর্ডে ধরা পড়িয়েছে। 

শ্রাবণের এই স্নিগ্ধ আকাশ ঘনাইয়া যখন মেঘের পর মেঘ জমিতে থাকে তখন সত্যই রবীন্দ্রনাথের সেই অমর গীতি:-
‘মেঘের পরে মেঘ জমেছে আঁধার করে আসে
আমায় কেন বসিয়ে রাখ একা ঘরের পাশে?’

মনে পড়ে নাকি? বর্ষার মেঘমেদুর উন্মুক্ত জানালার ধারে বসিয়া আমাদের রেকর্ডে দিনেন্দ্রনাথের সুর লয়ে সুমিষ্ট এই গান শুনিবার ইহাই কি উত্তম সুযোগ নয়? 

আবার যখন বর্ষার ধারা আকাশে বাতাসে করুণতা ছড়াইয়া দেয় তখন বিরহী প্রাণ যেন একান্তভাবে প্রিয়তমাকেই চায়— যাহাকে পাওয়া যাইবে না, তাহার পায়ে সমস্ত বিকাইয়া প্রাণ যেন নিঃস্ব হইয়া যায়—যেন আর কিছু নাই, কিছুই নাই। 

রবীন্দ্রনাথ সেই ব্যথার গান বহুদিন পূর্বে রচনা করিয়াছিলেন, আজ দিনেন্দ্রনাথ সেই গান রেকর্ডে গাহিয়াছেন—
‘আমার পরান যাহা চায় তুমি তাই তুমি তাই গো
তোমা ছাড়া আর এ জগতে মোর কেহ নাই কিছু নাই গো।’

পরের বছর ১৯২৭-এর জানুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে আরও দুটি রেকর্ড প্রকাশিত হয়। 

P 8535  “ আমার মাথা নত করে দাও”
              “ আমার মিলন লাগি তুমি”

P 8570  “আজি মর্মর ধ্বনি কেন”
              “ আলোকের এই ঝরণাধারায়” 

রবীন্দ্রনাথের বড়-ভাই দ্বিজেন্দ্রনাথের পুত্র ছিলেন দ্বিপেন্দ্রনাথ। দিনেন্দ্রনাথ ছিলেন দ্বিপেন্দ্রনাথের সন্তান। মায়ের নাম সুশীলা দেবী। ১৮৮২ সালে ১৬ ডিসেম্বর কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। 
বয়স যখন আট তখন তার মা ইহলোক ত্যাগ করেন। 

প্রাথমিক শিক্ষার জন্য দিনেন্দ্রনাথকে কাশিয়াবাগান স্কুলে ভর্তি করা হয়, পরে সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলে। দুরন্ত দিনেন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযোগ আসতো। অবশেষে তাকে সিটি স্কুলে ভর্তি করা হয়। এখান থেকেই প্রথম বিভাগে এন্ট্রান্স (এখনকার এসএসসি সমমানের) পাস করেন। এরপর প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। 

দিনেন্দ্রনাথের বয়স যখন প্রায় সতেরো তখন তার বিয়ে হয় রজনীমোহনের কন্যা বীণাপাণির সঙ্গে। অল্প বয়সেই বীণাপাণি দেবী মৃত্যুবরণ করেন। কুড়ি বছর বয়সে তিনি আবার বিয়ে করেন। দিনেন্দ্রনাথের দ্বিতীয় স্ত্রী ছিলেন ক্ষেত্রমোহন মুখোপাধ্যায়ের একমাত্র কন্যা কমলা দেবী। 

স্কুল-কলেজে থাকাকালীনই ভালো পিয়ানো বাজাতেন। সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলে পিয়ানো বাজিয়ে পুরস্কারও পেয়েছেন। ঠাকুর বাড়ির সংগীতময় পরিবেশে অনেকের কাছ থেকেই সংগীতের ওপর প্রাথমিক তালিম নিয়েছেন। লন্ডনে পড়তে যাওয়ার সুবাদে সেখানে পাশ্চাত্য সংগীত, স্টাফ নোটেশন এবং পাশ্চাত্য বাদ্যযন্ত্রের ওপর তিনি জ্ঞান অর্জন করেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে এসে রাধিকপ্রসাদ গোস্বামী ও শ্যামসুন্দর মিশ্রের কাছে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের তালিম নেন। একই সময়ে তিনি এস্রাজও শিখেন। 

১৯০৪ সালে প্রথম তিনি ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য লন্ডন যান। কিন্তু ১৯০৫ সালে দেশে ফিরে আসেন। সেই সময় বঙ্গভঙ্গ-রদের জন্য দেশের মানুষ সংগ্রামে ছিলেন। আন্দোলনে দিনেন্দ্রনাথও যোগ দেন। ১৯০৬ সালে আবার লন্ডনে যান। এবারও উদ্দেশ্য ব্যারিস্টারি পড়া। এবারও তিনি পরীক্ষা না দিয়েই ১৯০৮ সালে ফিরে আসেন। 
একই সালে তিনি শান্তিনিকেতনে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। রবীন্দ্রনাথ প্রতিষ্ঠিত আশ্রমের সংগীত ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক হিসাবে তিনি যোগ দেন। 

শান্তিনিকেতনে দিনেন্দ্রনাথ নিজের সবটুকু দিয়েই কাজ করেছেন। সর্বত্র তার ছোঁয়া পাওয়া যেতো। আশ্রমে তিনি অপরিহার্য হয়ে ওঠেন। ১৯০৮ থেকে ১৯৩৩ পর্যন্ত আশ্রমেই কাজ করেছেন। সফলতার সাথে, সবার ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে। 

ডি এল রায় পাঁচ শতাধিক গান লিখেছিলেন। কিন্তু স্বরলিপিসহ গান খুঁজে পাওয়া যায় একশত বত্রিশটি। অন্যদিকে রবীন্দ্রনাথের প্রায় সব গানের স্বরলিপি ছিল। রবীন্দ্রনাথ তেমন একটা স্বরলিপি না করলেও অন্যরা এই কাজটি সুন্দরভাবে সম্পন্ন করেছেন। দিনেন্দ্রনাথের করা স্বরলিপি গ্রন্থ ‘গীতলেখা’ ১ম ভাগ প্রকাশিত হয় ১৩২৪-এ। গান ছিল ২৯টি। এরপর একনাগাড়ে দিনেন্দ্রনাথের করা স্বরলিপি পত্র-পত্রিকায় ও গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হতে থাকে। তিনি রবীন্দ্রনাথের ৭০০-এর অধিক গানের স্বরলিপি করেছেন। যা মোট রবীন্দ্রসংগীতের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি। 

সেই সময়ের জনপ্রিয় নাটক ‘সীতা’র সংগীত পরিচালক ছিলেন দিনেন্দ্রনাথ। তার সুরে কৃষ্ণচন্দ্রের গাওয়া ‘মঞ্জুল মঞ্জুরি নব সাজে’ ও ‘অন্ধকারের অন্তরেতে অশ্রুবাদল ঝরে’ গান দুটি বিপুল জনপ্রিয় হয়। 

তিনি অনেকের লেখা গানে সুর দিয়েছিলেন। যেমন স্বর্ণকুমারী দেবী রচিত:-
“ওহে সুন্দর প্রেমময়”
“ জানি হে বঁধু জানি” 
“তুমি স্বয়ম্ভু সুন্দর
“কাঁদিতে পারিনে”
“মনটি ওরে ভালো করে”
“আহা মরি মরি” 
“ও আমার সূর্যা”

স্বর্ণকুমারী ছাড়া অন্য যাদের লেখা গানে সুর দিয়েছিলেন, তাদের মধ্য ছিলেন সুধির চন্দ্র কর ও মৈত্রেয়ী দেবী প্রমুখ। 

সামগ্রিকভাবে, দিনেন্দ্রনাথ গানের প্রতি দুর্বল ছিলেন। তবে রবীন্দ্রনাথের গানের প্রতি তার দরদ ছিল সীমাহীন। রবীন্দ্রসংগীতের স্বরলিপি প্রণয়ন ও রবীন্দ্রসংগীতের শিক্ষক হিসাবে প্রভূত খ্যাতি অর্জন করেন। একই সঙ্গে সব ধরনের গানের ওপর তার অশেষ পাণ্ডিত্য তাকে সংগীত জগতে বিশেষ সম্মানের স্থানে অধিষ্ঠিত করে। রবীন্দ্রনাথের পৌরোহিত্যে ১৯৩২-এর ১৭ ডিসেম্বর দিনেন্দ্রনাথের পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষে উৎসবের আয়োজন করা হয়। রবীন্দ্রনাথ এই বলে আশীর্বাদ জানালেন সেদিন—

‘প্রথম পঞ্চাশ বর্ষ রচি দিক প্রথম সোপান,
দ্বিতীয় পঞ্চাশ তাহে গৌরবে করুক অভ্যুত্থান।’

দিনেন্দ্রনাথ প্রায় সময় রবীন্দ্রনাথের কাছাকাছিই থাকতেন। রবীন্দ্রনাথ গান লিখলে, সুর করলে দিনেন্দ্রনাথকে বলতেন শিখে নিতে। রবীন্দ্রনাথ সংশয়ে থাকতেন, গানের যে সুর তিনি করেছেন তা হয়তো ভুলে যাবেন। তাই তিনি দিনেন্দ্রনাথের ওপর ভরসা করতে ভালোবাসতেন। কবিকন্যা মীরা বলেছেন, ‘বাবা নতুন নতুন গান তৈরি করে তখনই দিনুকে ডেকে পাঠাতেন, পাছে সুর ভুলে যান।’ আর জ্যোতিরিন্দ্রনাথকে কবিগুরু বলে ছিলেন, ‘আমার মুশকিল এই যে সুর দিয়ে আমি সব ভুলে যাই। দিনু কাছে থাকলে তাকে শিখিয়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত মনে ভুলতে পারি।’
 
গান শেখার জন্য দিনেন্দ্রনাথের উৎসাহেরও শেষ ছিল না। তিনি কবিগুরুর ডাক পেলেই হাজির হতেন। তাছাড়া নিজ উৎসাহেও তিনি নতুন নতুন গান শিখে নিতেন। এইভাবে রবীন্দ্রনাথের গানের বিশাল ভাণ্ডার নিজ আয়ত্তে নিয়ে আসেন। যে কারণে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, তার সকল গানের ভাণ্ডারি হচ্ছেন দিনেন্দ্রনাথ। 

রবীন্দ্রনাথ তার লেখা ‘ফাল্গুনী’ নাটকের উৎসর্গ পাতায় লিখেছেন- 

‘যাহারা ফাল্গুনীর ফল্গুনদীটিকে বৃদ্ধ কবির চিত্তমরুর তলদেশ হইতে ওপরে টানিয়া আনিয়েছে তাহাদের এবং সেইসঙ্গে সেই বালকদলের সকল নাটের কাণ্ডারি আমার সকল গানের ভাণ্ডারি শ্রীমান দিনেন্দ্রনাথের হস্তে এই নাট্যকাব্যটিকে কবি-বাউলের একতারার মতো সমর্পণ করিলাম।’

শান্তিনিকেতন ছিল দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রাণ। যেখানে ছোট-বড় সবাইকে সারাক্ষণ মাতিয়ে রাখতেন। জীবনের শেষদিকে অভিমানে শান্তি নিকেতন ছেড়ে জোড়াসাঁকোয় চলে যান। কিন্তু মন পড়ে থাকতো শান্তি নিকেতনে। প্রিয় কোনও ছাত্র এলেই শান্তিনিকেতনের খুঁটিনাটি খবরও নিতেন আগ্রহ ভরে।
 
দিনেন্দ্রনাথ বিশ্বাস করতেন, রবীন্দ্রনাথ তাকে ডাকবেন। কিন্তু ডাকেননি। তার ছাত্র শান্তিদেব যখন দেখা করতে এসেছিলেন, কমলা দেবী তাকে কবিগুরুকে বলার জন্য বলেছিলেন, ‘রবিদাকে বলো ওঁকে যদি একবার ডাকেন।’ শান্তিদেব সে কথা রবীন্দ্রনাথের কাছে পৌঁছেও দিয়েছিলেন। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি। রবীন্দ্রনাথ ডাকেননি। 

কবিগুরুর এই আচরণ বিস্ময়কর। অথচ তখনও শান্তিনিকেতনে দিনেন্দ্রনাথের প্রয়োজন ফুরিয়ে যায়নি, রবীন্দ্রভারতীতে সংরক্ষিত একটি চিঠি পড়লেই তা বুঝা যায়—‘তুমি আমাদের পিতা— গানটির স্বরলিপি আছে বলে জানিনে দিনু। আজকাল জোড়াসাঁকোয় থাকে কেউ গিয়ে যদি তার কাছ থেকে শিখে নিতে পারে তো সহজ হয়। সুরটা শিখতে দেরী হবে না। ইতি ৩ বৈশাখ … রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।’

দিনেন্দ্রনাথের মনে শান্তিনিকেতন সবসময় বিরাজ করেছে। শান্তিনিকেতনের শিশুদের স্মৃতিতে উদ্বেলিত ছিল তার অন্তর। তাই হয়তো তার রচিত ও সুর দেওয়া জীবনের শেষ গান ছিল শিশুদের নিয়ে। যার প্রথম স্তবক-
‘শালবনে শুনি শ্যাম শিশুর কাকলি 
ধরণী-মাতার আঁখি উঠে ছলছলি।
তাহার প্রাণের আশা 
ওরি মাঝে পেল ভাষা—
অকথিত ভালোবাসা
আলোক সোহাগ মাখা ওঠে ঝলমলি।’

১৯৩৫-এর ২১ জুলাই দিনেন্দ্রনাথ মৃত্যুবরণ করেন। এই খবর শান্তিনিকেতনে পৌঁছুলে রবীন্দ্রনাথ উপাসনা শেষে দিনেন্দ্রনাথ সম্পর্কে যা বলেছিলেন, তার থেকে অংশবিশেষ—

‘এই আশ্রমকে আনন্দনিকেতন করবার জন্য তরুলতার শ্যাম শোভা যেমন, তেমনি প্রয়োজন ছিল সংগীতের উৎসবের। সেই আনন্দ উপচার সংগ্রহের প্রচেষ্টায় প্রধান সহায় ছিলেন দিনেন্দ্র। এই আনন্দের ভাব যে ব্যাপ্ত হয়েছে, আশ্রমের মধ্যে সজীবভাবে প্রবেশ করেছে, ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সঞ্চারিত হয়ে চলেছে, এর মূলেতে ছিলেন দিনেন্দ্র। আমি যে সময়ে এখানে এসেছিলাম, তখন আমি ছিলাম ক্লান্ত; আমার বয়স তখন অধিক হয়েছে— প্রথমে যা পেরেছি, শেষে তা-ও পারিনি। আমার কবি প্রকৃতিতে আমি যে দান করেছি, সেই গানের বাহন ছিলেন দিনেন্দ্র। অনেকে এখানে থেকে গেছেন, সেবাও করেছেন। কিন্তু তার রূপ নেই বলে ক্রমশ তারা বিস্মৃত হয়েছেন। কিন্তু দিনেন্দ্রের দান এই যে আনন্দের রূপ, এ তো যাবার নয়— যতদিন ছাত্রদের সংগীতে এখানকার শালবন প্রতিধ্বনিত হবে, বর্ষে বর্ষে নানা উপলক্ষে উৎসবের আয়োজন চলবে, ততদিন তার স্মৃতি বিলুপ্ত হতে পারবে না, ততদিন তিনি আশ্রমকে অধিগত করে থাকবেন; আশ্রমের ইতিহাসে তার কথা ভুলবার নয়। এখানকার সমস্ত উৎসবের ভার দিনেন্দ্র নিয়েছিলেন, অক্লান্ত ছিল তার উৎসাহ। তার কাছে প্রার্থনা করে কেউ নিরাশ হয়নি—গান শিখতে অক্ষম হলেও তিনি ঔদার্য দেখিয়েছেন। এই ঔদার্য না থাকলে এখানকার সৃষ্টি সম্পূর্ণ হত না। সেই সৃষ্টির মধ্যেই তিনি উপস্থিত থাকবেন। প্রতিদিন বৈতালিকে যে রসমাধুর্য আশ্রমবাসীর চিত্তকে পুণ্যধারায় অভিষিক্ত করে, সেই উৎসকে উৎসারিত করতে তিনি প্রধান সহায় ছিলেন। এই কথা স্মরণ করে তাকে সেই অর্ঘ্য দান করি, যে অর্ঘ্য তার প্রাপ্য।’

লেখক: গবেষক, প্রাবন্ধিক ও গীতিকবি 

তথ্যসূত্র:
সুভাষ চৌধুরী: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবন ও সৃজন
পীতম সেনগুপ্ত: সুর ভুলি, স্বরলিপি করতে জানি নে
পংকজ কুমার মল্লিক: আমার যুগ আমার গান

/এমএম/এমওএফ/
সম্পর্কিত
‘পদ্মশ্রী’ প্রাপ্তিতে সংগীত ঐক্যর পক্ষ থেকে রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে ফুলেল শুভেচ্ছা
‘পদ্মশ্রী’ প্রাপ্তিতে সংগীত ঐক্যর পক্ষ থেকে রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে ফুলেল শুভেচ্ছা
৫০-এ সোলস: ব্যান্ডের লোগো নির্বাচন ও গান লিখতে পারবেন আপনিও
৫০-এ সোলস: ব্যান্ডের লোগো নির্বাচন ও গান লিখতে পারবেন আপনিও
নজরুল-আব্বাসউদ্দীন: ইসলামি গান সৃষ্টি ও জনপ্রিয়তার নেপথ্য গল্প
গানের শিল্পী, গ্রামোফোন, ক্যাসেট ও অন্যান্য: পর্ব ১৫ (গ)নজরুল-আব্বাসউদ্দীন: ইসলামি গান সৃষ্টি ও জনপ্রিয়তার নেপথ্য গল্প
আব্বাসউদ্দীন: রবীন্দ্র-নজরুল গেয়েও লোকসংগীতে তুলনাহীন
গানের শিল্পী, গ্রামোফোন, ক্যাসেট ও অন্যান্য: পর্ব ১৫ (খ)আব্বাসউদ্দীন: রবীন্দ্র-নজরুল গেয়েও লোকসংগীতে তুলনাহীন
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
এই গরমে শিরোনামহীনের শীতল সুর!
এই গরমে শিরোনামহীনের শীতল সুর!
নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি জয়া
নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি জয়া
কানের ধ্রুপদি বিভাগে শ্যাম বেনেগালের ‘মন্থন’
কান উৎসব ২০২৪কানের ধ্রুপদি বিভাগে শ্যাম বেনেগালের ‘মন্থন’
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন