X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

বই লিখে বলিউডে: ‘ফারাজ’ সৃষ্টির নেপথ্য গল্প শোনালেন নুরুজ্জামান লাবু

মাহমুদ মানজুর
১৭ জানুয়ারি ২০২৩, ১৭:৩৬আপডেট : ১৭ জানুয়ারি ২০২৩, ২২:১০

যে দেশে বেশিরভাগ ঘটনার আয়ু সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত; এরপর সেটি কোনোমতে বেঁচে থাকে ক্যালেন্ডারের নির্দিষ্ট তারিখে, সেই দেশে গত এক বছর ধরে রোজ রোজ জেগে উঠছে ৭ বছর আগে ঘটে যাওয়া হলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার দগদগে ক্ষত। কারণ, ঘটনাটি নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশে কাছাকাছি সময়ে দুটি পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা তৈরি হয়েছে। যার মধ্যে বাংলাদেশের ছবিটি আটকে আছে সেন্সর বোর্ডের ছুরি-কাঁচির নিচে হিমঘরে। বিষয়টি নিয়ে চলছে বহুমাত্রিক প্রতিবাদ, বিপরীতে বলিউডের ছবিটি ভারতজুড়ে মুক্তি পাচ্ছে ৩ ফেব্রুয়ারি। এরমধ্যে প্রকাশ হয়েছে ট্রেলার। যেটিকে ঘিরে তৈরি হয়েছে মুগ্ধতা। কারণ, ছবিটির ট্রেলারে মিলেছে বাংলাদেশের গল্প ও ছায়া। তবে সব ছাপিয়ে আলোচনায় এলেন বাংলাদেশের সাংবাদিক-লেখক নুরুজ্জামান লাবু। কারণ, ‘ফারাজ’ নামের এই ছবিটি সৃষ্টির নেপথ্যে রয়েছে তার কলম। মূলত তার লেখা ‘হোলি আর্টিজান: একটি জার্নালিস্টিক অনুসন্ধান’ গ্রন্থের সূত্র ধরেই বলিউডের এই ছবিটির জন্ম। দৈনিক বাংলার বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত নুরুজ্জামান লাবুর সঙ্গে বাংলা ট্রিবিউন-এর কথা হলো ছবিটির সঙ্গে তার যুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়া এবং জঙ্গিবাদসহ সংশ্লিষ্ট নানাবিধ বিষয়ে-   

বাংলা ট্রিবিউন: আপনাকে শুভেচ্ছা। বলিউডের ‘ফারাজ’ ছবির সঙ্গে আপনার সম্পৃক্ততা রয়েছে। একজন বাংলাদেশি লেখক-সাংবাদিক হিসেবে যেমন ঘটনা সচরাচর ঘটে না। তাছাড়া সিনেমা হিসেবেও এটা বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। প্রশ্ন হলো, ছবিটির সঙ্গে আপনার সংযোগ স্থাপনের প্রাথমিক গল্পটা কেমন ছিল?

নুরুজ্জামান লাবু: ২০১৯ সালের কোনও একদিনের কথা। সিনিয়র সাংবাদিক মোরশেদ আলী খান ভাই আমার বইটা খুঁজছিলেন। ‘হোলি আর্টিজান: একটি জার্নালিস্টিক অনুসন্ধান’ শিরোনামে ২০১৭ সালে অন্বেষা প্রকাশনী থেকে আমার একটি বই প্রকাশ হয়। বইয়ের উপজীব্য ছিল ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলা।

তো মোরশেদ ভাই আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে একটা বই চাইলেন। বইটা তখন মার্কেট আউট। ফলে তিনি কোথাও এর কপি পাচ্ছিলেন না। আমার কাছেও অতিরিক্ত কপি ছিল না। পরে আমি এক বন্ধুর কাছ থেকে বইটি সংগ্রহ করে তার কাছে পাঠালাম। তারপর বিষয়টি ভুলেই গিয়েছিলাম।

বাংলা ট্রিবিউন: মানে তখনও আপনি জানতেন না সিনেমার বিষয়টি।

নুরুজ্জামান লাবু: একদমই না। আমার ধারণা ছিল মোরশেদ ভাই হয়তো নিজের জন্য বইটি চেয়েছিলেন। তো মাস ছয়েক পর তিনি আমাকে ফোন করে জানালেন বইটা তার কাছে চেয়েছিল তার এক বন্ধু। সেটিও আমার কাছে স্বাভাবিক ঘটনা মনে হয়েছে। কিন্তু এরপরই তিনি যেটা বললেন, সেটা খানিক চমকে ওঠার মতো। তিনি জানালেন, আমার বইটি মূলত পড়তে চেয়েছেন বলিউডের বিখ্যাত প্রযোজক-পরিচালক মহেশ ভাট!

বাংলা ট্রিবিউন: চমকে ওঠার মতোই। তারপর...

নুরুজ্জামান লাবু: সেদিনই মোরশেদ ভাই বললেন, মহেশ ভাটের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ভিশেষ ফিল্মস থেকে আমার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে চায়। তারা বইটি পড়েছে। এখন আমার সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে চায়। আমার মোবাইল নাম্বারটা তাদের দেবে কিনা- সেই সম্মতি চাইলেন মোরশেদ ভাই। সম্মতি পেয়ে ভিশেষ ফিল্মসকে আমার নাম্বারটি দিলেন।

এর ক’দিন পর মুম্বাইয়ের ভিশেষ ফিল্মসের দুই কর্মকর্তা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলেন। কথা হলো মহেশ ভাটের ভাই মুকেশ ভাটের মেয়ে সাক্সি ভাটের সঙ্গেও। নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছিল ভিশেষ ফিল্মসের কর্মকর্তা ও প্রযোজক সাহিল সায়গালের সঙ্গে। জানালেন, তারা আমার বইটা সংগ্রহের পর ইংরেজিতে অনুবাদ করিয়েছেন। অনুবাদ পড়ে তারা মুগ্ধ হয়েছেন। বইটা অনেক ইনফরমেটিভ হিসেবে প্রশংসাও করলেন। এরপর তারা বললেন, হোলি আর্টিজানের জঙ্গি হামলা নিয়ে একটা মুভি বানাবেন। এজন্য আমার বইয়ের ইনফরমেশন ব্যবহার করতে চান। বই থেকে ইনফরমেশন নিয়ে সিনেমার উপযোগী একটা স্ক্রিপ্ট তৈরি করবেন। এজন্য একটা চুক্তির প্রস্তাব দিলেন। ২০২০ সালের মার্চ মাসে তাদের সঙ্গে একটি চুক্তি করে ফেললাম।

নুরুজ্জামান লাবু বাংলা ট্রিবিউন: প্রাথমিক আলাপের পরের ধাপগুলো টাইমফ্রেমসহ শেয়ার করবেন আমাদের। মানে হাউ টু ডিল হোল প্রসেস উইথ ইউ এন ফিল্ম ‘ফারাজ’।

নুরুজ্জামান লাবু: আগেই বলেছি, তারা গুলশানের জঙ্গি হামলা নিয়ে একটা মুভি বানাবে। এজন্য তারা বইটা তথ্যভাণ্ডার হিসেবে বেছে নিয়েছে। যখন আমার সঙ্গে তাদের চুক্তি হয়, তখনও মুভির নাম কিন্তু ঠিক হয়নি। পরে তারা ‘ফারাজ’ নামে মুভি করার সিদ্ধান্ত নেয়। আমাদের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছে, সেখানে তারা আমার বই থেকে তথ্য নিয়ে নিজেদের মতো করে একটি স্ক্রিপ্ট তৈরি করবেন সেটা বলা ছিল। যদিও এটি প্রথমে পুরোপুরি ভিশেষ ফিল্মসের ব্যানারে করার কথা ছিল। পরে করোনা মহামারি ও অন্যান্য কারণে টি-সিরিজ ও অনুভব সিনহাও যুক্ত হয় এতে। বিষয়টি তারা আমাকে জানিয়েছেও। মৌখিকভাবে আমার অনাপত্তিও নিয়েছে।

বাংলা ট্রিবিউন: এই যে আলাপ হচ্ছে। চুক্তি হলো। এর সবটুকুই কি অর্থহীন! মানে কোনও সম্মানি...

নুরুজ্জামান লাবু: দেখলাম, ওদের মধ্যে এই প্র্যাকটিসটা ভয়ংকর সুন্দরভাবে কাজ করে। ওরা যাই করে সেটা বলে, লিখে এবং সম্মানির বিনিময়ে। আমাকে ওরা চুক্তির জন্য ৩ লাখ রুপি দিয়েছে। যেটা আমাদের প্রেক্ষাপটে অবিশ্বাস্য বিষয়। এটা একজন লেখকের জন্য বিস্ময়কর সুন্দর।  

বাংলা ট্রিবিউন: কিন্তু সিনেমাটি তো সম্ভবত আপনার বই অবলম্বনে নয়। শুধুই তথ্যভাণ্ডারের কাজ করেছে।

নুরুজ্জামান লাবু: দেখেন, আমার বইটি কোনও গল্পের বই নয়। এটা বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জঙ্গি হামলা ও জিম্মির ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ। নানা দিকের ঘটনা একসঙ্গে তুলে আনা হয়েছে বইয়ে। বইয়ে সেদিনের ঘটনার বাইরের চিত্র কেমন ছিল এবং একই সঙ্গে ভেতরের চিত্র কেমন ছিল তা প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় আমি তুলে এনেছিলাম। তো তারা হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার ঘটনা নিয়ে একটা মুভি তৈরি করবে। আমার বই পড়ে তাদের মনে হয়েছে এখানে বিস্তারিত তথ্য রয়েছে। জঙ্গিদের পরিকল্পনা, হামলা, ভেতরের অবস্থা সবকিছু। সেজন্যই আমার বইকে তারা বেছে নিয়েছে। যদি আমার বই অবলম্বনে তারা সিনেমা না করতো, তাহলে তো আমার সঙ্গে তাদের চুক্তি করার কোনও প্রয়োজন ছিল না। আমাকে আর্থিক সম্মানি দেওয়ারও কোনও প্রয়োজন ছিল না।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনার লেখায় ফারাজকে হিরো হিসেবেও তুলে ধরতে দেখিনি আমরা। বরং তার বিষয়ে আপনি প্রশ্ন তৈরির সুযোগ করেছেন আপনার অনুসন্ধানে। অথচ আমরা জানতে পারি ‘ফারাজ’ সিনেমা মূলত আপনার অনুসন্ধানের পুরো বিপরীত চিত্র ধারণ করেছে। প্রশ্ন, তাহলে আপনার বইটি তাদের কাছে দরকারি কেন মনে হলো? 

নুরুজ্জামান লাবু: হ্যাঁ, এই হামলায় ফারাজকে যে হিরো বানানোর একটা প্রচেষ্টা ছিল, আমার বইয়ে বা অনুসন্ধানে তা আমি নাকচ করে দিয়েছি। আমি এখনও বলি, ফারাজকে নিয়ে যে হিরোইজমের গল্পটা বলা হয়, তার সত্যতা আমি পাইনি। এই ঘটনার কোনও প্রত্যক্ষদর্শী নেই। কিন্তু সিনেমায় যেটা হয়, একটা হিরোইজমের অংশ রাখতে হয়। সেই হিসেবে তারা ফারাজকে হাইলাইট করেছে বলে আমার মনে হচ্ছে। এর পেছনে অন্য কোনও কিছু রয়েছে কিনা তা আমার জানা নেই। আর চুক্তিতে তারা বলেছে বই থেকে তথ্য নিয়ে তারা ইম্প্রোভাইজ করে একটা স্ক্রিপ্ট করবে, সেক্ষেত্রে আমার তো কিছু বলার নেই।

আর আপনি যেটা বলছেন যে বইটা কেন তাদের দরকারি মনে হলো? এর উত্তরে আমি বলবো, ফারাজের দুই বান্ধবীকে ছেড়ে আসার হিরোইজমের গল্পটা বাদ দিলে বাকি সবই কিন্তু আমার বই থেকেই নেওয়া। অর্থাৎ জঙ্গি হামলার আদ্যোপান্ত বিস্তারিত বর্ণনা থেকেই কিন্তু তারা পূর্ণদৈর্ঘ্য একটা সিনেমার চিত্রনাট্য তৈরি করেছে।

বাংলা ট্রিবিউন: ট্রেলার দেখে কেমন ফিলিং হলো?

নুরুজ্জামান লাবু: ট্রেলার দেখে আমার ভালোই লেগেছে। তারা হলি আর্টিজানের মতো একটি সেট তৈরি করেছে। যদিও ছবির একটি অংশ শুটিংয়ের জন্য তাদের বাংলাদেশে আসার কথা ছিল। এক সপ্তাহের জন্য তারা ঢাকায় আসার প্রস্তুতিও নিয়েছিল। কিন্তু করোনা মহামারি ও লকডাউনের কারণে সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করে দিয়েছে। ট্রেলার তো দুই-তিন মিনিটের বিষয়। পুরো ছবিটা দেখে প্রতিক্রিয়া দিতে পারবো। আশা করছি ছবিটি ভালোই হবে।

নুরুজ্জামান লাবু বাংলা ট্রিবিউন: ট্রেলার ইনফোতে আপনার বা বইয়ের কোনও নাম তথ্য নেই। নিশ্চয়ই খুঁজেছেন। সিনেমাতে কি সেটি থাকছে? 

নুরুজ্জামান লাবু: হ্যাঁ, ট্রেলার ইনফোতে আমার নাম বা বইয়ের তথ্য দেয়নি তারা। হয়তো তারা সিনেমার এন্ড টাইটেলে তা দেবে। তাদের সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছে, সেখানে স্পষ্ট করে ক্রেডিট লাইন দেওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে।

বাংলা ট্রিবিউন: ‘ফারাজ’ ছবিটি দেখে অনেকেই জানবে বাংলাদেশের মানুষ, পুলিশ এবং জঙ্গিরা হিন্দিতে কথা বলে! কারণ, ছবির গল্প, লোকেশন, চরিত্র, কস্টিউম সবই ঢাকার। ভাষাটা শুধু হিন্দি।

নুরুজ্জামান লাবু: যেহেতু মুভিটা বলিউড থেকে তৈরি হয়েছে, তাদের বড় টার্গেট অডিয়েন্সও ভারতীয়। সেহেতু হিন্দি ভাষা থাকাটাই স্বাভাবিক। আর জঙ্গিরা কে কোন ভাষায় কথা বলছে, সেটির চাইতে তাদের ভ্রান্ত মতাদর্শের বিষয়টি মুখ্য। ছবিতে ইংরেজি সাবটাইটেল থাকার কথা।

বাংলা ট্রিবিউন: বাংলায় একই ঘটনার ছায়া নিয়ে আরেকটি সিনেমা নির্মাণ হয়েছে। মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘শনিবার বিকেল’। এটা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ সেন্সর বোর্ড। প্রথম প্রশ্ন, ছবিটি আটকে রাখার কারণ কী হতে পারে। ক্রাইম ও জঙ্গিবাদ বিষয়ক সাংবাদিকতা এবং ক্রিমিনোলজির ছাত্র হিসেবে উত্তরটা চাইছি।

নুরুজ্জামান লাবু: দেখুন, বাংলাদেশে বাকস্বাধীনতা যে সংকুচিত সেটি তো নতুন করে বলার অবকাশ নেই। আমি যতদূর জানি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনও কোনও সংস্থার আপত্তির কারণে ছবিটির ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে না। সংস্থাগুলো মনে করছে, মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ছবিতে তাদের সাফল্যমণ্ডিত ভূমিকা দেখানো হয়নি। এখানে একটা ইগোও কাজ করছে। কেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী তাদের সঙ্গে আগে যোগাযোগ করেনি। এটা কোনোভাবে সমীচীন নয়। আমি মনে করি অতি দ্রুত মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ছবিটি ছাড়পত্র দেওয়া উচিত।

বাংলা ট্রিবিউন: দ্বিতীয়ত, এর নির্মাতা ফারুকীর সঙ্গেও আপনার নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। আপনি কি মনে করেন ফারুকী এখানে নিষ্পাপ- মানে তার ছবিটিতে কোনও দেশবিরোধ বা আপত্তির জায়গা নেই?

নুরুজ্জামান লাবু: হ্যাঁ, মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর সঙ্গে বহু আগে থেকেই আমার পরিচয় রয়েছে। যদিও ছবিটা আমি এখনও দেখিনি। কিন্তু ফারুকী ভাইয়ের ভাষ্যমতে, ছবির থিমটা একটু ভিন্ন। হলি আর্টিজানের জঙ্গি হামলা ও জিম্মি ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছবিটি তৈরি করলেও এখানে মূলত শান্তির ধর্ম ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে যে ভ্রান্ত মতবাদের পেছনে তরুণরা ছুটছে, সেরকম বিষয়গুলো তিনি তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। আমি তো মনে করি, সার্বিকভাবে জঙ্গিবাদের ভাষায় কাউন্টার ন্যারেটিভ প্রচারের একটি অংশ হিসেবেই ছবিটি মুক্তি দেওয়া প্রয়োজন।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনি বলছিলেন বাহিনীর বীরত্বগাথা ফুটে ওঠেনি, তাই একটি মহল নাখোশ। আবার কেউ বলছেন এই ছবিতে (শনিবার বিকেল) একজন বিতর্কিত অধ্যাপককে হিরো বানানো হয়েছে। আপনি কী ভাবছেন বা আপনার সূত্র কী বলছে?

নুরুজ্জামান লাবু: বীরত্বগাথা বিষয়ক দ্বন্দ্বেই ছবিটি আটকে আছে বলে আমিও জানি। কিন্তু ছবিটিতে তো কোনও গোলাগুলি বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনও দৃশ্য সম্ভবত নেই, তাহলে চাইলেও তো বীরত্বগাথা দেখানোর উপায় নেই। এই সিনেমার থিম তো ভিন্ন। আর শিল্পীর তো অবশ্যই স্বাধীনতা থাকা উচিত, তিনি কী দেখাবেন। আর বিতর্কিত অধ্যাপক বলতে আপনি যাকে বুঝিয়েছেন, হাসনাত করিম। দেখেন, পুলিশের তদন্তে কিন্তু তার কোনও অপরাধ সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। তাহলে তাকে বিতর্কিত বলারও তো কোনও সুযোগ নেই। তিনি তো জঙ্গিদের হাতে জিম্মি-ট্রমা ছাড়া মিডিয়া ট্রায়ালের মাধ্যমে ভিকটিমাইজড হয়েছেনই।

যে বই থেকে ‘ফারাজ’ বাংলা ট্রিবিউন: ফারাজ ও প্রফেসর- পুরো ঘটনায় দুটি চরিত্রকে আপনি নিজের অনুসন্ধানে কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন। যে দুজন হিরোর রোল প্লে করতে যাচ্ছে বলিউড ও ঢালিউডের দুটি সিনেমায়। অথবা এই যে হিরো বানানোর সেলুলয়েড প্রক্রিয়া- সেটাকে আপনি কীভাবে দেখেন।

নুরুজ্জামান লাবু: দেখেন, মুভি মানেই তো ফিকশন বা কাল্পনিক কাহিনি। এখানে কেউ হিরো আবার কেউ ভিলেন থাকে। বাস্তব জীবনে হিরোরা ভীতু আবার ভিলেনরা হিরো হতে পারেন। এখানে পরিচালক এবং স্ক্রিপ্ট রাইটার সিদ্ধান্ত নেবেন কাকে হিরো বানাবেন। বাস্তবে ফারাজের হিরোইজমের বিষয়টি মিথ্যা, এটা আমি আগেই বলেছি। আবার ফারাজকে অনেকেই জঙ্গি হিসেবে অভিহিত করেছিল, সেটারও কোনও সত্যতা আমি পাইনি। ফারাজ- অন্য যারা নিহত হয়েছিলেন তাদের মতোই একজন সাধারণ। আর হাসনাত করিমও অন্য যে ভিকটিম রয়েছেন তাদের মতোই। সিনেমা যেহেতু একেকজনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে, সেহেতু পরিচালকরা ভিন্ন ভিন্ন জনকে বেছে নিয়েছেন। এখানে আসল বিষয় হলো সিনেমার মূল বার্তাটা কী? জঙ্গিবাদ যে একটি ভ্রান্ত মতবাদ তা জোরালোভাবে উপস্থাপিত হওয়াটাই মুখ্য বিষয়। আমার বিশ্বাস, দুটো ছবিরই অন্তর্নিহিত গল্প জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে।  

বাংলা ট্রিবিউন: ‘ফারাজ’ ৩ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পাচ্ছে। যারও আগে নিশ্চয় প্রিমিয়ার হবে। মুম্বাই থেকে দাওয়াত পেলেন? না পেলেও যেতে তো পারেন, হলে বসে ছবিটি দেখতে।

নুরুজ্জামান লাবু: মুম্বাই থেকেই আমাকে ট্রেলার প্রকাশের বিষয়টি জানানো হয়েছে। নিশ্চয়ই সেরকম কোনও আয়োজন থাকলে দাওয়াত পাবো। কিন্তু যেতে পারবো কিনা তা নিশ্চিত নই। তবে হ্যাঁ, হলে বসে সিনেমাটা দেখার ইচ্ছে আমার রয়েছে। সেক্ষেত্রে কলকাতা গিয়েও দেখতে পারি।

বাংলা ট্রিবিউন: হলি আর্টিজান নিয়ে যদি আরেকটি সিনেমার প্লট আপনার কাছে চাওয়া হয় হলিউড থেকে। অথবা যে কেউ। কোন প্লটটি দেবেন। কারণ, পুরো অপারেশনে আপনি সরাসরি হাজির ছিলেন এবং এখনও সেটি ফলো করেছেন।

নুরুজ্জামান লাবু: অবশ্যই আরও অনেক প্লট রয়েছে। পুরো ঘটনার নানা দিক থেকে যদি দেখতে চান তবে দেখানোর সুযোগ আছে। ধরেন, সেদিন একজন শেফ, যিনি হামলার সময় একজন জাপানি নাগরিকসহ ঠান্ডা চিলার রুমে পালিয়ে ছিলেন। তারপর রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ তাদের যখন বের করে আনা হয়, সেই সেফের সামনেই জাপানি নাগরিককে গুলি চালিয়ে হত্যা করে জঙ্গিরা। সেই শেফ লাশ আর রক্তের ওপর দিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে সেখান থেকে আরেক রুমে গিয়েছিল। সেসব দৃশ্য বা তার চোখে আপনি একটা গল্প তৈরি করতেই পারেন। সেটিও ভীষণরকম থ্রিলিং হতে পারে। এরকম অসংখ্য প্লট আছে। কেউ যোগাযোগ করলে অবশ্যই সহায়তা করতে পারি। 

বাংলা ট্রিবিউন: ‘ফারাজ’ ছবিটির সফলতা কামনা করছি। ‘শনিবার বিকেল’ ছাড়পত্র পাবে, সেটিও আমাদের প্রত্যাশা। আপনাকে ধন্যবাদ।
 
নুরুজ্জামান লাবু: একই প্রত্যাশা আমার দিক থেকেও। আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।

ফারাজ ট্রেলার:

 

/এমএম/এমওএফ/
সম্পর্কিত
যুক্তরাজ্যের টিভি চ্যানেলে ফারুকী-তিশার ‘অটোবায়োগ্রাফি’
যুক্তরাজ্যের টিভি চ্যানেলে ফারুকী-তিশার ‘অটোবায়োগ্রাফি’
ওটিটি: দুই উৎসব, দুই সিনেমা, দুই সিরিজ
ওটিটি: দুই উৎসব, দুই সিনেমা, দুই সিরিজ
‘কিছু’ না করেই সিনেমায় জেফার!
‘কিছু’ না করেই সিনেমায় জেফার!
জেফারকে সিনেমায় নিয়েছে ফারুকীকন্যা ইলহাম!
জেফারকে সিনেমায় নিয়েছে ফারুকীকন্যা ইলহাম!
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
প্রেম নাকি বিয়ে, মুখ খুললেন ইলিয়ানা
প্রেম নাকি বিয়ে, মুখ খুললেন ইলিয়ানা
এফডিসিতে মারামারি: যৌথ বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত হলো
এফডিসিতে মারামারি: যৌথ বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত হলো
সেন্সর বোর্ডের সিদ্ধান্ত, রাফীর সিনেমাটি প্রদর্শনের অযোগ্য!
সেন্সর বোর্ডের সিদ্ধান্ত, রাফীর সিনেমাটি প্রদর্শনের অযোগ্য!