স্বামীর হাত ধরে সিনেমায় আসা, বিভিন্ন সিনেমায় স্বল্প বসনে, সাহসী রূপে অভিনয় করা, গ্ল্যামার গার্ল হিসেবে দেশজুড়ে পরিচিতি পাওয়া এবং হঠাৎ রূপালি জগত থেকে সরে যাওয়া। চিত্রনায়িকা অলিভিয়া গোমেজের ক্যারিয়ার গ্রাফ মোটামুটি এরকম। ঢালিউডের ‘রহস্যময়ী’ নায়িকা হিসেবে তার নামটি সর্বাগ্রে উচ্চারিত হয়।
অলিভিয়ার সঙ্গে ‘রহস্যময়ী’ উপাধি জুড়ে যাওয়ার কারণও আছে। তিনি সিনেমা জগত থেকে এমনভাবেই সরে গেছেন যে, তার ঠিকানা পর্যন্ত কারও কাছে নেই। সিনে অঙ্গনের মানুষ থেকে কোনও সাংবাদিক, কারও সঙ্গেই তার যোগাযোগ নেই।
তবে বছর দুয়েক আগে জানা যায়, তিনি সুস্থ-স্বাভাবিকভাবে বেঁচে আছেন। বসবাস করছেন রাজধানীর বনানীতে। কিংবদন্তি অভিনেত্রী শবনমের সঙ্গে একবার বারিধারা পার্কে দেখা হয়েছিলো অলিভিয়ার। দুজন কুশল বিনিময় করেন। কিন্তু সেই যোগাযোগ আর দীর্ঘ হয়নি।
এরও আগে কিংবদন্তি অভিনেত্রী ববিতা জানিয়েছিলেন, তার সঙ্গে নিয়মিত দেখা হয় অলিভিয়ার। স্বামী-সংসার নিয়ে তিনি সুখে আছেন বলে তথ্য দেন ববিতা। তবে মিডিয়ার প্রকাশ্যে আসার ইচ্ছে বা আগ্রহ নেই তার। সেজন্যই নিজেকে আড়াল করে রাখেন।
অলিভিয়া সম্পর্কে এতসব বলার হেতু, আজ বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) তার জন্মদিন। ১৯৫৩ সালের এই দিনে পাকিস্তানের করাচিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি। তার বাবা-মা মূলত ভারতের গোয়ার বাসিন্দা ছিলেন। দেশভাগের পর তারা পাকিস্তানে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। এরপর তারা স্থানান্তরিত হন ঢাকায়।
ইংরেজি মিডিয়ামে পড়াশোনা করার সুবাদে অল্প বয়সেই আধুনিক হয়ে ওঠেন অলিভিয়া। মাত্র ১৪ বছর বয়সেই তিনি মডেলিং শুরু করেন। এরপর চাকরি করেছেন একটি হোটেলের রিসিপশনিস্ট হিসেবে। সেখানে থাকাকালীন কয়েকটি বিজ্ঞাপনে মডেল হয়েছিলেন।
১৯৭২ সালে অলিভিয়ার বয়স যখন ২০ বছর, তখন তিনি বিয়ে করেন চলচ্চিত্র নির্মাতা এস এম শফিকে। একই বছর স্বামীর হাত ধরেই তিনি পা রাখেন সিনেমার রঙিন জগতে। ছবির নাম ‘ছন্দ হারিয়ে গেলো’।
১৯৭৪ সালে মুক্তি পাওয়া ছবি ‘মাসুদ রানা’য় প্রথমবার সাহসী রূপে হাজির হন অলিভিয়া। সেখানে তাকে হাঁটুর ওপরে পোশাক পরিধান করতে দেখা যায়। এর আগে এমন পোশাকে কোনও অভিনেত্রী পর্দায় আসেননি। পরবর্তীতে আবেদনময়ী-গ্ল্যামারাস চরিত্রে অলিভিয়ার জনপ্রিয়তা বাড়ে। অন্যান্য চরিত্রেও কাজ করেছেন বটে। কিন্তু দর্শক তাকে শুধু গ্ল্যামারেই গ্রহণ করেছিলো।
১৯৭৬ সালে ‘দ্য রেইন’ সিনেমায় অভিনয় করে খ্যাতি পান অলিভিয়া। বাংলা ও উর্দু দুই ভাষায় ছবিটি বানিয়েছিলেন তার স্বামী এস এম শফি। এতে অলিভিয়ার নায়ক ওয়াসিম। এরপর তারা একসঙ্গে আরও কয়েকটি সিনেমায় কাজ করেছিলেন।
অলিভিয়া হলেন বাংলাদেশের একমাত্র নায়িকা, যিনি মহানায়ক উত্তম কুমারের সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন। ১৯৭৬ সালে মুক্তি পাওয়া সেই সিনেমার নাম ‘বহ্নিশিখা’।
অলিভিয়াকে সর্বশেষ দেখা গিয়েছিলো ১৯৯৫ সালে মুক্তি পাওয়া ‘দুশমনি’ সিনেমায়। এরপর তিনি ক্রমশ হারিয়ে যান কালের গর্ভে। নিজেকে আড়াল করে নেন রূপালি লোকালয় থেকে। বিভিন্ন সময়ে তার সঙ্গে সিনেমা অঙ্গনের মানুষেরাও যোগাযোগ করে ব্যর্থ হয়েছেন বলে জানা যায়।
প্রায় দুই যুগের ক্যারিয়ারে অলিভিয়া ৫৩টি সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো- ‘মাসুদ রানা’, ‘দ্য রেইন’, ‘বহ্নিশিখা’, ‘তীর ভাঙা ঢেউ’, ‘শীষ নাগ’, ‘শ্রীমতি ৪২০’, ‘যাদুর বাঁশী’, ‘পাগলা রাজা’, ‘ডার্লিং’, ‘হিম্মতওয়ালি’, ‘লাল মেমসাহেব’, ‘শাহজাদী গুলবাহার’ ইত্যাদি।
জানা যায়, ১৯৯৫ সালে এস এম শফি মারা যান। ওই শোকেই সিনেমা ছেড়ে দেন অলিভিয়া। পরবর্তীতে হাসান নামের এক টেক্সটাইল ব্যবসায়ীকে বিয়ে করেছেন বলে শোনা যায়।