এই গল্পের অনেকগুলো বাঁক। তাও আবার প্রতিটি বাঁকে রহস্যে ঘেরা। যেন ফেলুদা ফেইল! বৃহস্পতিবার (১২ জুন) সকালের দিকে টাঙ্গাইলের গফরগাঁওয়ের মিসকিন মাজারের গাব গাছতলায় গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলেন অভিনেতা সমু চৌধুরী। তিনি সেখানে মাটির ওপর মাদুর পেতে গামছা পরে শুয়ে ছিলেন অঘোরে। সেই ছবি ও ভিডিও ভাইরাল দিনভর।
যথারীতি এই ঘটনার দ্রুত সমাধানে কিংবা রহস্য উদঘাটনে ত্রাতা হয়ে মাঠে নামে অভিনয় শিল্পী সংঘ। যেমনটা সংগঠনটি বরাবরই করে থাকে শিল্পীদের সুখে-দুঃখে। মাজার থেকে বৃহস্পতিবার বিকালেই নিরাপদ উদ্ধারের পর অভিনেতাকে মধ্যরাতে নিয়ে আসা হয় ঢাকায়, নিজ বাসায়। পাশাপাশি সংঘের কর্তারা ভাবছিলেন, যদি কোনও সাপোর্ট বা চিকিৎসার প্রয়োজন হয়, সেটি করা হবে সংঘের পক্ষ থেকে।
কিন্তু সমু চৌধুরী জানান, তিনি একদম ফিট আছেন। মাঝে মাঝেই তিনি দেশের বিভিন্ন মাজারে বেড়াতে যান। তারই অংশ হিসেবে উক্ত মাজারে গিয়েছিলেন বুধবার (১১ জুন) রাতে। সঙ্গে বাড়তি কাপড় নেননি বলে, গরমে অতিষ্ঠ হয়ে সকাল নাগাদ গোসল করে পরনের কাপড় কেঁচে শুকাতে দেন। সেই ফাঁকে গা মোছার গামছাটি পরে গাছতলায় মাদুর পেতে শুয়ে একটু ঘুমিয়ে নেন। মূলত গাছের ছায়ায় শান্তির সেই ঘুমের ছবিটাই ভাইরাল হয়ে যায় ফেসবুকে।
তার ভাষায়, ‘ঘুম ভেঙে দেখি গোটা দুনিয়ায় আমি ভাইরাল!’
বৃহস্পতিবার রাতেই মাইক্রো নিয়ে ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল পৌঁছে যান অভিনয় শিল্পী সংঘের দুই নেতা সুজাত শিমুল ও জুলফিকার চঞ্চল। আর পুরো বিষয়টি মুঠোফোনে সচেতনতার সঙ্গে সামাল ও পর্যবেক্ষণ করছিলেন সংঘের সভাপতি আজাদ আবুল কালাম ও সাধারণ সম্পাদক রাশেদ মামুন অপু।
টাঙ্গাইল থেকে রাতেই সমু চৌধুরীকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়, নিজ বাসায়। এখানেই ঘটনাটি শেষ হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু সেটি তখনই শেষ করেননি সমু চৌধুরী। ঢাকায় ফেরার পরই অভিনেতার মনে হলো তার মায়ের কথা। তিনি খুব করে চাইছিলেন, কিছুটা সময় যশোরে তার মায়ের সঙ্গে থাকতে।
অভিনেতার ইচ্ছে বলে কথা, সংঘ সায় দিলো।
শুক্রবার দুপুরে সংঘের সম্পাদক রাশেদ মামুন অপু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গভীর রাতে সংঘের তত্ত্বাবধানে ভাইকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। কিন্তু ভাই বলছিলেন তার মায়ের কথা। মায়ের কাছে যেতে চান। ঢাকায় মন টিকছে না। এরপর ঢাকার বাসা থেকে কিছু কাপড়চোপড় নিয়ে একই গাড়ি নিয়ে ভাই যশোরে চলে যান মায়ের কাছে।’
অপু আরও জানান, সমু চৌধুরী সুস্থ ও স্বাভাবিক আছেন। তাকে নিয়ে বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ করেন সবার প্রতি।
গফরগাঁও, ঢাকা হয়ে যশোর। লম্বা জার্নি শেষে শুক্রবার (১৩ জুন) সকাল ৯টা নাগাদ সমু চৌধুরী যশোরে পৌঁছান, মায়ের কাছে। বাংলা ট্রিবিউনকে নিশ্চিত করেছেন অভিনেতার চাচাতো ভাই অপু।
অভিনেতা তার মায়ের কাছে নিরাপদে পৌঁছালেও তাকে ঘিরে যে ছবি ও মন্তব্য প্রচার হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া হয়ে গণমাধ্যমে, সে বিষয়ে অনেক শিল্পী-নির্মাতা-ভক্ত ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। দাবি করছেন, একজন নিপাট ভদ্র ও সুস্থ মানুষকে পাগল বানানো হলো! সেই প্রেক্ষিতে অভিনয়শিল্পী সংঘ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, একজন শিল্পীকে ঘিরে এমন বিভ্রান্তি ছড়ানো অনাকাঙ্ক্ষিত ও বিব্রতকর। ভবিষ্যতে গুজব থেকে বিরত থাকতে গণমাধ্যম ও জনসাধারণকে অনুরোধ জানানো হয়। একইসাথে সমু চৌধুরীর সুস্থতা এবং শিল্পে তার আরও দীপ্ত পথচলার কামনা করা হয়েছে।
অনেকেরই জানবার আগ্রহ থাকতে পারে, সমু চৌধুরীর পারিবারিক অবস্থান প্রসঙ্গে। অনেকেই প্রশ্ন তুলতে পারেন, ঢাকায় নিজ বাসায় এসেও কেন যশোর ফিরে গেলেন বৃদ্ধ মায়ের কাছে! এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অভিনেতা এখনও সিঙ্গেল! যার জীবনে স্ত্রী-সন্তান-সংসার বিষয়ক কোনও জটিলতা নেই।
সমু চৌধুরী, ৯০ দশক থেকে এখনও অভিনয় করছেন। নায়ক দিয়ে শুরু করে এখন তিনি দেশের অন্যতম চরিত্রাভিনেতা। মাঝে খানিক বিরতিতে ছিলেন বটে। অভিনয়ের বাইরে মিডিয়ায় অভিনেতার অবস্থান অসম্ভব ভদ্র আর আড্ডাপ্রিয় একজন মানুষ হিসেবে।