চলে যাওয়ার জন্যই হয়ত মানুষের জন্ম। কিন্তু সবাই কি চলে যায়? না, কেউ কেউ চলে গিয়েও থেকে যান, আরও গভীরভাবে; ইতিহাসের সমৃদ্ধ পাতায় স্থায়ীভাবে। তেমনই একজন গীতিকবি ও চলচ্চিত্রকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার। পৃথিবী ছেড়ে তিনি চলে গেছেন বটে। কিন্তু তার সৃষ্টিকর্ম এমনভাবে ছড়িয়ে আছে বাংলা ও বাঙালির মাঝে, এক মুহূর্তের জন্যও তার অস্তিত্ব অস্বীকারের সুযোগ নেই।
গেলো বছরের ৪ সেপ্টেম্বর মারা গেছেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার। আর আজ বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) তার জন্মদিন। অর্থাৎ মৃত্যুর পর প্রথম জন্মদিন। বলা বাহুল্য, দিনটিতে তাকে শ্রদ্ধায় স্মরণ করছেন, করবেন ভক্ত, শুভাকাঙ্খী, সহকর্মী ও শিল্পজগতের মানুষেরা।
তবে পারিবারিক মহলে তাকে ঘিরে তেমন কোনও উদযাপন থাকছে না বলে বাংলা ট্রিবিউনকে জানালেন তার কন্যা দিঠি আনোয়ার। তিনি বলেন, ‘যেহেতু আব্বু নেই, তার জন্মদিনে কোনও কেক কাটা বা উদযাপন হবে না। তবে অসহায় ও এতিমদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেছি। তারা যেন আব্বুর জন্য দোয়া করে, সেজন্য এ আয়োজন।’
এর বাইরে দুটি টিভি অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন দিঠি। সেখানে বাবাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ ও তার লেখা বিখ্যাত কিছু গান পরিবেশন করবেন।
বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) ‘আইপিডিসি আমাদের গান’ অনুষ্ঠানের নতুন সিজনের প্রচার শুরু হচ্ছে। এবারের সিজনটি পুরোটা সাজানো হয়েছে গাজী মাজহারুল আনোয়ারের গান দিয়ে। দিঠি জানান, এটিই তার বাবার জন্মদিন উপলক্ষে সবচেয়ে বড় আয়োজন। এই সিজনে মোট আটটি গান থাকছে। যেগুলো নতুন সংগীতায়োজনে গেয়েছেন এ প্রজন্মের শিল্পীরা।
১৯৪৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লার দাউদকান্দি থানার তালেশ্বর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার। লেখালেখির সূচনা ছোটবেলাতেই। তবে পেশাদার গান লেখা শুরু হয় ১৯৬৪ সালে রেডিও পাকিস্তান থেকে। এরপর বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) জন্মলগ্ন থেকেই নিয়মিত গান ও নাটক রচনা করেছেন তিনি।
সিনেমায় গাজী মাজহারুল আনোয়ারের প্রথম লেখা গান ‘আকাশের হাতে আছে একরাশ নীল’। এটি ১৯৬৭ সালের ‘আয়না ও অবশিষ্ট’ সিনেমায় ব্যবহৃত হয়েছিলো এবং গানটি তুমুল জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলো। ফলশ্রুতিতে পরবর্তী সময়ে গীতিকবি হিসেবে তার পথচলা সুগম হয়।
পাঁচ দশকের বেশি সময়ের ক্যারিয়ারে গাজী মাজহারুল আনোয়ার ২০ হাজারের অধিক গান রচনা করেছেন। এর মধ্যে কালজয়ী গানের তালিকাও বেশ লম্বা। তার লেখা কয়েকটি গানের নাম না বললেই নয়। যেমন; ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’, একতারা তুই দেশের কথা বল রে এবার বল’, ‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়’, ‘গানের খাতায় স্বরলিপি লিখে’, ‘আকাশের হাতে আছে একরাশ নীল’, ‘শুধু গান গেয়ে পরিচয়’, ‘ও পাখি তোর যন্ত্রণা’, ‘ইশারায় শীষ দিয়ে’, ‘চোখের নজর এমনি কইরা’, ‘এই মন তোমাকে দিলাম’ প্রভৃতি।
গাজী মাজহারুল আনোয়ার গীতিকবি সংঘের আজীবন সদস্য ছিলেন। ২০০২ সালে একুশে পদক এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন তিনি। স্বাধীনতা যুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য স্বাধীন দেশের সর্বপ্রথম পুরস্কার ‘বাংলাদেশ প্রেসিডেন্ট গোল্ড মেডেল অ্যাওয়ার্ড’ও পেয়েছিলেন এই নন্দিত ব্যক্তিত্ব। এছাড়াও সাতবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, একাধিকবার বাচসাসসহ বিভিন্ন সম্মাননা অর্জন করেছিলেন।