X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

‘বুকের মধ্যে আগুন’ নিয়ে এবার পুলিশ কর্মকর্তাদের ক্ষোভ!

সুধাময় সরকার
০৭ মার্চ ২০২৩, ১৫:০৬আপডেট : ০৭ মার্চ ২০২৩, ১৯:৪৮

হইচই কর্তৃপক্ষ এমন দুটি বিষয় বেছে নিয়েছে ওয়েব সিরিজের জন্য, যেটি এখন সত্যি সত্যিই সংশ্লিষ্টদের ‘বুকের মধ্যে আগুন’ হয়ে দাউ দাউ করে জ্বলছে। সালমান শাহ এবং পুলিশ- দুটিই বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বেশ স্পর্শকাতর বিষয়। সেই দুটিকে উপজীব্য করে কিছু করা মানে যে ‘ছেলে খেলা নয়’, তা ক্রমশ প্রকাশ্য।

সিরিজটি মুক্তির আগে থেকেই সালমান স্বজন ও ভক্তরা চিৎকার করেছেন কাজটির বিরুদ্ধে। এমনকি আইনের আশ্রয়ে গিয়েও লাভ হলো না। ২ মার্চ অনেকটা নীরবেই প্রকাশ হলো শাহরিয়ার শাকিল প্রযোজিত এবং তানিম রহমান অংশু নির্মিত ৮ পর্বের সিরিজ ‘বুকের মধ্যে আগুন’। যাতে মূল নায়ক হিসেবে পুলিশের চরিত্রে অভিনয় করেছেন জিয়াউল ফারুক অপূর্ব এবং তার তদন্তের বিষয় এক জনপ্রিয় নায়কের অকাল মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন।

না, সিরিজের মাধ্যমে সেই রহস্য উদঘাটন করতে পারেননি পুলিশ কর্মকর্তা। বরং সিরিজটিতে পুলিশের ব্যবহার, পোশাক, অভিনেতাদের মেকআপ, দুর্বল চিত্রনাট্য ও নির্মাণ এবং রহস্য উন্মোচনের প্রক্রিয়া নিয়ে গুরুতর সব প্রশ্ন উঠেছে দর্শকদের মাঝে। ক্ষোভ প্রকাশ করেই চলেছে সালমান স্বজন ও ভক্তরা। অন্যদিকে সিরিজ সংশ্লিষ্টরা বলছেন ‘সব চরিত্র কাল্পনিক’!

এমন পরিস্থিতিতে সিরিজের বয়স যখন সাত দিন গড়ালো তখনই বিস্ফোরক সব প্রতিক্রিয়া আসতে শুরু করলো বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর চৌকস কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে। এমনকি সেটি সরাসরি সোশাল হ্যান্ডেলে পাবলিক পোস্টের মাধ্যমে।  

সিরিজের তিনটি দৃশ্য পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টের অ্যাডিশনাল ডেপুটি কমিশনার (এডিসি) নাজমুল ইসলাম তার ফেসবুক পোস্টে বলেন, ‘‘আপনি দুকলম লিখে দিলেন ‘কারও জীবনের সঙ্গে মিলে গেলে আমরা দায়ী না’, আর আমরা পাগলের মতো তা মেনে নেবো, তা হবে না। সালমান শাহ বাংলাদেশের নায়ক, বাংলাদেশের আবেগ এবং এর সঙ্গে অনেক মানুষের ব্যক্তিগত জীবন জড়িত। হইচই এর নাম দিয়েছে ‘বুকের মধ্যে আগুন’। আমি লিবার্টি সম্মান করি, তবে প্রয়োজনীয় প্রোটেকশনিজমকে ভুলে যাইনি।’’

এই কর্মকর্তা প্রশ্ন তোলেন এভাবে, জাতির বিবেক-আবেগ আজ জবাব দিক ‘বুকের মধ্যে আগুন’ নাকি ‘আমাদের সংস্কৃতির মধ্যে আগুন’?

এদিকে সিরিজের নির্মাতা এ বিষয়ে চুপ থাকলেও অভিনেতা অপূর্ব এরমধ্যে কথা বলেছেন গণমাধ্যমের সঙ্গে। তিনি বলেন, “এটা একটা ফিকশন হিসেবে পরিচালক তুলে ধরেছেন। আমাদের পক্ষ থেকে আমরা আগেও বলেছি যে এটা ফিকশন। যদি ওনাকে (সালমান শাহ) নিয়ে স্টোরিটা হতো, তাহলে বলা হতো ‘বেজড অন আ ট্রু স্টোরি’ (সত্য ঘটনা অবলম্বনে)। কিন্তু গল্পের কোথাও এটা উল্লেখ নেই। আমরা এটাকে ফিকশন হিসেবেই বিবেচনা করছি।”

অন্যদিকে অংশু বরাবরের মতো এখনও নীরব। তিনি বলছেন, ‘আমি আসলে এ বিষয়ে এখনই কিছু বলতে চাই না।’ 

নির্মাতা বা হইচই কর্তৃপক্ষ সম্ভবত সিরিজটিকে নিয়ে চলমান আলোচনা আরও কিছু দিন জিইয়ে রাখতে চান। তাই এখনই কোনও মন্তব্য করতে চাইছেন না।

ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার খন্দকার লেনিন প্রশ্ন তুলেছেন সিরিজের পুলিশ কর্মকর্তা অপূর্বকে নিয়ে। তার ভাষ্যে, ‌‘‘বুকের মধ্যে আগুন’ ওয়েব সিরিজটিতে পুলিশের পোশাক ব্যবহার এবং আচার-আচরণে যা ইচ্ছা তাই। সিরিজটি দেখলাম। গল্প, চরিত্র, সিনেমাটোগ্রাফি ইত্যাদি নিয়ে কথা বলা আমার উদ্দেশ্য না। শুধু সিনেমায় পুলিশের অংশটুকু নিয়ে কথা বলবো। রাষ্ট্রের একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী। গল্পের প্রয়োজনে অবশ্যই আপনি কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে পুলিশের বিভিন্ন দফতর, অফিস, র‌্যাঙ্ক, গাড়ি ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন। অতীতে এরকম বহু উদাহরণ আছে। বাহিনীর কোনও কিছু ব্যবহার করলে অবশ্যই সে সম্পর্কে আপনার একটা ভালো স্টাডি এবং অবজারভেশন থাকতে হবে। চিত্রনাট্য প্রস্তুত করার সময় অবশ্যই এটা গবেষণার অংশে রাখতে হবে। পুলিশ বাহিনী কিন্তু আপনাকে সবসময় এ ব্যাপারে সাহায্য করতে সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব রাখে। অতীতে অনেকে নির্মাতা বাহিনীর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ করেছেন। কিন্তু আপনারা কি করলেন? গায়ের জোরে, না বুঝে, না জেনে মূর্খের মতো রাষ্ট্রের একটা পবিত্র বাহিনীর পোশাক, স্যালুট ও আচরণ নিয়ে ছেলেখেলা খেললেন।’’

পুলিশের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বেশকটি গুরুতর প্রশ্ন ছুড়েছেন ‘বুকের মধ্যে আগুন’ কর্তৃপক্ষের প্রতি, ‘বাস্তবে অফিসাররা কি এমন হয়? কোথায় পান এ ভাবনাগুলো। রেফারেন্স কী? বাহিনীকে এভাবে উপস্থাপন করার পেছনে আপনাদের উদ্দেশ্যটা কী?’

এই কর্মকর্তা সংশ্লিষ্টদের মনে করিয়ে দেন এভাবে, ‘পুলিশ অফিসাররা সবাই উচ্চশিক্ষিত। তারা দীর্ঘ কঠোর ট্রেনিং শেষ করে মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে আসেন। কোনও আনফিট বা মানসিক রোগীর জায়গা বাহিনীতে নেই। আপনারা যেটা করেছেন সেটা রীতিমতো গুরুতর অপরাধ। নিজেকে এত স্মার্ট ভাবেন কেন? ফিকশনের নামে কোনও কিছু জায়েজ করার চেষ্টা করবেন না। মনে রাখবেন, এই ওয়েব সিরিজে পুলিশ বাহিনীর মর্যাদা স্পষ্টত ক্ষুণ্ণ করেছেন।’

‘বুকের মধ্যে আগুন’ সিরিজটি আট পর্বে ভাগ করা। সিরিজে পুলিশ কর্মকর্তা গোলাম মামুন চরিত্রে অভিনয় করেছেন অপূর্ব। 

সিরিজটি দেখলে এটুকু স্পষ্ট, এর প্রতিটি চরিত্রই সাজানো হয়েছে নায়ক সালমান শাহর সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন শিল্পী, কুশলী ও পরিবারের মানুষের আদলে। যেমন, সালমান শাহর আদলে দেখা গেছে ইয়াশ রেহানকে, তার স্ত্রীর (সামিরা) মতো দেখা গেছে তমা মির্জাকে, নায়কের মা নীলা চৌধুরীর মতো লেগেছে তানিয়া আহমেদকে, নায়িকা শাবনূরের মতো শাহনাজ সুমি, রাজনীতিক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের গেটআপে তৌকীর আহমেদ, প্রযোজক আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের অবয়বে আছেন তারিক আনাম খান। এমনকি এতে সালমান শাহর ব্যবহার করা আলোচিত ডানামেলা গাড়িটিও দেখা গেছে ইয়াশ রোহানকে ব্যবহার করতে।

/এমএম/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সন্ধ্যা নামিলো শ্যাম: গানে ও চিত্রে মুগ্ধতার সমন্বয়
সন্ধ্যা নামিলো শ্যাম: গানে ও চিত্রে মুগ্ধতার সমন্বয়
ঈদ নাটক: ভিউতে এগিয়ে থাকা ১০
ঈদ নাটক: ভিউতে এগিয়ে থাকা ১০
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
গার্মেন্টসকর্মীদের জীবনের গল্প ‘ঈদের ছুটি’!
গার্মেন্টসকর্মীদের জীবনের গল্প ‘ঈদের ছুটি’!
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
শিল্পকলায় মঞ্চায়িত হলো আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের ‘হি-রোজ’
শিল্পকলায় মঞ্চায়িত হলো আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের ‘হি-রোজ’
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!