X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

রুচির দুর্ভিক্ষ: বুঝতে পারছেন কি, সামনে কতটা অন্ধকার

বিনোদন ডেস্ক
২৮ মার্চ ২০২৩, ১৯:৫৫আপডেট : ২৮ মার্চ ২০২৩, ২১:১১

দেশের সংস্কৃতি অঙ্গনের করুণ দশার বর্ণনা দিতে গিয়ে কিংবদন্তি অভিনেতা ও নাট্যজন মামুনুর রশীদ বলেছেন, ‘আমরা একটা রুচির দুর্ভিক্ষের মধ্যে পড়ে গেছি। সেখান থেকে হিরো আলমের মতো একটা লোকের উত্থান হয়েছে। যে উত্থান কুরুচি, কুশিক্ষা ও অপসংস্কৃতির উত্থান। এই উত্থান কীভাবে রোধ করা যাবে, এটা যেমন রাজনৈতিক সমস্যা, তেমনি আমাদের সাংস্কৃতিক সমস্যাও।’

প্রসঙ্গক্রমে তিনি আরও অনেক কথাই বলেছেন, তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গেছে ‘রুচির দুর্ভিক্ষ’ ও ‘হিরো আলম’র বিষয়টি। এরপর থেকে কেউ মামুনুর রশীদের মন্তব্যের পক্ষে ব্যাখ্যা দিচ্ছেন, কেউ আবার ফুঁসে উঠছেন আলমের পক্ষ নিয়ে। কেবল সাধারণ নেটিজেন নয়, সংস্কৃতি অঙ্গনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও সামিল হয়েছেন এই ‘হট কেক’ ইস্যুতে।

‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’ খ্যাত নির্মাতা মাসুদ হাসান উজ্জ্বল বলেছেন, “রুচির দুর্ভিক্ষ’ নিয়ে মন্তব্য করায় কিছু মানুষ দেখলাম শ্রদ্ধেয় মামুনুর রশীদের ওপর বেজায় চটেছেন। তবে এই দুর্ভিক্ষের দায় মামুনুর রশীদের মতো সামনের সারিতে থাকা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গ কতটা এড়াতে পারেন, সেটাও এক বিরাট প্রশ্ন! ‘রুচির দুর্ভিক্ষ’ কথাটা প্রথম বলেছিলেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সেই ৭০-এর দশকে। সেই সময়ে বসে তিনি এটা অনুভব করতে পেরেছিলেন, এখন বেঁচে থাকলে এই সময় নিয়ে তিনি কী ভাবতেন কে জানে!”

এই নির্মাতার মতে, ‘যারা এমন নায়ক তৈরি করে নিয়েছেন; তার এবং পরবর্তী প্রজন্মের পথ প্রদর্শক কিন্তু এরাই। কারণ বিষয়টা নিছক বিনোদনে আর আটকে নেই। এই ব্যক্তি কতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলে তাকে নিয়ে মির্জা ফখরুল আর ওবায়দুল কাদেরকে পাল্টাপাল্টি মন্তব্য করতে দেখা যায়! ফলে নিশ্চিতভাবেই এই সময়ের একটা বিরাট জনগোষ্ঠী এই ব্যক্তিকে নায়ক হিসেবে বেছে নিয়েছে। আমার সৌভাগ্য না দুর্ভাগ্য জানি না- আমি নায়ক হিসাবে পেয়েছি মাস্টার দা সূর্য সেন, ক্ষুদিরাম, জহির রায়হান, জয়নুল আবেদিন, এস এম সুলতান, রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর মত অসংখ্য বাতিঘরকে।’

জনপ্রিয় অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরীও বিশাল স্ট্যাটাস দিয়েছেন ফেসবুকে। সেখানে কারও নাম উল্লেখ না করেই বিষয়টি নিয়ে নিজের ভাবনা তুলে ধরেছেন তিনি। বলেছেন, ‘তথাকথিত কিছু অসৎ রাজনীতিবিদের কারণে যেমন রাজনীতি কলুষিত, তেমনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপনার বা আমার সমর্থনে গজিয়ে ওঠা ভাইরাল ব্যক্তিদের কারণে সংস্কৃতি কলুষিত হচ্ছে। এর জন্য অন্য কেউ দায়ী নয়। দায়ী আপনি বা আমি, দায়ী আমাদের নিম্ন মানসিকতা। আপনি কাকে অনুসরণ করবেন বা সমর্থন দেবেন বা কে হবে এই দেশে আপনার রাজনৈতিক বা সাংস্কৃতিক আদর্শ, চূড়ান্ত ভাবনার এই সময়টুকুও বোধ করি পেরিয়ে যাচ্ছে। আমাদের ক্ষেত্রে বিষয়গুলো অবজ্ঞা করার মতো হলেও, আমাদের সন্তানেরা ভবিষ্যতে অনুসরণ বা শ্রদ্ধা করার মতো কাউকে পাবে না। পরিচিত হতে হবে আপনার রুচিতে জন্ম দেয়া কোনও ভাইরাল বিনোদন ব্যক্তির উত্তরসূরি হিসেবে। কারণ আপনি বা আমি ঠিক-বেঠিক বা উচিত-অনুচিতের পার্থক্য ভুলে সস্তা বিনোদন প্রিয় জাতিতে পরিণত হয়ে গেছি। বুঝতে পারছেন কি, সামনে কতটা অন্ধকার?’

চিত্রনায়ক ওমর সানী অবশ্য মামুনুর রশীদকে খোঁচা মারলেন। তার বক্তব্য, ‘শুধু আলমের নাম নিলেন বড় ভাই মামুনুর রশীদ। এরকম তো সংগীতে আছে, অভিনয়ে আছে, কলাতে আছে, লেখনীতে আছে, রাজনীতির মঞ্চে আছে; ওনাদের নাম নিতে ভয় লাগে। শুধু পেয়েছেন মাটির গন্ধওয়ালা হিরো আলমকে। আর ওনারা আতর মাখে তাই নাম নেননি বড় ভাই (স্যার)।’

নির্মাতা এস এ হক অলিকের আক্ষেপ, বিষয়টি নিয়ে নাট্য অঙ্গনের সংগঠনগুলো কেন কিছু করছে না। তার ভাষ্য, “রুচির দুর্ভিক্ষ’ উল্লেখ করায় এফটিপিও-এর সভাপতি, নাট্যজন মামুনুর রশীদ আঙ্কেলকে নিয়ে নানা ধরনের কথা হচ্ছে, সমালোচনা হচ্ছে, ট্রল হচ্ছে। অথচ সংগঠনগুলো থেকে কোনও বিবৃতি নেই! (আমার চোখে পড়েনি)। হায়রে... রুচির দুর্ভিক্ষ!’’

নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বিষয়টিকে সার্কাজমে রূপ দিলেন। বললেন, ‘আপনারা কি নিশ্চিত এটা স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কোম্পানির একটা সিডিং মার্কেটিংয়ের অংশ না? আমার তো মনে হয় স্কয়ার তার রুচি ব্র্যান্ডের জন্য একটা সাকসেসফুল সিডিং মার্কেটিং করিয়ে নিলো আপনাদের সবাইকে দিয়ে।’

দেশের সীমানা ছাড়িয়ে ‘রুচির দুর্ভিক্ষ’ ইস্যু পৌঁছে গেছে ভারতেও। সেখান থেকে নির্বাসিত লেখক তসলিমা নাসরিন বিষয়টি নিয়ে পোস্ট করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘রুচির দুর্ভিক্ষ আচমকা আকাশ থেকে পড়ে না। প্রথমে খরায় বা বন্যায় রুচির উৎপাদন নষ্ট হয়। তারপর শুরু হয় দুর্ভিক্ষ। খরা এবং বন্যা মূলত তৈরি করে তারাই, যারা রুচির চাষ করে। তাদের তখন যথেষ্ট সময় নেই রুচি উৎপাদনের জমিকে উর্বর রাখার, তারা ব্যক্তিগত গোলার ফসল নিয়েই বা সাফল্য নিয়েই তখন তৃপ্ত।’

এদিকে মামুনুর রশীদের মন্তব্যটি ছড়িয়ে পড়ার পর এ নিয়ে হিরো আলমও প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। ফেসবুক লাইভে এসে তিনি বলেছেন, ‘আমি নিজ যোগ্যতায়, নিজে পরিশ্রম করে আজ আলম থেকে হিরো আলম। আমাকে নিয়ে যাদের রুচি হয় না, সেই রুচিবান লোকেরা হিরো আলমকে তৈরি করেননি। এ জন্য রুচিবানেরা বাংলাদেশে রুচি আনতে চাইলে হিরো আলমকে মেরে ফেলে দেন।’

/কেআই/এমএম/
সম্পর্কিত
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
গার্মেন্টসকর্মীদের জীবনের গল্প ‘ঈদের ছুটি’!
গার্মেন্টসকর্মীদের জীবনের গল্প ‘ঈদের ছুটি’!
গানের নাম ‘টাকা দ্য পা পা পা’! (ভিডিও)
গানের নাম ‘টাকা দ্য পা পা পা’! (ভিডিও)
গানচিত্র নির্মাণে সিনেমার প্রযোজক!
গানচিত্র নির্মাণে সিনেমার প্রযোজক!
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
একযুগ পর দলছুট, সঙ্গে সঞ্জীব চৌধুরী
একযুগ পর দলছুট, সঙ্গে সঞ্জীব চৌধুরী
শিল্পী সমিতির নির্বাচন: সভাপতি মিশা, সম্পাদক ডিপজল
শিল্পী সমিতির নির্বাচন: সভাপতি মিশা, সম্পাদক ডিপজল
জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
কান উৎসব ২০২৪জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
১৬ বছর ধরে পুনরুদ্ধার করা ‘নেপোলিয়ন’ দেখাবে কান
কান উৎসব ২০২৪১৬ বছর ধরে পুনরুদ্ধার করা ‘নেপোলিয়ন’ দেখাবে কান
এই জন্মদিনে আরেক সিনেমার ঘোষণা
এই জন্মদিনে আরেক সিনেমার ঘোষণা